পরিকল্পনা প্রণয়নের ধাপ

পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজ। প্রতিষ্ঠানের উপায়-উপকরণ ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবস্থাপনা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আবার, ব্যবস্থাপনার জন্য সব কাজের সফলতা নির্ভর করে পরিকল্পনার গুণগত মানের ওপর। এজন্য ব্যবস্থাপককে পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে যেসব ধারাবাহিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়, বিভিন্ন লেখক সেগুলোকে বিভিন্নভাবে দেখিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। পরিকল্পনা প্রণয়নে সাধারণত যেসব পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয় তা নিচে চিত্রের সাহায্যে দেখানো ও বর্ণনা করা হলো-

১০. পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও মূল্যায়ন
৯. বাজেটকরণ
৮. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন
৭. সর্বোত্তম কার্যপদ্ধতি গ্রহণ
৬. বিকল্প কার্যপদ্ধতি মূল্যায়ন
৫. বিকল্প কার্যপদ্ধতি উন্নয়ন
৪. পরিকল্পনার আঙ্গিনা নির্ধারণ
৩. প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ
২. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ
১. ভবিষ্যৎ সুযোগ ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সচেতনতা
পরিকল্পনা প্রণয়নের ধাপ| Top 10 Steps of Planning  পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনার সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজ। প্রতিষ্ঠানের উপায়-উপকরণ ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবস্থাপনা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। আবার, ব্যবস্থাপনার জন্য সব কাজের সফলতা নির্ভর করে পরিকল্পনার গুণগত মানের ওপর। এজন্য ব্যবস্থাপককে পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে যেসব ধারাবাহিক পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়, বিভিন্ন লেখক সেগুলোকে বিভিন্নভাবে দেখিয়েছেন। তবে এদের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। পরিকল্পনা প্রণয়নে সাধারণত যেসব পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয় তা নিচে চিত্রের সাহায্যে দেখানো ও বর্ণনা করা হলো-  ১০. পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও মূল্যায়ন ৯. বাজেটকরণ ৮. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন ৭. সর্বোত্তম কার্যপদ্ধতি গ্রহণ ৬. বিকল্প কার্যপদ্ধতি মূল্যায়ন ৫. বিকল্প কার্যপদ্ধতি উন্নয়ন ৪. পরিকল্পনার আঙ্গিনা নির্ধারণ ৩. প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ২. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ ১. ভবিষ্যৎ সুযোগ ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সচেতনতা  ১. ভবিষ্যৎ সুযোগ ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সচেতনতা (Conscious about future opportunities and obstacles): পরিকল্পনা প্রণয়নের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরের পরিবেশ থেকে সম্ভাব্য যেসব সুযোগ- সুবিধা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। এজন্য বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শক্তি (Strength) ও দুর্বলতা (Weakness) এবং বাহ্যিক পরিবেশের সুবিধা (Opportunity) ও ভীতি (Threat) চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটি SWOT Analysis নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপক তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পরিবর্তনশীল পরিবেশ মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।  ২. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ (Determining goal and objective): পরিকল্পনা সব সময় লক্ষ্যকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশ বিশ্লেষণের পর প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হয়। প্রথমে মূল লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হয়। এরপর সেগুলোকে উদ্দেশ্য হিসেবে শাখা বা বিভাগের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট, বৈধ, বাস্তবসম্মত এবং তথ্যভিত্তিক হওয়া আবশ্যক।  ৩. প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ (Collecting and analysing necessary data and information): কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের অন্যতম শর্ত হলো পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণ করা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন উৎস থেকে সঠিক উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করতে হয়। এর ওপর পরিকল্পনার কার্যকারিতা নির্ভর করে।  ৪. পরিকল্পনার আঙিনা নির্ধারণ (Determining planning premises): যেসব অবস্থার মধ্য এই পরিককানার অধিনা দিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে সেগুলো পূর্বানুমানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনার আঙিনা বা অজ্ঞান নির্ধারণ বলে। অর্থাৎ, পরিকল্পনার সম্ভাব্য ক্ষেত্রেই হলো পরিকল্পনার আঙিনা। এ আঙিনা নিয়ন্ত্রণযোগ্য, আংশিক নিয়ন্ত্রণযোগ্য বা অনিয়ন্ত্রণযোগ্য হতে পারে। তবে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ পরিবর্তনশীল পরিবেশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান, ক্রেতা-বিক্রেতা, সরবরাহকারী, সরকার, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পক্ষ এবং সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বানুমান করতে হয়। পরিকল্পনার আঙিনা ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করে পরিকল্পনাকারীকে সহায়তা করে।  ৫. বিকল্প কার্যপদ্ধতি উন্নয়ন (Establishing alternative courses of action) : পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন উপায় প্রস্তুত বা নির্ধারণ করার কাজকে বিকল্প উদ্ভাবন বলে। সম্ভাব্য কার্যপদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে গ্রহণযোগ্য সর্বোত্তম বিকল্প কার্যপদ্ধতি বেছে নিতে হয়। যত বেশি বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন বা শনাক্ত করা যাবে, পরিকল্পনা নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে প্রণয়ন করাও তত সহজ হবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা। প্রণয়নকারীকে গভীরভাবে চিন্তা করে লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাব্য সব উপায় চিহ্নিত করতে হয়।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপায় থাকতে পারে। যথা: মূল্য কমানো, বিজ্ঞাপন দেওয়া, পুরস্কার বা র্যাফেল ড্র এর ব্যবস্থা করা, পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো। আবার অন্যভাবে বলা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক উপায় আছে। যথা: সড়কপথ, রেলপথ ও আকাশপথ। এভাবে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীকে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিকল্প খুঁজে বের করতে হয়।  বিকল্প কার্যপদ্ধতি মূল্যায়ন (Evaluating alternative courses of action): এ পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণেতাকে বিকল্প কার্যপদ্ধতিসমূহ যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে বিষ্ণু পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা এবং সুবিধা-অসুবিধা মূল্যায়ন করতে হয়। সম্ভাব্য ব্যয়, সময়, ভবিষ্যৎ অবস্থা, সামর্থ্য, শক্তি ও দুর্বলতা, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক সম্পৃক্ততা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে বিকল্পসমূহের গ্রহণযোগ্যতা এবং উপযোগিতা মূল্যায়ন করে দেখতে হয়।  ৭. সর্বোত্তম কার্যপদ্ধতি গ্রহণ (Taking the best course of action): এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারী মূল্যায়নকৃ বিকল্পসমূহের মধ্য থেকে উত্তম বিকল্প বাছাই করে এবং অন্যগুলো বর্জন করে। তবে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে একাধিক বিকল্প কার্যপদ্ধতি বাছাই করা প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীগণ উত্তম কার্যপদ্ধতির ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে একাধিক বিকল্প কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করে। অর্থাৎ, নির্ধারিত প্রথম বিকল্প কার্যকর না হলে পরবর্তী বিকল্প নির্ধারণ করে রাখা হয়। এতে সম্ভাব্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়। বাহাই করা বিকল্পটি কার্যকর মৌলিক পরিকল্পনা হিসেবে নেওয়া হয়।  ৮. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন (Formulating derivative plan): মূল পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য কিছু সহায়ক বা উপপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। এসব উপপরিকল্পনা মূল পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। যেমন: প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাঁচামাল ক্রয়, নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। আবার ধরা যাক, কোনো বিমান সংস্থা কয়েকটি নতুন বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কু সংগ্রহ ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্যও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এগুলোকে বলা হয় সহায়ক পরিকল্পনা।  ৯. বাজেটকরণ (Budgeting): পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশকে বাজেট বলে। অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ করণীয় কার্যাবলিকে গাণিতিক বা সংখ্যায় প্রকাশই হলো বাজেট। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানবশক্তি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদান ব্যবহৃত হয়। তাই, বাজেটকরণে প্রয়োজনীয় অর্থের উৎস ও আয়-ব্যয়ের খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়।  ১০. পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও মূল্যায়ন (Pilot running and evaluation): এ পর্যায়ে পরিকল্পনার উপযুক্ততা বা নির্ভুলতা পরীক্ষা করা হয়। স্থায়ীভাবে গ্রহণ বা বর্জনের আগে একে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এতে পরিকল্পনাটি সফল বলে বিবেচিত হলে তা চূড়ান্ত করা হয়। অন্যথায়, প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার চিন্তা করতে হয় ।  উপসংহারে বলা যায়, পরিকল্পনা প্রণয়ন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া। সঠিকভাবে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে পরিকল্পনা কার্যকর ও আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

