আদর্শ ব্যবস্থাপকের গুণাবলি| Qualities to be a good manager
আধুনিক প্রতিযোগিতাপূর্ণ ব্যবসায় জগতে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষা, প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন অনেকাংশে দক্ষ ব্যবস্থাপকের ওপর নির্ভর করে। ব্যবস্থাপককে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করতে হয়। ধারাবাহিকতা, দক্ষতা, একাগ্রতা ও সফলতার সাথে এসব কাজ করতে হলে তার কতগুলো বিশেষ গুণ থাকতে হয়। আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেলে উত্তম ব্যবস্থাপকের ছয়টি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, শিক্ষাগত, কারিগরি ও অভিজ্ঞতাসংক্রান্ত গুণ। তাছাড়া, অন্যান্য ব্যবস্থাপনাবিদগণও বিভিন্ন ধরনের গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। এসব নিচে আলোচনা করা হলো-
১. সাংগঠনিক জ্ঞান (Organizational knowledge): ব্যবস্থাপককে একজন ভালো সংগঠক হতে হয়। তিনি বিভিন্ন বিভাগ-উপবিভাগ ও ব্যক্তির কাজের মধ্যে সম্পর্ক ও মিল স্থাপনে কাজ করেন। তাই তাকে বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ ও তা কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়।
২. ব্যবস্থাপকীয় জ্ঞান (Managerial knowledge): কীভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, কর্মীদের প্রণোদিত এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা আদর্শ ব্যবস্থাপককে জানতে হয়। এজন্য, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তার বিশেষায়িত ডিগ্রি ও জ্ঞান থাকা উচিত।
৩. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা (Physically and mentally sound): আদর্শ ব্যবস্থাপককে শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট সক্ষম হতে হয়। কাজ তদারকি, পর্যবেক্ষণ, যোগাযোগসহ অন্যান্য কাজে তাকে যথেষ্ট শ্রম দিতে হয়। শারীরিকভাবে অক্ষম বা কর্মকান্ত ব্যবস্থাপকের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার মানসিকভাবে বিপর্যন্ত, হতাশ ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কোনো ব্যবস্থাপকের পক্ষেও সুষ্ঠুভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য ব্যবস্থাপককে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।
৪. শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও সচেতন (Educated, experienced and conscious): আদর্শ ব্যবস্থাপককে অবশ্যই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, অভিজ্ঞ ও সচেতন হতে হয়। কেননা তাকে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত জ্ঞান, রীতি-নীতি, আইন, পদ্ধতি ও তত্ত্ব অনুসরণ করতে হয়। তাকে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষের সাথে চলতে হয় এবং সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে হয়। এজন্য তাকে চলমান বিশ্ব তথা সমসাময়িক ঘটন সম্পর্কেও ভালো ধারণা রাখতে হয়।
৫. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষতা (Ability to take rapid decision): ব্যবসার ক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপককে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একটি ভুল সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই বিকল্প উপাত্ত মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ব্যবস্থাপকের একটি মৌলিক গুণ।
৬. অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা (Ability to influence): আদর্শ ব্যবস্থাপক কর্মীদের কাজের দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার এবং প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে থাকেন। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্রিষ্ট বাহ্যিক বিভিন্ন পক্ষকে অনুপ্রাণিত ও যুক্তি দ্বারা বোঝানোর (Convince) সামর্থ্যও তার থাকতে হয়।
৭. যোগাযোগে দক্ষতা (Communication skill): বর্তমানে যোগাযোগে দক্ষতার ওপর প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। একজন ব্যবস্থাপককে ব্যবসায় সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন পক্ষের সাথে লিখিত ও মৌখিকভাবে যোগাযোগ করতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে যোগাযোগ পদ্ধতি, মাধ্যম ব্যবহার, উপস্থাপনা, তথ্য আদান-প্রদান, বিষয়বস্তু, ফলাবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষভাবে পারদর্শী হতে হয়।
৮. দূরদর্শিতা (Foresight): একজন আদর্শ ব্যবস্থাপককে প্রজ্ঞা বা দূরর্শিতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ অনুমান করতে হয়। তাই, তাকে ভবিষ্যৎ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। অর্থাৎ, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে পূর্বানুমানের ভিত্তিতে তাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।
৯. মোহনীয় ব্যক্তিত্ব (Charismatic personality): ব্যক্তির যে গুণাবলি মানুষকে বিশেষভাবে প্রভাবিত ও মোহিত করে, তাকে মোহনীয় ব্যক্তিত্ব বলে। কর্মক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকের সাথে অধীনস্থদের কাজের সম্পর্ক রয়েছে তার মোহনীয়। ব্যক্তিত্বের কারণে অধীনস্থরা আদেশ -নির্দেশ পালনে বেশি মনোযোগী হয়
১০. নিয়মানুবর্তিতা (Discipline): আদর্শ ব্যবস্থাপকের উচিত সময়মতো প্রতিষ্ঠানে আসা, প্রতিটি কাজ ঠিকমতো করা এবং প্রতিষ্ঠান থেকে যথাসময়ে যাওয়া। অর্থাৎ, তিনি নিজে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি ও শৃঙ্খলার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হবেন। তাহলে তার অধস্তন কর্মীরা তাকে অনুসরণ করবে এবং প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
১১. ঝুঁকি গ্রহণ (Risk taking): ব্যবসায়িক কার্যাবলি সব সময়ই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাপূর্ণ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক এবং অপ্রাকৃতিক ঝুঁকির কারণে ব্যবসায়ে লাভের পাশাপাশি লোকসানের আশংকাও থাকে। তাই, ব্যবস্থাপককে দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে সব ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করার মানসিকতা রাখতে হবে।
১২. উদ্ভাবনী শক্তি (Innovative power): বর্তমান তীব্র ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার যুগে সর্বত্রই নতুনত্ব ও প্রযুক্তির উন্নয়ন চলছে। একজন ব্যবস্থাপককে তার উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী হতে হয়। ব্যবস্থাপকের উদ্ভাবনী শক্তি প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৩. পরিশ্রমী (Industrious): কথায় আছে, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। পরিশ্রম ছাড়া জীবনে কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না। এটি সফলতার চাবিকাঠি। তাই, আদর্শ ব্যবস্থাপককে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত পরিশ্রমী হতে হয়।
১৪. জেন্ডার সচেতনতা (Gender consciousness): একজন ব্যবস্থাপক তিনি নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন তাকে অবশ্যই তার সহকর্মী নারী-পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাতে অবশ্যই পক্ষপাতহীন হতে হবে। নারী-পুরুষের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থেকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে।
উল্লিখিত গুণাবলি ছাড়াও একজন ব্যবস্থাপককে সাহসী, সহনশীল, নম্র, বিশ্বস্ত, সৎ, ন্যায়পরায়ণ হতে হয়। একজনের মধ্যে উপরিউক্ত গুণ পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান নাও থাকতে পারে। তবে যার মধ্যে এসব গুণ যত বেশি মাত্রায় প্রতিফলিত হয়, ভিত বেশি সফল ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পায়।
সুন্দর হয়েছে বিবরন গুলো, এক একটা ব্যাখা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,
আর জেন্ডার বানান ভুল হয়েছে। সেরে নিলে ভালো হবে।