কার্যভিত্তিক সংগঠনের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
কার্যভিত্তিক সংগঠনের ধারণা | Concept of Functional Organization
মার্ভেলাস টেক্স লি. একটি বৃহদায়তন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোকে ক্রয়, উৎপাদন, বিক্রয়, ও হিসাব, মানবসম্পদ এ পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের বিভাগগুলের সার্বিক কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকরা কাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কর্তৃঙ্গে সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এটি একটি কার্যভিত্তিক সংগঠনের উদাহরণ।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলিকে সমজাতীয়তার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়। অতঃপর প্রতিটি বিভাগে একেকজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে সার্বিক কর্তৃত্ব ও দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। এতে বিশেষজ্ঞদেরকে বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় নির্বাহী বা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এরূপ সংগঠনে বিশেষজ্ঞরাই নিজ নিজ বিভাগে নির্বাহীর ভূমিকা পালন করেন। এ ধরনে সংগঠনের উপরিস্তরে এক বা একাধিক সরলরৈখিক নির্বাহী কর্মরত থাকেন।
ব্যবস্থাপনার মধ্যম ও নিচের পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ কর্মী উচ্চ নির্বাহীর নির্দেশ মতো দায়িত্ব পালন করেন। কার্যভিত্তিক সংগঠনে বিশেষায়ণ ও শ্রম বিভাগের নীতির সঠিক ব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে তা মুক্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন। প্রত্যেক বিশেষজ্ঞ তাদের কাজের জন্য মুখ্য কার্যনির্বাহীর কাছে দায়ী থাকেন।
মূলত সরলরৈখিক সংগঠনের অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক এফ. ডব্লিউ, টেলর (F. W. Taylor) ১৮৮০ সালে কার্যভিত্তিক সংগঠনের ধারণা দেন। একে কার্যভিত্তিক ফোরম্যানশীপ (Functional Foremanship) সংগঠন হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়।
স্কিনার এবং ইভানসেভিচ (Skinner and Ivancevich) বলেন,
কার্যভিত্তিক সংগঠন কাঠামো হলো এমন একটি কাঠামো যেখানে প্রতিটি ইউনিট বা বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন কাজ ও দায়িত্ব থাকে।
আর. এল. ড্রাফট (R. 1. Daft) বলেন,
কার্যভিত্তিক সংগঠন হলো এমন সাংগঠনিক কাঠামো, যেখানে সমজাতীয় দক্ষতা, বিশেষজ্ঞতা, সম্পদ প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে পদগুলোকে ভাগ করা হয়।
কার্যভিত্তিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Functional Organization
কার্যভিত্তিক সংগঠনে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলিকে সমজাতীয়তার ভিত্তিতে বিভিন্ন বিভাগে ভাগ করা হয়। অতঃপর একেকটি বিভাগের দায়িত্ব একেকজন বিশেষজ্ঞকে দেওয়া হয়। বিভাগীয় প্রধানরা নিজ নিজ বিভাগের সার্বিক দায়িত্ব ও কর্তৃত্বে থাকেন। নিচে কার্যভিত্তিক সংগঠনের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:
কার্যবিভাজন (Division of work): কার্যভিত্তিক সংগঠনে কাজগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন: ক্রয় বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, উৎপাদন বিভাগ, অর্থ ও হিসাব বিভাগ, মানবসম্পদ বিভাগ প্রভৃতি। প্রয়োজনে এসব বিভাগকে একাধিক উপবিভাগেও ভাগ করা হয়।
বিশেষায়ণ (Specialization): এরূপ সংগঠনে বিশেষায়ণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কারণে বিভাগীয় দায়িত্ব একজন সাধারণ সরলরৈখিক নির্বাহীকে দেওয়া হয় না। বরং একজন বিশেষজ্ঞ কর্মীকে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, কার্যভিত্তিক সংগঠনে কর্মীদের যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কর্তৃত্বের প্রবাহ (Flow of authority): কার্যভিত্তিক সংগঠনে কর্তৃত্ব সরাসরি সংগঠনের শীর্ষ ব্যবস্থাপনা থেকে ধারাবাহিকভাবে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। আর এ কারণে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নির্বাহী ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অধিকারী হন। আর প্রত্যেক অধীনস্থই তার ঊর্ধ্বতনের কর্তৃত্বের আংশিক অংশ লাভ করে থাকেন।
কার্যে স্বাধীনতা (Freedom in work): কার্যভিত্তিক সংগঠনে ব্যবস্থাপনার সর্বনিম্ন স্তরের ব্যবস্থাপকরাও নিজ নিজ কর্মপরিসরে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পান। এজন্য তারা পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে পারেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বহুলাংশে বেড়ে যায়।