পরিকল্পনা প্রণয়নের ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ


১. ভবিষ্যৎ সুযোগ ও প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে সচেতনতা (Conscious about future opportunities and obstacles): পরিকল্পনা প্রণয়নের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরের পরিবেশ থেকে সম্ভাব্য যেসব সুযোগ- সুবিধা ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। এজন্য বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের শক্তি (Strength) ও দুর্বলতা (Weakness) এবং বাহ্যিক পরিবেশের সুবিধা (Opportunity) ও ভীতি (Threat) চিহ্নিত করে বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটি SWOT Analysis নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপক তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পরিবর্তনশীল পরিবেশ মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

২. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ (Determining goal and objective): পরিকল্পনা সব সময় লক্ষ্যকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবেশ বিশ্লেষণের পর প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হয়। প্রথমে মূল লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হয়। এরপর সেগুলোকে উদ্দেশ্য হিসেবে শাখা বা বিভাগের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট, বৈধ, বাস্তবসম্মত এবং তথ্যভিত্তিক হওয়া আবশ্যক।

৩. প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ (Collecting and analysing necessary data and information): কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের অন্যতম শর্ত হলো পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ এবং তা বিশ্লেষণ করা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন উৎস থেকে সঠিক উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করতে হয়। এর ওপর পরিকল্পনার কার্যকারিতা নির্ভর করে।

