নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব | Importance of Controlling

পরিকল্পনা প্রণয়ন যত সুন্দরভাবেই হোক না কেন, সঠিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সবকিছুই অর্থহীন হতে পারে। তাই সব স্তরের সব কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-

১. পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (Implementation of plan): পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কাজগুলো সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন হয় নিয়ন্ত্রণের। প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতির সব তথ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যথাসময়ে পাওয়া যায়। ফলে এর মাধ্যমে পরিকল্পনার সঠিক ও সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।

২. দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ (Taking quick action): কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় যেকোনো ভুল-ত্রুটি খুব সহজে ধরা পড়ে। এতে প্রতিটি সমস্যার সঠিক কারণ সম্পর্কে জানা যায়। পরবর্তীতে চিহ্নিত কারণের আলোকে দ্রুততার সাথে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি বা দুর্ঘটনা থেকে উত্তরণ পাওয়া যায়।

৩. পরবর্তী পরিকল্পনার মান উন্নয়ন (Developing the quality of next plan : সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দ্বারা দ্রুততার সাথে ভুল-ত্রুটি নিরূপণ ও দূর করা যায়। এ ব্যবস্থা পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি স্থিরীকরণে ও মান উন্নয়নে সাহায্য করে। প্রতিটি বিভাগ ও কর্মী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে কি না, তা বোঝা যায়। ফলে উদ্দেশ্য অর্জনের পথে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়। এভাবে উত্তম পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হয়।

৪. অর্জিত ফলাফল পরিমাপ (Measuring performance): পরিকল্পনা ও নির্ধারিত মান অনুযায়ী কাজ সম্পাদন হচ্ছে কি না, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করে তা পরিমাপ করা যায়। ফলে কোনো বিচ্যুতি থাকলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে মানসম্মতভাবে কাজ সম্পাদন সম্ভব হয়।

৫. বিচ্যুতির কারণ নির্ণয় (Determining the cause of deviation): আদর্শমানের সাথে সম্পাদিত কাজের পার্থক্যকে বিচ্যুতি বলে। এরূপ পার্থক্য বা বিচ্যুতি থাকলে তার পরিমাণ নিরূপণ এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিচ্যুতির প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করা হয়। এতে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সহজে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যায়।

৬. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ (Taking corrective action): কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিকল্পনার জুটি-বিচ্যুতিগুলো ধরা পড়ে। এছাড়া বিচ্যুতির কারণ ও সমস্যার প্রকৃতি বের করা হয়। ফলে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাকে সাহায্য করে থাকে।

৭. সময় ও অপচয় হ্রাস (Minimizing time and wastage): কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানের সব কাজ পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়। কোথাও সমস্যা হলে সাথে সাথে ধরা পড়ে এবং তা সমাধানের লক্ষ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এভাবে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সময় ও অপচয় কমে যায়।

৮. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বণ্টন (Assigning authority and responsibility): সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি স্তরের নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্তৃত্ব-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং তা বণ্টন করে দেওয়া হয়। ফলে প্রত্যেকের যোগ্যতা ও কাজের দক্ষতা ক্রমেই বেড়ে যায়। এতে সহজে প্রত্যেকের কাজ পরিমাপ করা যায়।

৯. নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা (Discipline and order): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাহায্যে ব্যক্তিগত কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রয়োজনে পুরস্কার, তিরস্কার, বহিষ্কার বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

সুতরাং বলা যায়, ব্যবস্থাপনার একটি অপরিহার্য কাজ হলো নিয়ন্ত্রণ। সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন ও সফলতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url