ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানের সুবিধা ও অসুবিধা
ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থান কাকে বলে?
শহরে বা তার উপকণ্ঠে ব্যবসায় তথা শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করা হলে তাকে ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থান বলে। আধুনিক সভ্যতায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বা শিল্প কারখানা গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার প্রয়োজন পড়ে। শহরে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত থাকায় অনেক দিন থেকেই ব্যবসায়ের জন্য শহুরে অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানের সুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানের সুবিধা | Advantages of Urban Location of Business
১. উপকরণাদির সহজ প্রাপ্তি (Easy availavity of components): উৎপাদনের জন্য যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদিসহ নানান উপকরণের প্রয়োজন পড়ে। শহরাঞ্চলে অতি সহজেই এ সকল উপকরণ পাওয়া যায়, যা গ্রাম্য অবস্থান বা বিশেষ কোনো শিল্প এলাকা থেকে শহরে যোগাযোগ ছাড়া সহজে সংগ্রহ করা যায় না।
২. সহজ বাজার সুবিধা (Easy market facilities): উৎপাদনের সাথে বিক্রয়ের বিষয়টি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ের জন্য শহর হলো উত্তম ক্ষেত্র। শহরে অধিক জনবসতির কারণে স্থানীয় বাজার যেমনি বড় হয় তেমনি শহর হতে অন্যত্র পণ্য প্রেরণেও সুবিধা পাওয়া যায়।
৩. সেবাধর্মী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি (Presence of various service organisation): ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান; যেমন-ব্যাংক, বিমা, মেরামতি দোকান, সরবরাহকারী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। শহরাঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই সহজেই এসব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ফলে সহজেই এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা পাওয়া যায়।
৪. উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (Developed transportation and communication system): শহরাঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠে। ফলে কাঁচামাল ও শিল্পীয় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া, ক্রেতাদের আসা-যাওয়া, শ্রমিক কর্মীদের যাতায়াত সহজতর হয়। এছাড়াও ফোন, ফ্যাক্স, ডাক ইত্যাদির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ ও উন্নততর হয়ে উঠে। ফলে শহরাঞ্চলে সহজেই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব।
৫. শ্রমিক কর্মীর সহজ প্রাপ্যতা (Availability of workers): বহু লোকজন যেমন শহর এলাকায় বাস করে, অন্যদিকে তেমনি কর্মসংস্থানের আশায় গ্রাম ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু মানুষ শহরে ভীড় জমায়। ফলে ব্যবসায়ের সাধারণ কর্মী হতে শুরু করে দক্ষ, অদক্ষ, আধাদক্ষ, বিশেষজ্ঞ কর্মী সহজেই এখানে পাওয়া যায়।
৬. শক্তি সম্পদ প্রাপ্তিতে সুবিধা (Easy access of power and energy): শিল্প পরিচালনার জন্য প্রচুর শক্তি সম্পদ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। বিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি শক্তি সম্পদ শহরাঞ্চলে যেভাবে পাওয়া যায় গ্রামাঞ্চলে অনেক ক্ষেত্রেই তা পাওয়া কষ্টসাধ্য। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে না উঠার পিছনে প্রয়োজনীয় শক্তি সম্পদের অপ্রতুলতা অন্যতম কারণ।
৭. নাগরিক সুবিধার উপস্থিতি (Presence of urban facilities): শহরাঞ্চলে উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা; যেমন-হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ফায়ার সার্ভিস, চিত্ত বিনোদন ব্যবস্থা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এ কারণেও মালিক, ব্যবস্থাপক ও কর্মীরা শহুরে অবস্থানকেই উত্তম মনে করে।
৮. নিরাপত্তা ব্যবস্থা (Security facilities): স্বাভাবিকভাবেই শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গ্রাম ও অন্যান্য এলাকা হতে অনেকাংশেই উন্নততর হয়। এখানে যে কোনো প্রয়োজনে সহজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাওয়া যায়। এরূপ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মালিক, শ্রমিক- কর্মচারীসহ সকল পক্ষই ব্যবসায়ের জন্য শহরে অবস্থানকে শ্রেয় মনে করে।
