নমনীয় বাজেট | Flexible budget

নমনীয় বাজেট কাকে বলে?


সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কার্যস্তরকে লক্ষ্য ধরে বাজেট তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে সকল কার্যভিত্তিক বাজেট নির্দিষ্ট কার্যস্তরের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু প্রকৃত কার্যস্তরের পরিবর্তন হলে এরূপ বাজেট অর্থহীন হয়ে পড়ে। তখন প্রকৃত কার্যস্তরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাজেটকে সংশোধন করার প্রয়েজন পড়ে। এক্ষেত্রে পরিবর্তিত কার্যস্তরে বাজেট প্রস্তুতের জন্য ব্যয়সমূহকে স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ব্যয়ে শনাক্ত করার প্রয়োজন হয়। এমতাবস্থায় কোনো স্থায়ী কার্যস্তরের জন্যে বাজেট প্রস্তুত না করে বিভিন্ন সম্ভাব্য কার্যস্তরের জন্যে বাজেট প্রস্তুত করাকে নমনীয় বাজেট বলে।

CIMA England এর মতে নমনীয় বাজেট হলো,

কার্যস্তর পরিবর্তনের সাথে সাথে যে বাজেটের পরিবর্তন হয় তাই হলো নমনীয় বাজেট।

C.T. Hongren & G.L. Sundem এর মতে,

পরিবর্তনশীল বাজেট হলো এমন একটি বাজেট যা বিক্রয়ের পরিমাণ এবং অন্যান্য খরচ সংক্রান্ত কার্যাবলি পরিবর্তনের সাথে সমন্বয়কৃত।

প্রকৃতপক্ষে নমনীয় বাজেট হলো কোনো ব্যয় কেন্দ্রে বিভিন্ন কার্যস্তরে কী পরিমাণ ব্যয় হবে তা দেখিয়ে যে বাজেট প্রস্তুত করা হয় সে একক বাজেটসমূহের বাজেট ক্রম।


নমনীয় বাজেট
নমনীয় বাজেটের বৈশিষ্ট্য| Characteristics of flexible budget


সকল কার্যভিত্তিক বাজেটের মধ্যে নমনীয় বাজেট কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির হওয়ায় এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে এদের কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:


১. কার্যস্তর বিবেচনা (Consider level of activities): বাজেট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্যকার্যস্তর সমূহ বিবেচনা করে নমনীয় বাজেট প্রস্তুত করা হয়। পূর্ব থেকে অনুমানকৃত বিভিন্ন কার্যস্তরের জন্যে এ বাজেট প্রস্তুত করা হয়। পরে যে স্তরে উৎপাদন থাকে সে স্তরের জন্যে প্রস্তুতকৃত বাজেটটি অনুসরণ করা হয়।

২. সহজে পরিবর্তনযোগ্য (Easy to change): উৎপাদন ও বিক্রয় মাত্রার পরিবর্তনের সাথে এ বাজেট সহজে পরিবর্তন করা যায়। অর্থাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে এ বাজেট সহজে পরিবর্তন যোগ্য।

৩. দক্ষতা মূল্যায়ন (Evaluation of performance): এ বাজেট একটি স্থির কার্যস্তরের জন্যে প্রস্তুত না করে একাধিক কার্যস্তরের জন্যে প্রস্তুত করা হয়। তাই প্রকৃত উৎপাদন যে স্তরে থাকে সে স্তরের পূর্বনির্ধারিত তথ্যের সাথে তুলনা করে প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা মূল্যায়ন করা যায়।


৪. কার্যস্তরের পরিবর্তন (To change level of activity): নমনীয় বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি প্রকৃত কার্যস্তরের পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। তাই সম্ভাব্য কার্যস্তর সমূহের জন্যে পূর্ব থেকেই তথ্য প্রস্তুত করে থাকে।


৫. নিয়ন্ত্রণ (Control): অনুমিত কার্যস্তর থেকে প্রকৃত উৎপাদন কম বা বেশি হলে নিয়ন্ত্রণের জন্য নমনীয় বাজেট খুবই উপযোগী।


