কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি | Functions of the Central Bank

একটি দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী কার্যাবলি সম্পাদন করে। কাজের প্রকৃতির ভিন্নতা অনুযায়ী এর কার্যাবলিকে নিম্নোক্তভাবে পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা— 

ক. সাধারণ কার্যাবলি 

খ. সরকারের ব্যাংক হিসেবে সম্পাদিত কার্যাবলি 

গ. দেশের সকল ব্যাংক এর ব্যাংকার হিসেবে কার্যাবলি  

ঘ. উন্নয়নমূলক কার্যাবলি এবং 

ঙ. অন্যান্য কার্যাবলি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি
নিচে বিভিন্ন কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো: 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাধারণ কার্যাবলি General Functions of Central Bank


কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিম্নলিখিত সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করে-

১. নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রচলন: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো দেশের জনগণ ও ব্যবসায় - বাণিজ্যের প্রয়োজনানুযায়ী নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রচলন করা। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একচেটিয়া অধিকার। নোট প্রচলনের জন্য ব্যাংকটি প্রচলনকৃত নোটের মূল্যের বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ স্বর্ণ, রৌপ্য বা বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রাখে।

২. মুদ্রার মান সংরক্ষণ: এ ব্যাংক মুদ্রার যোগানের হ্রাস - বৃদ্ধি ঘটিয়ে দেশীয় মুদ্রার মান তথা ক্রয়ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। আবার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় মুদ্রার মান সংরক্ষণ করে। 

৩. ঋণ নিয়ন্ত্রণ: এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ব্যাংক দেশে মুদ্রার যোগান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক সৃষ্ট ঋণের পরিমাণ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। ঋণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ব্যাংক ব্যাংক হার পরিবর্তন নীতি, খোলাবাজার নীতি, ব্যাংক জমার হার পরিবর্তন নীতি, ঋণের বরাদ্দকরণ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে।

৪. মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ: এ ব্যাংক দেশের মুদ্রা বাজারের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। মুদ্রা বাজারের পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে এ ব্যাংক দেশে মুদ্রা ও ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রার সরবরাহে স্থিতিশীলতা রক্ষা, বিনিময় হার নির্ধারণ ও বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি পর্যবেক্ষণ করে।

৫. বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ: একটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সফলতা অনেকাংশে বৈদেশিক মুদ্রার সূষ্ঠ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভর করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার বৈদেশিক মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৬. দামস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা: মুদ্রা সরবরাহের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশে দামস্তরের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে। এ উদ্দেশ্যে এ ব্যাংক মুদ্রা বাজারের মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। 


সরকারের ব্যাংক হিসেবে সম্পাদিত কার্যাবলি

বর্তমানকালে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে দেশের সরকারের ব্যাংকার হিসেবে কাজ করে। সরকারের ব্যাংকার হিসেবে এর কার্যাবলি নিম্নরূপ: 

১. সরকারের তহবিল সংরক্ষণ 

২. অর্থ জমা, গ্রহণ ও স্থানান্তর

৩. সরকারের হিসেব সংরক্ষণ

৪. সরকারের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি

৫. সরকারের বিভিন্ন নীতির বাস্তবায়ন এবং 

৬. সরকারের ঋণের উৎস। 

দেশের সকল ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে সম্পাদিত কার্যাবলি 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের অন্যান্য ব্যাংকেরও ব্যাংকার । সে হিসেবে তাকে নিম্নোক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়- 

১. ব্যাংক গঠন ও সম্প্রসারণ

২. সদস্য ব্যাংকগুলোর নগদ রিজার্ভের আমানতকারী

৩. ঋণের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল

৪. নিকাশঘর হিসেবে কাজ এবং 

৫. বিভিন্ন উপায়ে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়নমূলক কার্যাবলি | Development Functions of Central Bank 


কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যও নানা ধরনের কাজ করে থাকে।

১. বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন: কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রেখে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করে। বিশেষত সরকারকে বাণিজ্যনীতি নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরমার্শ কেন্দ্রীয় ব্যাংকই দিয়ে থাকে।

২. কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন: একটি দেশের কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে বিভিন্ন নীতি (যেমন- নৈতিক প্ররোচনা) নির্ধারণের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিয়ে থাকে।

৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের অনুন্নত ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী আর্থিক নীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন করে সরকার উন্নয়নমূলক কাজে সাহায্য করে থাকে।

৪. সমবায় ব্যাংকের উন্নয়ন: কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমবায় ব্যাংকের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য কার্যাবলি 

১. গবেষণা: একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতির জন্য নতুন নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবেষণা করে থাকে।

২. তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ: সরকারের ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের ব্যাংকার হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে।

৩. রিপোর্ট তৈরি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশ - বিদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতির তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা ও রিপোর্ট তৈরি করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url