পরিকল্পনার লক্ষ্য | Goal of Planning
লক্ষ্য হলো কোনো পরিকল্পনার মূল ইচ্ছা/অভিপ্রায় বা কাঙ্ক্ষিত ফল। কোনো প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা যে নির্ধারিত বা প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়, তাকে পরিনার মূল অভিপ্রায় লক্ষ্য বলে। একে কেন্দ্র করে পুরো পরিকল্পনা প্রক্রিয়া আবর্তিত হয়। কোনো একটি কাজ করার আগে ঐ কাজটি থেকে কী পাওয়া যাবে, তার প্রত্যাশা নির্ধারিত থাকে। ঐ প্রত্যাশাই হলো লক্ষ্য। যেমন: সার্বিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং তার আলোকে বিভিন্ন বিভাগের অধিলক্ষ্য (Sub goal) ঠিক করা হয়। লক্ষ্য সমাপ্তিকেন্দ্রিক, এটি উপায়কেন্দ্রিক নয় (It focus on ends rather than means)।
লক্ষ্য ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার মূল কেন্দ্রবিন্দু। একে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অন্য কার্যাবলি সম্পাদন হয়। পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য সবার আগে লক্ষ্য নির্ধারণ প্রয়োজন। এটি না থাকলে পরিকল্পনা অগোছালো ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই লক্ষ্য ও পরিকল্পনা একে অপরের পরিপূরক, অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। লক্ষ্যকে পরিকল্পনাও বলা যায়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি মূল লক্ষ্য থাকে। এ মূল লক্ষ্যের সাথে মিল রেখে প্রতিষ্ঠানের সব বিভাগ ও উপবিভাগ তাদের অবস্থা অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করে কার্যাবলি পরিচালনা করে থাকে। অতএব লক্ষ্য হলো প্রতিষ্ঠানের কোনো পরিকল্পনার মূল অভিপ্রায় বা কাঙ্ক্ষিত ফল। যেমন: আগামী বছর ২০% উৎপাদন বাড়ানো, করা, ৫০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি বা ৩০% বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনা।
স্টোনার (Stoner) ও তাঁর সহযোগীদের মতে,
লক্ষ্য বলতে অভিপ্রায়কে বোঝায়, যা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে।
BusinessDictionary.com এর ভাষ্য মতে,
লক্ষ্য বলতে অনুধাবন ও পরিমাপযোগ্য চূড়ান্ত ফলাফলকে বোঝায়, যার দ্বারা নির্দিষ্ট সময়সীমার বেশি বা কমের মধ্যে এক বা একাধিক উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।
তাই বলা যায়, কোনো কাজ বা পরিকল্পনার মাধ্যমে মূলত যা চাওয়া হচ্ছে তা-ই হলো লক্ষ্য। অর্থাৎ, লক্ষ্য হলো পরিকল্পনার মূল অভিপ্রায় বা কাঙ্ক্ষিত ফল।
অবস্থা অনুযায়ী লক্ষ্যের প্রকৃতি বা ধরনে ভিন্নতা দেখা যায়। নিচে বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
উদ্দেশ্য (Objective): লক্ষ্য অর্জনের ধাপ বা মাইলফলককে উদ্দেশ্য বলে। এটি হলো চূড়ান্ত দেশ ফল, যাকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানের সব কাজ পরিচালিত হয়। সাধারণত সব ধরনের উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্য অর্জনের শে মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার মূল লক্ষ্যে পৌছায়। এজন্য Weinrich & Koontz, G. R. Terry, Robert Kreitner, Bartol Martin প্রমুখ লেখকগণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সমার্থক হিসেবে গণ্য করেছেন।
সময়সীমা (Time frame): পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়সীমা নির্ধারণ করতে হয়। সয়মসীমা বলতে লক্ষ্য কত দিনে অর্জিত হবে, তা আগেই ঠিক করাকে বোঝায়। একটি কাজ কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে, তা ঠিক করা না হলে পরিকল্পনার কোনো কার্যকারিতা থাকে না এবং জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা যায় না।
বাজেট (Budget): পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশকে বাজেট বলে। সাধারণত বাজেট বলতে একটি প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য। আয়-ব্যয় বা প্রাপ্তি-প্রদানের অঙ্কের মূল্যকে বোঝানো হয়ে থাকে। আবার, প্রত্যাশিত ফল যা প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে অর্জন করতে চায়, তার সংখ্যাত্মক প্রকাশকেও বাজেট বলা যায়। যেমন: কোনো প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলো। এভাবে বালেটভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার ফলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।
মিশন / অভিলক্ষ্য (Mission): ডিশনের একটি অংশ হলো মিশন। দীর্ঘমেয়াদে অর্জনের জন্য বড় আকারের কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করাকে বলা হয় ভিশন বা রূপকল্প। অন্যদিকে ফুলের মিশন, অভিলক্ষ্য বা কর্মরত হলো ভিশনের অধীনে প্রতিষ্ঠানের স্বল্পমেয়াদি ও সহজে অর্জনযোগ্য লক্ষ্য, যা প্রতিষ্ঠানের কোনো সুনির্দিষ্ট ও মৌলিক কাজকে চিহ্নিত করে। ভিশনকে বলা যায় কোনো উঁচু পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়া। আর মিশন হলো সেই চূড়ায় পৌঁছানোর প্রতিটি পদক্ষেপ। যেমন: শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলা হলো ভিশন। আর প্রয়োজনীয় সংখ্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে মিশন।
ভিশন মূল লক্ষ্যবস্তু অর্জনে উৎসাহিত করে। ভিশন ছাড়া মিশন নির্ধারণ করা যায় না। তাই ভিশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংগঠনের উপর থেকে নিচের পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, তাকে বার্টল (Bartol) এবং মার্টিন (Martin) নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করেছেন—
১. রণনৈতিক লক্ষ্য (Strategic goal): প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দীর্ঘমেয়াদে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, লক্ষ্য নির্ধারণ ও নীতিমালা প্রণয়ন করেন, তাকে রণনৈতিক লক্ষ্য বলে। এরূপ লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ স্তরের ব্যবস্থাপকরা নির্ধারণ করেন। যেমন: আগামী দশ বছরের মধ্যে ৫০% বাজার আয়ত করা, পাঁচ বছরের মধ্যে বিক্রি তিন গুণ বাড়ানোর টার্গেট প্রভৃতি।
২. কৌশলগত লক্ষ্য (Tactical goal): প্রতিষ্ঠানের মধ্য পর্যায়ের ব্যবস্থাপকরা কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এ ধরনের লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের রণনৈতিক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য নেওয়া হয়। যেমন: নির্ধারিত পরিমাণ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শ্রমিক না বাড়িয়ে কর্মরত শ্রমিকদের অতিরিক্ত কর্মঘন্টা (Overtime) বাড়ানো।
৩. কার্যগত লক্ষ্য (Operational goal): কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজের ক্ষেত্রে বা উপবিভাগ পর্যায়ে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, তাকে কার্যগত বা কার্যসম্বন্ধীয় লক্ষ্য বলে। এটি প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপক বা নির্বাহীরা প্রণয়ন করে থাকেন। এটি সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ও নমনীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে। সাধারণত দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনের জন্য এ ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। যেমন: উৎপাদনের মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে তা তিন ঘণ্টার মধ্যে মেরামত করা কার্যসম্বন্ধীয় লক্ষ্য।