৪. পরিকল্পনার আঙিনা নির্ধারণ (Determining planning premises): যেসব অবস্থার মধ্য এই পরিককানার অধিনা দিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে সেগুলো পূর্বানুমানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করাকে পরিকল্পনার আঙিনা বা অজ্ঞান নির্ধারণ বলে। অর্থাৎ, পরিকল্পনার সম্ভাব্য ক্ষেত্রেই হলো পরিকল্পনার আঙিনা। এ আঙিনা নিয়ন্ত্রণযোগ্য, আংশিক নিয়ন্ত্রণযোগ্য বা অনিয়ন্ত্রণযোগ্য হতে পারে। তবে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ পরিবর্তনশীল পরিবেশ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান, ক্রেতা-বিক্রেতা, সরবরাহকারী, সরকার, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পক্ষ এবং সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বানুমান করতে হয়। পরিকল্পনার আঙিনা ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করে পরিকল্পনাকারীকে সহায়তা করে।

৫. বিকল্প কার্যপদ্ধতি উন্নয়ন (Establishing alternative courses of action): পরিকল্পনা প্রণয়নের আগে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন উপায় প্রস্তুত বা নির্ধারণ করার কাজকে বিকল্প উদ্ভাবন বলে। সম্ভাব্য কার্যপদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে গ্রহণযোগ্য সর্বোত্তম বিকল্প কার্যপদ্ধতি বেছে নিতে হয়। যত বেশি বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন বা শনাক্ত করা যাবে, পরিকল্পনা নিখুঁত ও নির্ভুলভাবে প্রণয়ন করাও তত সহজ হবে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা। প্রণয়নকারীকে গভীরভাবে চিন্তা করে লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাব্য সব উপায় চিহ্নিত করতে হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপায় থাকতে পারে। যথা: মূল্য কমানো, বিজ্ঞাপন দেওয়া, পুরস্কার বা র্যাফেল ড্র এর ব্যবস্থা করা, পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো। আবার অন্যভাবে বলা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক উপায় আছে। যথা: সড়কপথ, রেলপথ ও আকাশপথ। এভাবে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীকে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিকল্প খুঁজে বের করতে হয়।

৬. বিকল্প কার্যপদ্ধতি মূল্যায়ন (Evaluating alternative courses of action): এ পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণেতাকে বিকল্প কার্যপদ্ধতিসমূহ যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হয়। এক্ষেত্রে চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে বিষ্ণু পদ্ধতিগুলোর কার্যকারিতা এবং সুবিধা-অসুবিধা মূল্যায়ন করতে হয়। সম্ভাব্য ব্যয়, সময়, ভবিষ্যৎ অবস্থা, সামর্থ্য, শক্তি ও দুর্বলতা, কর্মীদের শারীরিক ও মানসিক সম্পৃক্ততা প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে বিকল্পসমূহের গ্রহণযোগ্যতা এবং উপযোগিতা মূল্যায়ন করে দেখতে হয়।

৭. সর্বোত্তম কার্যপদ্ধতি গ্রহণ (Taking the best course of action): এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারী মূল্যায়নকৃ বিকল্পসমূহের মধ্য থেকে উত্তম বিকল্প বাছাই করে এবং অন্যগুলো বর্জন করে। তবে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে একাধিক বিকল্প কার্যপদ্ধতি বাছাই করা প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা প্রণয়নকারীগণ উত্তম কার্যপদ্ধতির ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করে একাধিক বিকল্প কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করে। অর্থাৎ, নির্ধারিত প্রথম বিকল্প কার্যকর না হলে পরবর্তী বিকল্প নির্ধারণ করে রাখা হয়। এতে সম্ভাব্য পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা সহজ হয়। বাহাই করা বিকল্পটি কার্যকর মৌলিক পরিকল্পনা হিসেবে নেওয়া হয়।

৮. সহায়ক পরিকল্পনা প্রণয়ন (Formulating derivative plan): মূল পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য কিছু সহায়ক বা উপপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। এসব উপপরিকল্পনা মূল পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। যেমন: প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাঁচামাল ক্রয়, নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়। আবার ধরা যাক, কোনো বিমান সংস্থা কয়েকটি নতুন বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এক্ষেত্রে কু সংগ্রহ ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্যও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এগুলোকে বলা হয় সহায়ক পরিকল্পনা।

৯. বাজেটকরণ (Budgeting): পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশকে বাজেট বলে। অর্থাৎ, প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ করণীয় কার্যাবলিকে গাণিতিক বা সংখ্যায় প্রকাশই হলো বাজেট। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানবশক্তি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক উপাদান ব্যবহৃত হয়। তাই, বাজেটকরণে প্রয়োজনীয় অর্থের উৎস ও আয়-ব্যয়ের খাতগুলো চিহ্নিত করা হয়।

১০. পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও মূল্যায়ন (Pilot running and evaluation): এ পর্যায়ে পরিকল্পনার উপযুক্ততা বা নির্ভুলতা পরীক্ষা করা হয়। স্থায়ীভাবে গ্রহণ বা বর্জনের আগে একে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এতে পরিকল্পনাটি সফল বলে বিবেচিত হলে তা চূড়ান্ত করা হয়। অন্যথায়, প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার চিন্তা করতে হয়।

উপসংহারে বলা যায়, পরিকল্পনা প্রণয়ন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়া। সঠিকভাবে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে পরিকল্পনা কার্যকর ও আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url