উপযোগ || Utility
উপযোগ কাকে বলে?
সাধারণ অর্থে উপযোগ বলতে কোনো জিনিসের উপকারিতাকে বোঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে উপযোগ কথাটি বিশেষ অর্থ বহন করে। কোনো দ্রব্য বা সেবার অভাব মোচনের ক্ষমতাকে অর্থনীতিতে উপযোগ বলা হয়। যেমন— খাদ্য, বস্ত্র, কলম, কাগজ প্রভৃতি দ্রব্য উপযোগবিশিষ্ট। উপযোগ ধারণার সঙ্গে নৈতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই।
Professor Mayer's said,
Utility is the special quality or ability of a product that can meet the needs of human beings.
উপযোগ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।
১. উপযোগের সাথে নৈতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ কোনো দ্রব্য ভালো বা মন্দ যাই হোক তা যদি কোনো মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে তাহলে বুঝতে হবে যে তার উপযোগ আছে। যেমন— মাদক দ্রব্য ক্ষতিকর হলেও যেহেতু এটি কোনো না কোনো মানুষের অভাব পূরণ করে সেহেতু এর উপযোগ আছে।
২. ভোক্তার রুচি, অভ্যাস, আয় প্রভৃতির পরিবর্তনের সাথে সাথে কোনো দ্রব্যের উপযোগেরও পরিবর্তন ঘটে।
৩. ব্যক্তির মানসিক অবস্থার ওপর দ্রব্যের উপযোগ নির্ভর করে। পর্যায়গত উপযোগ ধারণায় এর সংখ্যাগত পরিমাপ সম্ভব নয়।
উপযোগের ধারণা
ভোক্তার আচরণ তত্ত্ব বিশ্লেষণে উপযোগ একটি মনস্তাত্ত্বিক ধারণা। ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ মার্শাল (Marshall) তার “Principles of Economics'” গ্রন্থে সর্বপ্রথম উপযোগ ধারণাটি ব্যবহার করেন। মার্শাল উপযোগের ধারণাকে গাণিতিকভাবে তুলনাযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেন। কোনো দ্রব্য ভোগের ওপর ভিত্তি করে উপযোগের ধারণাসমূহ নিম্নরূপভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যথা—
ক. প্রাথমিক উপযোগ (Initial Utility)
খ. মোট উপযোগ (Total Utility)
গ. প্রান্তিক উপযোগ (Marginal Utility)
ক. প্রাথমিক উপযোগ (Initial Utility): একজন ভোক্তা কোনো দ্রব্যের প্রথম একক ভোগ করে যে উপযোগ লাভ করে তাকে প্রাথমিক উপযোগ বলে। এ উপযোগ সর্বদাই ধনাত্মক যেমন– একজন ভোক্তা প্রথম একক মিষ্টি বা ফল ভোগ করে যতটুকু উপযোগ লাভ করে সেটাই প্রাথমিক উপযোগ হিসেবে বিবেচিত।
খ. মোট উপযোগ (Total Utility): অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে দ্রব্য ও সেবার ভোগ থেকে উদ্ভুত তৃপ্তির সমষ্টিগত রূপকে মোট উপযোগ বলে।
গ. প্রান্তিক উপযোগ (Marginal Utility): একজন ভোক্তা কোনো দ্রব্যের বিভিন্ন একক ক্রয় করলে সর্বশেষ এককটিকে বলা হয় প্রান্তিক একক। এ প্রান্তিক এবং থেকে ভোক্তা যে উপযোগ লাভ করে তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলা হয়। মোট উপযোগের পরিবর্তনের হারকে প্রান্তিক উপযোগ বলে।
প্রান্তিক উপযোগ কত প্রকার?