দক্ষতা বৃদ্ধি (Increase of efficiency): প্রতিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট থাকলে কর্মীদের কাজে উৎসাহ বাড়ে। ফলে কর্মীরা পূর্ণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে কাজ করতে পারেন। এ কারণে তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ হয়। এতে কর্মীদের কাজের দক্ষতাও বাড়ে।
প্রত্যক্ষ যোগাযোগ (Direct communication): কার্যভিত্তিক সংগঠনে প্রতিটি বিভাগকে অন্য সব বিভাগের সাথে কাজ করতে হয়। ফলে তাদের মধ্যে সরাসরি তথ্য ও সংবাদের বিনিময় হয়। এতে বিভাগগুলোর কর্মীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হয়।
প্রশিক্ষণ (Training): অধীন কর্মীরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ ও উপদেশ নিতে পারেন। এভাবে অধীনস্থরা সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশনা পেয়ে বিশেষভাবে উপকৃত হন। এটি অধীনস্থদের এক ধরনের প্রশিক্ষণ। তাই দেখা যায়, কার্যভিত্তিক সংগঠন কর্মীদের জন্য একটি উত্তম প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র।
দ্রুত সমস্যা সমাধান (Quick problem solving): এ সংগঠনে বিশেষজ্ঞ কর্মী দিয়ে কাজ পরিচালিত হয়। এ কারণে কোথাও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত তা সমাধান করা যায়। আবার অন্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
সহযোগিতামূলক মনোভাব (Cooperative attitude): এরূপ সংগঠনে প্রতিটি বিভাগকে অন্যান্য বিভাগের সাথে কাজ করতে হয়। ফলে বিভাগগুলোর কর্মীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের মধ্যে সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে ওঠে।
উপসংহারে বলা যায়, কার্যভিত্তিক সংগঠনে সাধারণত উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ করা যায়। এরূপ সংগঠন আধুনিক ব্যবস্থাপনার ভিত্তি। এখানে একেক ধরনের কাজের ভার বিশেষজ্ঞের হাতে ন্যস্ত করা হয়।
কার্যভিত্তিক সংগঠনের সুবিধা | Advantages of Functional Organization
কার্যভিত্তিক সংগঠন হলো শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী একটি সংগঠন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কাজগুলোর সমজাতীয়তার ভিত্তিতে ভাগ করা হয়। এরপর একেকজন বিশেষজ্ঞের ওপর একেক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ধরনের সংগঠন সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। যথা:
দক্ষতা বৃদ্ধি (Increase in efficiency): কার্যভিত্তিক সংগঠনে একই শ্রেণিভুক্ত কাজ একজন বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত হয়। নিয়োজিত কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সময় বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপদেশ বা পরামর্শ পেয়ে থাকেন। এতে তাদের দক্ষতা বাড়তে থাকে।
বিশেষায়নের নীতি বাস্তবায়ন (Implementing the principle of specialization): যিনি যে কাজে বিশেষজ্ঞ তাকে সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়াই হলো বিশেষায়ন নীতি। কার্যভিত্তিক সংগঠনে বিশেষায়নের নীতি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়। এ ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ সর্বাধিক দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার সাথে সম্পাদিত হয়।
কর্মীদের সুবিধা প্রদান (Providing benefits to employees): এ সংগঠনে শ্রমিকদের কাজ তদারকির জন্য বিশেষজ্ঞ নির্বাহী নিযুক্ত থাকেন। এসব নির্বাহীর বিশেষায়িত জ্ঞানের মাধ্যমে শ্রমিকরা লাভবান হয়। বিশেষজ্ঞদের উপদেশের মাধ্যমে তারা উত্তম কর্মপ্রণালি সম্বন্ধে জানতে পারে। এতে কাজের মান বেড়ে যায়।
মিতব্যয়িতা অর্জন (Achieving economy): বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ফলে উর্ধ্বতন নির্বাহীদের কাজের ভার কমে যায়। এতে তারা প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়নমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারেন। ফলে শ্রমিকরা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে কাজ করতে পারেন। এতে কাজে মিতব্যয়িতা অর্জন করা সম্ভব হয়।
উৎপাদন বৃদ্ধি (Increase of production): কার্যভিত্তিক সংগঠনে ব্যবস্থাপনার একেকটি কাজের দায়িত্ব একেকজন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। আর দক্ষ বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে কর্মীরা আগ্রহী হয়ে কাজ করেন। ফলে কর্মীদের কর্মদক্ষতা সর্বোচ্চ কাজে লাগে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি (Increase of product quality): এ জাতীয় সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর সুযোগ থাকে। এতে বিশেষজ্ঞরা প্রশাসকের ভূমিকা পালনের সুযোগও পান। এতে তারা সব দিক তদারকি করতে পারেন। ফলে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়।
