মূলধন
উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মূলধন। আমরা কোন কিছু করতে চাইলে প্রথমেই আমাদের প্রয়োজন হবে টাকা। এককথায় আমাদের মূলধন প্রয়োজন হয়। মূলধন গঠন, মূলধনের যোগান, মূলধনের গতিশীলতা নির্ভর করে মানুষের পূর্বানুমান, সঞ্চয়ের অভ্যাস এবং দক্ষতার ওপর। কোন দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
মূলধনের বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- প্রাথমিক মূলধন: এটি ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। এটি ব্যক্তিগত সঞ্চয়, ঋণ বা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসতে পারে।
- নির্বাহী মূলধন: এটি ব্যবসার বৃদ্ধি বা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। এটি ব্যক্তিগত সঞ্চয়, ঋণ বা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আসতে পারে।
- পরিষেবা মূলধন: এটি ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। এটি নগদ, প্রাপ্য হিসাব এবং অন্যান্য তরল সম্পদগুলিকে বোঝায়।
মূলধন একটি ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্যবসাকে:
- শুরু করতে: মূলধন ছাড়া, একটি ব্যবসা শুরু করা অসম্ভব। মূলধন ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ এবং পরিষেবাগুলি কেনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- বৃদ্ধি করতে: মূলধন ছাড়া, একটি ব্যবসা বৃদ্ধি করতে পারে না। মূলধন ব্যবসাকে নতুন পণ্য এবং পরিষেবা তৈরি করতে, নতুন বাজারে প্রবেশ করতে এবং নতুন কর্মী নিয়োগ করতে সহায়তা করে।
- সাফল্য অর্জন করতে: মূলধন ছাড়া, একটি ব্যবসা সাফল্য অর্জন করতে পারে না। মূলধন ব্যবসাকে ঝুঁকি নিতে এবং নতুন সুযোগগুলি গ্রহণ করতে সহায়তা করে।
মূলধনের বিভিন্ন উৎস রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ব্যক্তিগত সঞ্চয়: ব্যবসার মালিক বা পরিচালকরা তাদের ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে মূলধন সরবরাহ করতে পারেন।
- ঋণ: ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা ব্যবসাকে ঋণ দিতে পারেন।
- বিনিয়োগ: বিনিয়োগকারীরা ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন।
মূলধন একটি ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। মূলধন ছাড়া, একটি ব্যবসা শুরু করা, বৃদ্ধি করা এবং সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব। আমাদের দেশে, মূলধনের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। ব্যক্তিগত সঞ্চয় হলো মূলধনের সবচেয়ে সাধারণ উৎস। ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরাও মূলধন সরবরাহ করতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারও ব্যবসার জন্য মূলধন সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প এবং উদ্যোগ চালু করেছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে:
- শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (IDCO): IDCO নতুন শিল্প প্রকল্পগুলিকে ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে।
- বাংলাদেশ ব্যাংক: বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসার জন্য ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আপনারা সহজেই ঋণ নিতে পারবেন।
- বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA): BIDA বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়তা প্রদান করে।
স্থায়ী মূলধন কাকে বলে?
যে সব মূলধন দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকে এবং বার বার ব্যবহারের পরেও যার কোন পরিবর্তন হয় না। তাকে স্থায়ী মূলধন বলে। যেমন- যন্ত্রপাতি, দালানকোঠা ইত্যাদি। স্থায়ী মূলধন একবার ব্যবহারে নিশেষ হয়ে যায় না। তবে স্থায়ী মূলধনের অবচয় (depreciation) ঘটে।স্থায়ী মূলধনের উদাহরণ:
- ভবন
- জমি
- মেশিনারি
- সরঞ্জাম
- আসবাবপত্র
- যানবাহন
- কম্পিউটার
- পেটেন্ট
- ট্রেডমার্ক
স্থায়ী মূলধন একটি ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্যবসার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যবসাকে প্রতিযোগিতামূলক হতে এবং নতুন পণ্য এবং পরিষেবাগুলি বিকশিত করতে সহায়তা করে।
স্থায়ী মূলধন প্রধান উপাদান দুটি:
- সম্পত্তি: ভবন, জমি এবং অন্যান্য সম্পদ যা ব্যবসায়ের মালিকানাধীন।
- যন্ত্রপাতি: উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত মেশিনারি এবং সরঞ্জাম।
স্থায়ী মূলধন সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন উৎস রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- শেয়ার বিক্রয়: ব্যবসায়ের মালিকরা নতুন শেয়ার বিক্রি করে স্থায়ী মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।
- ঋণ গ্রহণ: ব্যবসাগুলি ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে স্থায়ী মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।
- অভ্যন্তরীণ উৎস: ব্যবসাগুলি তাদের মুনাফা থেকে স্থায়ী মূলধন সংগ্রহ করতে পারে।
স্থায়ী মূলধনের একটি বৈশিষ্ট্য হল এটি সাধারণত একটি ব্যবসায়ের মোট মূলধনের একটি বড় অংশ গঠন করে। এটি ব্যবসায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সম্পদ যা ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয়।
চলতি মূলধন কাকে বলে?
যে সব মূলধন মাত্র একবার উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে চলতি মূলধন বলে। যেমন- পাট, কাঠ, তুলা, কয়লা ইত্যাদি চলতি মূলধনের অন্তর্গত। কেননা এগুলো একবার ব্যবহারের পর তার কোন অস্তিত্ব থাকে না।
জাতীয় মূলধন কাকে বলে?
যে মূলধন রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে তাকে জাতীয় মূলধন বলে। যেমন- ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে, বিমান ইত্যাদি জাতীয় মূলধনের অন্তর্গত।
ব্যক্তিগত মূলধন কাকে বলে?
যে মূলধন কোন ব্যক্তি বিশেষের মালিকানার থাকে তবে তাকে ব্যক্তিগত মূলধন বলে। যেমন- বাড়িঘর, শেয়ার ইত্যাদি ব্যক্তিগত মূলধনের অন্তর্গত।
নিমজ্জমান মূলধন কাকে বলে?
যে মূলধন একটি বিশেষ ধরনের উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হয়, তাকে নিমজ্জমান মূলধন বলা হয়। যেমন- রেলইঞ্জিন, লোহা গালার চুল্লি ইত্যাদি মূলধনের অন্তর্গত।
ভাসমান মূলধন কাকে বলে?
যে মূলধন বিভিন্ন উৎপাদন কাজে একটি শিল্প থেকে অন্য শিল্পে স্থানান্তর করা যায় তাকে ভাসমান মূলধন বলা হয়। যেমন- কয়লা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ভাসমান মূলধনের অন্তর্গত।
ভোগ্য মূলধন কাকে বলে?
যে মূলধন উৎপাদন চলাকালে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের ভরনপোষন ও জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাকে ভোগ্য মূলধন বলা হয়। যেমন- শ্রমিকের খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান ইত্যাদি ভোগ্য মূলধনের অন্তর্গত।
উৎপাদক মূলধন কাকে বলে?
যে সব মূলধন উৎপাদনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে তাকে উৎপাদক মূলধন বলে। যেমন-যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, কল কারখানা ইত্যাদি।