৯. সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভ (Obtaining government facilities): বর্তমান কালে বৃহদায়তন ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় সরকারি বিভিন্ন বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও তাদের সহযোগিতা লাভের প্রয়োজন পড়ে। শহরে সরকারি অফিস থাকায় সহজে এরূপ সুবিধা লাভ করা যায়।
১০. প্রশিক্ষণ সুবিধা (Training facilities): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দানের প্রয়োজন পড়ে। শহর অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে উঠায় সহজেই কর্মীরা এসব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায় অবস্থানের প্রতিটি ক্ষেত্রের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। গ্রাম্য অবস্থানের যেমন গুরুত্ব বা সুবিধা রয়েছে, তেমনি শহুরে অবস্থানেরও সুবিধা রয়েছে। এটি নির্ভর করে ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও ধরনের উপর। তবে উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে ব্যবসায়ের শহরে অবস্থানের ব্যাপক সুবিধা লক্ষ্য করা যায়।
ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানে বহুবিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কতিপয় অসুবিধার কারণে শিল্প কারখানা স্থাপনে ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিগণ বর্তমানকালে গ্রামীণ পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। শহুরে অবস্থানে শিল্প-কারখানা। স্থাপনের অসুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. অধিক সংস্থাপন ব্যয় (More establishment cost): শহর এলাকায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো সংস্থাপন ব্যয়ের আধিক্য। শহরে জমির মূল্য অনেক বেশি হওয়ার কারণে সঙ্গতভাবেই সংস্থাপন ব্যয় অধিক হয়। এ ছাড়াও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বায়ের আধিক্যের কারণে সীমাবদ্ধ মূলধনের উপর ব্যাপক চাপ পড়ে।
২. অধিক শ্রম ব্যয় (High labor cost): শহর অঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে শ্রমিক- কর্মচারীদের অধিক বেতন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অথচ গ্রামাঞ্চলে থাকা-খাওয়ার ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে কম মজুরি বা বেতনে শ্রমিক-কর্মী যোগাড় করা সম্ভব হয়।
৩. পরিবেশ দূষণ (Environment polution): শহর অঞ্চলে অধিক জন বসতির কারণে স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের উপর চাপ পড়ে। এর উপরে ব্যবসায় তথা শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার ফলে ধোঁয়া, গ্যাস ও বর্জ্য নির্গত হয়ে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।
৪. শ্রমিক অসন্তোষ (labor unrest): শহর অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক সংঘ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিক-কর্মীরা তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে অধিক সচেতন থাকে। ফলে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে তারা আন্দোলনের ডাক দেয়। রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনের কারণেও শহর অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
৫. যাতায়াতে সমস্যা (Transportation problem): শহর অঞ্চলে অত্যধিক ভাড়ার কারণে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্মীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে অনেক দূর থেকে কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হয়। শহরে অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থা ও যানজটের কারণেও কর্মীদের যাতায়াতে সমস্যা হয়।
৬. সম্প্রসারণের অসুবিধা (Disadvantages of expansion): শহর অঞ্চলে অনেক সময় বেশি মূল্য দিয়েও প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া যায় না। তাই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলেও স্থানের অভাবে তা কার্যকর করা সম্ভব হয় না। ফলে সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা হতে প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়।
৭. রাজনৈতিক চাপ (Political pressure): শহর এলাকায় রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড অধিক মাত্রায় সক্রিয় থাকে। রাজনৈতিক কর্মসূচির ফলে শহরে অবস্থিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানাসমূহ প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হয়। হরতাল, ধর্মঘট, ঘেরাও ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মকাও শহরে অবস্থিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর যেরূপ প্রভাব বিস্তার করে গ্রামীণ এলাকায় তদ্রুপভাবে প্রভাববিস্তার করে না।