৬. প্রয়োগ ক্ষেত্র (Field of application): যে সব প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যৎ কার্যস্তর নিশ্চয়তার সাথে অনুমান করা যায় না সে সব ক্ষেত্রে নমনীয় বাজেট অত্যন্ত কার্যকর।


নমনীয় বাজেটের প্রয়োগ | Application of flexible budget

যে সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যধারা নিশ্চয়তার সাথে পূর্বানুমান করা যায় না, সে সকল প্রতিষ্ঠানে নমনীয় বাজেট অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে নমনীয় বাজেটের সফল প্রয়োগ দেখা যায়:
i) যে সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের মাত্রা দ্রুত পরিবর্তিত হয়।
ii) নতুন প্রতিষ্ঠান বা যে সকল প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করে।
iii) ব্যবসায়ের প্রকৃতি অনুযায়ী যে সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বিক্রয়ের পূর্বাভাস করা কঠিন।
iv) ঋতুগত পরিবর্তনের ফলে যে সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও বিক্রয়ের পরিবর্তন হয়।
v) সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান।


নমনীয় বাজেটের সুবিধা | Advantages of flexible budget


স্থির বাজেটের অসুবিধা দূর করার জন্যই মূলত নমনীয় বাজেটের উৎপত্তি। এ বাজেটের প্রধান সুবিধাগুলো নিম্নরূপ:

i) নমনীয় বাজেট একাধিক কার্যস্তরের ভিত্তিতে রচিত হয়। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে কার্যমাত্রায় প্রকৃত কার্য সম্পাদিত হয়, সে আলোকেই বাজেটিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করা সম্ভব হয়।

ii) এ বাজেটে মোট ব্যয়কে স্থায়ী ব্যয়, আধাপরিবর্তনশীল ব্যয় এবং পরিবর্তনশীল বায়ে ভাগ করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাই প্রতিটি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ প্রভেদ (Variance) হয়েছে তা নিরূপণ করা সহজ হয়।

iii) স্থির বাজেট যে ক্ষেত্রে অকার্যকর বলে বিবেচিত হয় নমনীয় বাজেট সেসব ক্ষেত্রে ফলপ্রসু হয়।

iv) পার্থক্যমূলক ব্যয় (Differential Cost) বিশ্লেষণে এ বাজেট খুবই সহায়ক।

v) যে সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কার্যস্তর দ্রুত পরিবর্তিত হয় না বা নিশ্চয়তার সাথে অনুমান করা যায় না, সেসব ক্ষেত্রে এ নমনীয় বাজেট উপযোগী।

নমনীয় বাজেটের সীমাবদ্ধতা | Limitations of flexible budget


নমনীয় বাজেটের সুবিধা অনস্বীকার্য। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। নিম্নে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:

i) নমনীয় বাজেটে পরিবর্তনশীল ব্যয়, আধাপরিবর্তনশীল ব্যয় এবং স্থির ব্যয়কে পৃথক পৃথকভাবে দেখানো হয়। কিন্তু এ ব্যয়ের শ্রেণিবিন্যাস এবং বিভিন্ন বছরে ব্যয় আচরণ সকল প্রতিষ্ঠানে একই হয় না। ফলে নমনীয় বাজেট প্রস্তুতে সমস্যা হয়।

ii) বিভিন্ন কার্যস্তরের সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়ে নমনীয় বাজেট প্রস্তুত করা হয়। সঠিক কার্যস্তর অনুমান করা না গেলে নমনীয় বাজেট তৈরির যথাযথ সুফল পাওয়া যায় না।

iii) বিভিন্ন কার্যস্তরে একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। নমনীয় বাজেট প্রস্তুতের সময় এ পরিবর্তন অনুমান করা কষ্টসাধ্য।

iv) সর্বোপরি এ বাজেট প্রস্তুত অনেকটা জটিল ও ব্যয়বহুল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url