নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা | Principles of Controlling

নীতি বা আদর্শ বলতে কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য যথাযথ পথনির্দেশনাকে বোঝায়। নীতি বা আদর্শের মাধ্যমে করা উচিত এবং কীভাবে কাজটি করলে লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যায়। নিচে নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলো তুলে ধরা হলো-

১. লক্ষ্যকেন্দ্রিক (Goal oriented): প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্যই নিয়ন্ত্রণ কাজ করা হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সংগঠনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে মিল থাকা আবশ্যক। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে মিল না হলে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়।

২. উপযুক্ততা (Suitability): উপযুক্ততার নীতি বলতে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া এমন হওয়া উচিত, যা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য যথোপযুক্ত এবং মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হয়। নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিতে কাজের প্রকৃতির সাথে মিল। থাকলে তা সহজে কার্যকর করা যায়। এজন্য নিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধতি যেখানে যথাযথ বিবেচিত হবে, সেখানে সেই পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার করা উচিত।

৩. সরলতা (Simplicity): নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সহজ-সরল হওয়া উচিত। এতে সবার কাছে তা বোধগম্য হয়। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক (যিনি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করবেন) এবং অধীনস্থ (যাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হবে) সবাই নিয়পুল সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো যেন সহজে বুঝতে পারেন। নিয়ন্ত্রণ কৌশল অস্পষ্ট হলে তা কখনোই ফল না। তাই, নিয়ন্ত্রণের বিষয় সবাই বুঝতে পারার মতো হওয়া উচিত।

৪. গ্রহণযোগ্যতা (Acceptability): নিয়ন্ত্রণ একটি কার্যপ্রক্রিয়া এবং এর বাস্তবায়ন হয় অধীনস্থ কর্মীদের মাধ্যমে। অধীনস্থ কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও এর প্রয়োগবিধিকে মন থেকে মেনে নিলেই সত্যিকার অর্থে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে সংগঠনের সব স্তরের কর্মীদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়।

৫. ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা (Future guidelines): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ার কারণ বের করা হয়। পরবর্তীতে ভবিষ্যতে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য নির্বাহীদের কী করা উচিত, তার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে তা ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

৬. নমনীয়তা (Flexibility): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে তা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আগে থেকে নেওয়া ব্যবস্থা সব সময় সঠিক হবে। এরূপ প্রত্যাশা করা যায় না। অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রণীত ব্যবস্থা সংশোধন বা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতে কাজে গতিশীলতা আসে ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব নমনীয় হতে হবে।

৭. ব্যতিক্রম (Exception): কার্যক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে বিশেষ কর্মব্যবস্থা নেওয়া হলো ব্যতিক্রমের নীতি। সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ধরনের বিচ্যুতি দেখা দিলে সেগুলোকে চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত উর্ধ্বতন নির্বাহী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে কাজ সম্পন্ন করেন। তাই ব্যতিক্রম ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।

৮. মিতব্যয়িতা (Economies): সম্পদ ও উপকরণকে দক্ষ ও কার্যকরভাবে তথা কম খরচে ও কম সময়ে এবং অপচয় না করে ব্যবহার করাকে মিতব্যয়িতা বলে। মান নির্ধারণ, প্রকৃত কার্যফল মূল্যায়ন, বিচ্যুতির কারণ নির্ণয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে সময় ও খরচ অবশ্যই কম ব্যবহার করতে হবে।

৯. দক্ষতা (Efficiency): দক্ষতা বলতে স্বল্প সময় ও খরচে সঠিকভাবে কাজ সম্পাদনকে বোঝায়। নিয়ন্ত্রণ কাজে বিচ্যুতি নিরূপণ ও প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটি করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী পরিকল্পনা সঠিকভাবে তৈরি করা যায় না। এজন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দক্ষতার নীতি অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন।

১০. দ্রুততা (Quickness): নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে ত্রুটি- বিচ্যুতি বের করে পরবর্তী সময়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। তাই বিচ্যুতির বিপরীতে নেওয়া সংশোধনীগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

১১. প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ (Direct control): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরোক্ষ না হয়ে প্রত্যক্ষ হওয়া উচিত। অর্থাৎ, যিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং যাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হয়। এজন্য সাংগঠনিক কাঠামোতে নির্বাহী ও অধীনস্থদের মধ্যে দূরত্ব কম রাখা উচিত।

১২. নিরবচ্ছিন্নতা (Continuousness): নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে হওয়া উচিত। পরিবর্তনশীল পরিবেশ- পরিস্থিতি, সাংগঠনিক কোনো পরিবর্তন, উদ্দেশ্যের পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে বারবার পরিকল্পনার পরিবর্তনের সাথে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনতে হয়।

১৩. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার (Use of modern technology): নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সফলতা আশা করা যায় না। তাই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন। এতে কার্যকর ও সঠিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।

উপসংহারে বলা যায়, ব্যবসায় সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার জন্য উল্লিখিত আদর্শের অনুসরণ করা উচিত। এতে নিয়ন্ত্রণের সফল বাস্তবায়ন হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url