উত্তম অবস্থানের বৈশিষ্ট্য | Features of Good Location

উত্তম অবস্থান কাকে বলে?


যে স্থানে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়, সে স্থানই হলো উক্ত প্রতিষ্ঠানের উত্তম অবস্থান। তাই বলা যায়, প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় উপায়-উপাদান যে স্থানে সহজেই পাওয়া যায়; সেগুলো বিবেচনা করেই উত্তম অবস্থান নির্বাচন করা উচিত। উত্তম অবস্থানের গুণাবলি বা উত্তম অবস্থানের বৈশিষ্ট্যাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
উত্তম অবস্থানের বৈশিষ্ট্য
১. উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (Developed transportation and communication system): সহজ যোগাযোগ ও যাতায়াত স্থানে ক্রেতা, সরবরাহকারী, শ্রমিকসহ অপরাপর অন্যান্য সকলের সহজ আগমন ঘটে। তাই সে স্থানে যে কোনো ব্যবসায় সহজে গড়ে উঠে। শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল আনায়ন, শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ ইত্যাদির বেলায়ও উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. বাজারের নৈকট্য (Proximity of market): ব্যবসায়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বাজার। কোন স্থানে দ্রব্যের বাজার না থাকলে তথায় ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠতে পারে না। তাই ব্যবসায়ের অবস্থান এমন স্থানে হওয়া উচিত যাতে উক্ত স্থলে ব্যবসায় পণ্য বা সেবার সর্বোচ্চ বাজার সুবিধা পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, বাজারের নৈকট্য ব্যবসায় অবস্থানের একটি উত্তম বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য হয়।

৩. ক্রেতার পর্যাপ্ততা (Availability of customers): ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ণয়ে ক্রেতাদের পর্যাপ্ততা। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে স্থানে প্রচুর পরিমাণে ক্রেতার সমাবেশ ঘটে সে স্থান উত্তম ব্যবসায় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। একারণে শহর বা এর আশে-পাশে প্রচুর পরিমাণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেখা যায়।

৪. শ্রমিক-কর্মচারী প্রাপ্তব্যতা (Availability of workers): কোনো স্থানে ব্যবসায় বা শিল্প-কারখানা গড়ে উঠা বা না উঠা সে স্থানে সপ্তায় ও সহজে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী প্রাপ্তির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। যে স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় সে স্থানকে ব্যবসায়ের উত্তম অবস্থান বলে ধরা হয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এবং পাট শিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে উঠার পিছনে সস্তায় শ্রমিক প্রাপ্যতা একটি বড় কারণ।

৫. শক্তি সম্পদের প্রাপ্তব্যতা (Availability of energy): ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শক্তি সম্পদের প্রাপ্তব্যতাও একটি আবশ্যকীয় বিষয় বলে গণ্য করা হয়। শিল্প-কারখানা স্থাপনে শক্তি সম্পদ: যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস বা কয়লার সহজ, নিয়মিত ও নিশ্চিত সরবরাহ সুবিধা থাকতে হয়। চীন ও ভারতে কয়লা সম্পদের উপর নির্ভর বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সুবিধা থাকায় বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে।

৬. কাঁচামালের সরবরাহ (Supply of raw materials): ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ণয়ে এর প্রবর্তকদেরকে কাঁচামালের নৈকট্য বা সহজে কাঁচামাল প্রাপ্তির নিশ্চয়তার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হয়। স্থানীয় কাঁচামালের সুবিধা থাকলে সেখানেই ব্যবসায় গড়ে তোলা লাভজনক। রাজশাহী অঞ্চলে ইক্ষু চাষের সুবিধা থাকায় সেখানে চিনি শিল্প গড়ে উঠেছে। তাই বলা যায়, কাঁচামালের সরবরাহ উত্তম ব্যবসায় অবস্থানের বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য হয়।

৭. সমজাতীয় ও সহযোগী ব্যবসায়ের উপস্থিতি (Presence of homogeneous and associate business): সমজাতীয় ও সহযোগী ব্যবসায়ের উপস্থিতি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য হয়। কোনো স্থানের সম প্রকৃতির ও সহযোগী ব্যবসায়ের উপস্থিতি বিবেচনা করেও ঐ স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। বিশেষ ধরনের ব্যবসায় কোনো বিশেষ স্থানে কেন্দ্রীভূত হলে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা; যেমন- দক্ষ শ্রমিক, বাজার, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, মেরামতী শপ, খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান, ব্যাংক, বিমা, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সেবা লাভ করা যায়।

৮. রাজনৈতিক বিবেচনা (Political consideration): অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনাতেও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিশেষ স্থানে গড়ে উঠে। সরকার শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দেশের কোনো স্থান বা অঞ্চলকে বিশেষ সুবিধা: যেমন- ট্যাক্স হলিডে, ঋণ সুবিধা, লভ্যাংশ স্থানান্তর ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে থাকে। ফলে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকায় তদস্থলে ব্যবসায় গড়ে তোলা লাভজনক বলে বিবেচিত হয়।

৯. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা (Future prospects): কোনো ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ণয়ে ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থা এবং সেই সাথে প্রস্তাবিত স্থানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও বিবেচনা করা আবশ্যক। ভবিষ্যতে ব্যবসায় সম্প্রসারণের সম্ভাবনা থাকলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যবসায় স্থল সম্প্রসারিত ব্যবসায় চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা তাও বিবেচনা করা উচিত। কারণ যে স্থানে ব্যবসায় সম্প্রসারণের সুযোগ থাকে সে স্থান ব্যবসায় স্থাপনের জন্য উত্তম বলে বিবেচিত হয়।

১০. কর অবকাশ অঞ্চল (Tax rebate region): কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে শিল্প কারখানা বা ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রীভূত করার লক্ষ্যে সরকার উক্ত অঞ্চলে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করতে পারে। কর অবকাশ সুবিধা হলো নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বিশেষ কোনো অঞ্চলে কর প্রত্যাহার করা বা স্বল্প পরিমাণে কর ধার্য করা। তাই যে সকল অঞ্চলে কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যায়, সে সকল অঞ্চলে ব্যবসায় স্থাপন সুবিধাজনক। তাই বলা যায়, কর অবকাশ অঞ্চল ব্যবসায় অবস্থানের একটি বড় গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত বিষয়গুলো উত্তম ব্যবসায় অবস্থানের গুণ বা বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য করা হয়। তাই এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্যবসায়ের অবস্থান নির্বাচন করা উচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url