স্বেচ্ছাচারিতা হ্রাস (Reduction of autocracy): এ ধরনের সংগঠনে উর্ধ্বতন নির্বাহীরা বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভরশীল হন। এ কারণে ঊর্ধ্বতন নির্বাহীরা স্বেচ্ছাচারিতা দেখাতে পারেন না। আবার কাজগুলো ছোট ছোট ভাগে ভাগ করায় বিভাগগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। তাই বিশেষজ্ঞরাও স্বেচ্ছাচারিতা দেখান না।
সহজ সমন্বয় (Easy to coordinate): এরূপ সংগঠনের প্রতিটি বিভাগের কাজের সমন্বয় সহজেই করা যায় উদাহরণস্বরূপ, উৎপাদন বিশেষজ্ঞ সহজেই তার বিভাগের কাজের সমন্বয় করতে পারেন। এভাবে এককেটি বিভাগ সমন্বয় করতে পারে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক সব বিভাগে সমন্বয় বাড়ানো হয়।
নমনীয়তা বৃদ্ধি (Increase in flexibility): এরূপ সংগঠনের সব কাজ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাই প্রত্যেকে প্রত্যেকের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সাথে সহজে সমতা বিধান করতে পারেন। এতে নমনীয়তা অর্জন সহজ হয়। অর্থাৎ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এরূপ সংগঠন বেশি কার্যকর।
উপসংহারে বলা যায়, কার্যভিত্তিক সংগঠনের মাধ্যমে উল্লিখিত সুবিধা পাওয়া যায়। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এরূপ সংগঠনের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষণীয়। বিশেষ করে বৃহদায়তন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনের ধারাকে অব্যাহত রেখে উন্নতি বিধানে কার্যভিত্তিক সংগঠন অত্যন্ত ফলপ্রসু।
কার্যভিত্তিক সংগঠনের অসুবিধা | Disadvantages of Functional Organization
বর্তমান যুগের বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে কার্যভিত্তিক সংগঠন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এরূপ সংগঠন একেবারে ঝামেলা ও ত্রুটিমুক্ত নয়। এতে কিছু অসুবিধাও দেখা যায়। এতে এটি সর্বত্র ব্যবহারে বাধা তৈরি হয়। নিচে কার্যভিত্তিক সংগঠনের অসুবিধা বর্ণনা করা হলো-
কর্মভার বৃদ্ধি (Increase in workload): কার্যভিত্তিক সংগঠনের নির্বাহীকে বিভাগীয় সকল কাজ দেখাশোনা করতে হয়। এতে তার কাজের চাপ বেশি থাকে। অপরদিকে, একটি বিভাগকে প্রয়োজনে একাধিক বিভাগকে সেবা দিতে হয়। এতে সবাই কর্মভারগ্রস্থ থাকে। ফলে সঠিকভাবে কার্য সম্পাদন কঠিন হয়ে পড়ে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব (Delay in decision making): কার্যভিত্তিক সংগঠনে বিশেষজ্ঞরাই সব সিদ্ধান্ত নেন। এ সংগঠনে অনেক বিশেষজ্ঞ থাকেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তাদের সবার সাথে পরামর্শ করতে হয়। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়। ফলে কোনো জরুরি বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
সমন্বয়ে ব্যাঘাত (Hindrance in coordination): প্রত্যেক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রেই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখেন। ফলে তারা সংগঠনের অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ পান না। এতে বিভিন্ন কর্মপ্রক্রিয়া ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধন কঠিন হয়।
নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা (Problem in controlling): এরূপ সংগঠনে ফলাফল পরিমাপ এবং মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে থাকে। একাধিক বিভাগের কাছ থেকে নির্দেশ আসার ফলে কর্মীদের মধ্যে অনেক সময় কাজের প্রতি অন্যগ্রহ তৈরি হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ (Scope to avoid responsibility): এরূপ সংগঠনে উদ্দেশ্য অর্জিত না হলে কোনো কোনো নির্বাহী তাদের দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেন। এভাবে একের দায়িত্ব অন্যের ওপর চাপানোর ফলে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।
একঘেয়েমি (Monotony): এ ধরনের সংগঠনে কর্মীরা একই ধরনের কাজ প্রতিনিয়ত করেন। দীর্ঘদিন ধরে একই কাজ করায় কার্যক্ষেত্রে তারা বৈচিত্র্য খুঁজে পান না। ফলে তাদের মধ্যে একঘেয়েমিভাব চলে আসে। এতে তাদের মধ্যে উৎসাহের অভাব দেখা যায়। একসময় তারা মনমরা হয়ে পড়ে।
সীমিত প্রয়োগ ক্ষেত্র (Limited scope): এ ধরনের সংগঠন বৃহৎ ও মাঝারি আয়তনের প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে ক্ষুদ্র আয়তনের প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের সংগঠন ব্যবহারের সুফল পায় না। তাই কার্যভিত্তিক সংগঠনের প্রয়োগ ক্ষেত্র বেশ সীমিত।
সুতরাং, কিছু ক্ষেত্রে কার্যভিত্তিক সংগঠনের বেশকিছু অসুবিধা দেখা যায়। তবে এরূপ সংগঠনে অসুবিধার তুলনায় সুবিধার পরিমাণই বেশি । তাই বৃহদায়তন ও জটিল প্রতিষ্ঠানে কার্যভিত্তিক সংগঠন সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।