৮. অত্যধিক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যয় (More procurement and maintenance cost): শহর এলাকায় কাঁচামালসহ উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের ক্রয়, পরিবহন ও সংগ্রহ ব্যয় এবং ভূমি, দালান, প্রাঙ্গন ইত্যাদির সংরক্ষণ ব্যয় বেশি হয়। এছাড়া পৌর কর, খাজনা ইত্যাদি খাতে ব্যয়ের পরিমাণ গ্রামীণ অবস্থানের তুলনায় অধিক হয়ে থাকে।
৯. কর্ম পরিবর্তনের প্রবণতা (More employee turnover): শহর এলাকায় একই স্থানে বহু সমজাতীয় ব্যবসায় ও শিল্প কারখানা স্থাপিত হয় বিধায় শিল্প কারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিক-কর্মীরা সামান্য বর্ধিত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির আশায় অথবা ন্যূনতম মনোমালিন্যের কারণে বর্তমান কর্মস্থল ত্যাগ করে অন্যত্র গমন করে। এতে ব্যবসায়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থান হলে এক দিকে যেমন বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়, অন্যদিকে তেমনি এরূপ অবস্থানের অসুবিধাও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানের ক্ষেত্রে সাধারণত উপরোক্ত অসুবিধাগুলো লক্ষ্য করা যায।
৫. শ্রমিক কর্মীর সহজ প্রাপ্যতা (Availability of workers): বহু লোকজন যেমন শহর এলাকায় বাস করে, অন্যদিকে তেমনি কর্মসংস্থানের আশায় গ্রাম ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু মানুষ শহরে ভীড় জমায়। ফলে ব্যবসায়ের সাধারণ কর্মী হতে শুরু করে দক্ষ, অদক্ষ, আধাদক্ষ, বিশেষজ্ঞ কর্মী সহজেই এখানে পাওয়া যায়।
৬. শক্তি সম্পদ প্রাপ্তিতে সুবিধা (Easy access of power and energy): শিল্প পরিচালনার জন্য প্রচুর শক্তি সম্পদ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। বিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা ইত্যাদি শক্তি সম্পদ শহরাঞ্চলে যেভাবে পাওয়া যায় গ্রামাঞ্চলে অনেক ক্ষেত্রেই তা পাওয়া কষ্টসাধ্য। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে না উঠার পিছনে প্রয়োজনীয় শক্তি সম্পদের অপ্রতুলতা অন্যতম কারণ।
৭. নাগরিক সুবিধার উপস্থিতি (Presence of urban facilities): শহরাঞ্চলে উন্নত পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা; যেমন-হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ফায়ার সার্ভিস, চিত্ত বিনোদন ব্যবস্থা ইত্যাদি পাওয়া যায়। এ কারণেও মালিক, ব্যবস্থাপক ও কর্মীরা শহুরে অবস্থানকেই উত্তম মনে করে।
৮. নিরাপত্তা ব্যবস্থা (Security facilities): স্বাভাবিকভাবেই শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গ্রাম ও অন্যান্য এলাকা হতে অনেকাংশেই উন্নততর হয়। এখানে যে কোনো প্রয়োজনে সহজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাওয়া যায়। এরূপ নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মালিক, শ্রমিক- কর্মচারীসহ সকল পক্ষই ব্যবসায়ের জন্য শহরে অবস্থানকে শ্রেয় মনে করে।
৯. সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভ (Obtaining government facilities): বর্তমান কালে বৃহদায়তন ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় সরকারি বিভিন্ন বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ ও তাদের সহযোগিতা লাভের প্রয়োজন পড়ে। শহরে সরকারি অফিস থাকায় সহজে এরূপ সুবিধা লাভ করা যায়।
১০. প্রশিক্ষণ সুবিধা (Training facilities): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দানের প্রয়োজন পড়ে। শহর অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে উঠায় সহজেই কর্মীরা এসব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায় অবস্থানের প্রতিটি ক্ষেত্রের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। গ্রাম্য অবস্থানের যেমন গুরুত্ব বা সুবিধা রয়েছে, তেমনি শহুরে অবস্থানেরও সুবিধা রয়েছে। এটি নির্ভর করে ব্যবসায়ের প্রকৃতি ও ধরনের উপর। তবে উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে ব্যবসায়ের শহরে অবস্থানের ব্যাপক সুবিধা লক্ষ্য করা যায়।
ব্যবসায়ের শহরে অবস্থানের অসুবিধা | Disadvantage of Urban Location of Business
ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানে বহুবিধ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কতিপয় অসুবিধার কারণে শিল্প কারখানা স্থাপনে ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিগণ বর্তমানকালে গ্রামীণ পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। শহুরে অবস্থানে শিল্প-কারখানা। স্থাপনের অসুবিধাসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. অধিক সংস্থাপন ব্যয় (More establishment cost): শহর এলাকায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো সংস্থাপন ব্যয়ের আধিক্য। শহরে জমির মূল্য অনেক বেশি হওয়ার কারণে সঙ্গতভাবেই সংস্থাপন ব্যয় অধিক হয়। এ ছাড়াও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বায়ের আধিক্যের কারণে সীমাবদ্ধ মূলধনের উপর ব্যাপক চাপ পড়ে।
২. অধিক শ্রম ব্যয় (High labor cost): শহর অঞ্চলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে শ্রমিক- কর্মচারীদের অধিক বেতন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। অথচ গ্রামাঞ্চলে থাকা-খাওয়ার ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে কম মজুরি বা বেতনে শ্রমিক-কর্মী যোগাড় করা সম্ভব হয়।
৩. পরিবেশ দূষণ (Environment polution): শহর অঞ্চলে অধিক জন বসতির কারণে স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের উপর চাপ পড়ে। এর উপরে ব্যবসায় তথা শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার ফলে ধোঁয়া, গ্যাস ও বর্জ্য নির্গত হয়ে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।
৪. শ্রমিক অসন্তোষ (labor unrest): শহর অঞ্চলে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় শ্রমিক সংঘ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই শ্রমিক-কর্মীরা তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে অধিক সচেতন থাকে। ফলে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে তারা আন্দোলনের ডাক দেয়। রাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনের কারণেও শহর অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
৫. যাতায়াতে সমস্যা (Transportation problem): শহর অঞ্চলে অত্যধিক ভাড়ার কারণে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্মীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে অনেক দূর থেকে কর্মীদের প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতে হয়। শহরে অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থা ও যানজটের কারণেও কর্মীদের যাতায়াতে সমস্যা হয়।
৬. সম্প্রসারণের অসুবিধা (Disadvantages of expansion): শহর অঞ্চলে অনেক সময় বেশি মূল্য দিয়েও প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া যায় না। তাই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণের প্রয়োজন হলেও স্থানের অভাবে তা কার্যকর করা সম্ভব হয় না। ফলে সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা হতে প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত হয়।
৭. রাজনৈতিক চাপ (Political pressure): শহর এলাকায় রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড অধিক মাত্রায় সক্রিয় থাকে। রাজনৈতিক কর্মসূচির ফলে শহরে অবস্থিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানাসমূহ প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হয়। হরতাল, ধর্মঘট, ঘেরাও ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মকাও শহরে অবস্থিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর যেরূপ প্রভাব বিস্তার করে গ্রামীণ এলাকায় তদ্রুপভাবে প্রভাববিস্তার করে না।
৮. অত্যধিক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যয় (More procurement and maintenance cost): শহর এলাকায় কাঁচামালসহ উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের ক্রয়, পরিবহন ও সংগ্রহ ব্যয় এবং ভূমি, দালান, প্রাঙ্গন ইত্যাদির সংরক্ষণ ব্যয় বেশি হয়। এছাড়া পৌর কর, খাজনা ইত্যাদি খাতে ব্যয়ের পরিমাণ গ্রামীণ অবস্থানের তুলনায় অধিক হয়ে থাকে।
৯. কর্ম পরিবর্তনের প্রবণতা (More employee turnover): শহর এলাকায় একই স্থানে বহু সমজাতীয় ব্যবসায় ও শিল্প কারখানা স্থাপিত হয় বিধায় শিল্প কারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিক-কর্মীরা সামান্য বর্ধিত সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির আশায় অথবা ন্যূনতম মনোমালিন্যের কারণে বর্তমান কর্মস্থল ত্যাগ করে অন্যত্র গমন করে। এতে ব্যবসায়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থান হলে এক দিকে যেমন বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায়, অন্যদিকে তেমনি এরূপ অবস্থানের অসুবিধাও কিন্তু কোনো অংশে কম নয়। ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থানের ক্ষেত্রে সাধারণত উপরোক্ত অসুবিধাগুলো লক্ষ্য করা যায।