প্রান্তিক উপযোগ তিন প্রকার যথা—
i. ধনাত্মক প্রান্তিক উপযোগ (Positive Marginal Utility): কোনো একটি দ্রব্য ভোগের মাধ্যমে যদি মোট উপযোগ বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে প্রান্তিক উপযোগ ধনাত্মক বলা হয়।
ii. শূন্য প্রান্তিক উপযোগ (Zero Marginal Utility): কোনো একটি দ্রব্যের অতিরিক্ত একক ভোগের জন্য যদি মোট উপযোগের কোনো পরিবর্তন না হয় বা স্থির থাকে তখন তাকে প্রান্তিক উপযোগ শূন্য বলা হয়।
iii. ঋণাত্মক প্রান্তিক উপযোগ (Negative Marginal Utility): যখন ভোক্তা কোনো দ্রব্যের ভোগের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উপযোগ বা সন্তুষ্টি লাভের পরও অধিক একক উক্ত দ্রব্যে ক্রমাগত ভোগ করতে থাকে, তখন প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক হয়।
উপযোগ পরিমাপ
একটি দ্রব্য ভোগের মাধ্যমে দ্রব্যটি নিঃশেষ করা হলে ভোক্তা ঐ দ্রব্য থেকে উপযোগ লাভ করে। এ উপযোগ পরিমাপকে অর্থনীতিবিদরা সাধারণত দুটি দিক থেকে বিবেচনা করেন। যথা—
১. সংখ্যাগত বা পরিমাণবাচক উপযোগ (Cardinal Utility)
২. পর্যায়গত বা উপযোগ (Ordinal utility)
১. সংখ্যাগত উপযোগ (Cardinal Utility): ওয়ালরাস, জেভস প্রমুখ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ পরিমাণগত বা সংখ্যাগত উপযোগের প্রাথমিক ধারণা প্রদান করেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক আলফ্রেড মার্শাল পরিমাণগত উপযোগ ধারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। এ উপযোগ ধারণায় সংখ্যা বিবেচনা করা হয় এবং তার ভিত্তিতে উপযোগ পরিমাপ করা হয়। সংখ্যাগত উপযোগ পরিমাপের সময় 1, 2, 3, 4 ইত্যাদি সংখ্যা বিবেচনা করা হয়।
অধ্যাপক মার্শালের মতে,
সংখ্যাগত উপযোগ পদ্ধতিতে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগকে পরস্পর যোগ করে মোট উপযোগ পরিমাপ করা হয়।
কোনো ব্যক্তি দ্রব্যের ১ ম একক থেকে 12 টাকার সমান, ২ য় একক থেকে 11 টাকার সমান, ৩ য় একক থেকে 10 টাকার সমান উপযোগ পায়। এখন তিনটি পৃথক একক হতে প্রাপ্ত মোট উপযোগ হলো (12 + 11 + 10) 33 টাকার সমান হয়। এভাবে উপযোগকে যেমনি পরিমাণগত দিক থেকে পরিমাপ করা সম্ভব হয় তেমনি অন্য ব্যক্তির উপযোগের সাথে তুলনা করাও সম্ভব। উপযোগ পরিমাপের একক ইউটিল (Until)
২. পর্যায়গত উপযোগ (Ordinal Utility): অধ্যাপক জে . আর. হিক্স (J. R. Hicks). আর. জি. ডি. অ্যালেন (R.G.D. Allen) প্রমুখ অর্থনীতিবিদগণের মতে
উপযোগ হলো একটি মানসিক ধারণা।
তাই ব্যক্তি একটি দ্রব্য ভোগ করে কী পরিমাণ উপযোগ পেল তা সংখ্যা দ্বারা বিবেচনা করা যায় না। হিস - অ্যালেনের মতে, '
উপযোগ পর্যায়গতভাবে পরিমাপযোগ্য, সংখ্যাগতভাবে নয়।
পর্যায়গত উপযোগ ভোক্তার পছন্দক্রমকে নির্দেশ করে। পছন্দক্রমের ভিত্তি হলো ১ম, ২য়, ৩য় এবং এ পছন্দক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্যের উপযোগের মধ্যে তুলনা করা সম্ভব হয়।