একটি উত্তম বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য| Feature of a Good Layout

বিন্যাস যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অত্যন্ত কার্যকরভাবে ও দ্রুততার সাথে উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের অফিস, কারখানা এবং যন্ত্রপাতির বিন্যাস করে থাকে। তবে বিন্যাস করলেই যে সেটি উত্তম বিন্যাস বলে বিবেচিত হবে- তা নয়। একটি উত্তম বিন্যাসের মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটাতে হয়। তা না হলে বিন্যাসটির উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে। উত্তম বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. পর্যাপ্ত স্থান (Sufficient space): একটি উত্তম বিন্যাসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থানের বরাদ্দ থাকতে হবে। যদি বিন্যাসে প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্থান পাওয়া না যায়, তাহলে যত ভাবেই বিন্যাস পরিকল্পনা করা হোক কেন সেখান হতে কার্যকর ফলাফল আশা করা যায় না। এ জন্য উত্তম বিন্যাসের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থানের বরাদ্দ দিতে হবে। তবে বরাদ্দকৃত স্থান যেন খুব অল্প বা খুব বেশি না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।

২. স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার (Maximum use of space): উত্তম বিন্যাসের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহারের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিন্যাসের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানের যদি অপচয় হয় তাহলে বিন্যাসের উদ্দেশ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তাই যে বিন্যাসের মাধ্যমে স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব, সে বিন্যাসকে উত্তম বিন্যাস বলা যেতে পারে।

৩. কর্মী নিরাপত্তা (Employee safety): বর্তমানে সারা বিশ্বে কারখানায় কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। তাই বিন্যাস পরিকল্পনায় কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বপ্রথম বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে বিন্যাস করা হয়, সেই বিন্যাসটি উত্তম' বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৪. পর্যান্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা (Sufficient lighting and ventilation system): বিন্যাস ব্যবস্থা এমন হতে হবে যে, কারখানা বা অফিসের যেখানে যতটুকু আলো-বাতাসের প্রয়োজন, সেখানে ততটুকু আলো- বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম আলো-বাতাসকে প্রধান্য না দিয়ে প্রাকৃতিক আলো- বাতাসকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। তবে প্রকৃতিগত কারণে যেখানে নির্দিষ্ট মাত্রার আলো ও বাতাসের প্রয়োজন কিন্তু কোনো কারণে তা যদি নিশ্চিত করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেখানে কৃত্রিম উপায়ে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. কার্যকেন্দ্রের কম দূরত্ব (Low distance between centers): সকল উৎপাদন ব্যবস্থা বা সেবা প্রদান ব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট স্থান বা কেন্দ্রের মাধ্যমে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ একাধিক কার্যকেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদন বা সেবাকর্ম সম্পাদন করা হয়। এক্ষেত্রে পরস্পর সম্পর্কিত কার্যকেন্দ্রগুলো যাতে কম দূরত্বে এবং পাশাপাশি অবস্থান করে যে বিষয়টি কোনো বিন্যাসে অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে উত্তম বিন্যাস বলা যেতে পারে।

৬. সহজ আগমন ও প্রস্থান (Easy entrance and exits): কারখানা বা অফিসে প্রতিদিন বহু সংখ্যক শ্রমিক-কর্মীসহ নানান ধরনের ব্যক্তিবর্গের আগমন ও প্রস্থান ঘটতে পারে। তাছাড়া উৎপাদনের প্রয়োজনে কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, আনুষঙ্গিক হাতিয়ার, যন্ত্রাংশ ইত্যাদির চলাচল প্রয়োজন হতে পারে। এদিকটি বিবেচনা করে বিন্যাস করা হলে তা উত্তম বিন্যাস হিসেবে গণ্য হতে পারে। যেমন: হাসপাতালগুলোতে রোগীবাহী ট্রলি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থান রাখা হয়।

৭. নমনীয়তার সুযোগ (Opportunity of flexibility): বর্তমানের আলোকে বিন্যাস পরিকল্পনা করা হলেও তা আজীবন বলবৎ থাকবে- তা নয়। ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে তা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। এ কারণে একটি উত্তম বিন্যাসের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই বলা যায়, নমনীয়তার গুণ একটি উত্তম বিন্যাসের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য হয়।

৮. সহজ সমন্বয় (Easy co-ordination): সহজ সমন্বয় একটি উত্তম বিন্যাসের গুণ বলে বিবেচিত হয়। বিন্যাস ব্যবস্থা এমনভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত যাতে স্বল্পতম সময়ে, স্বল্পতম তত্ত্বাবধায়কের আওতায় সকল কার্যক্রম সমন্বয় করা যায়। একারণে ব্যাংকগুলোতে দেখা যায়, সকল নগদ কার্যক্রমকে নগদ বিভাগের আওতায় এনে তা একজন প্রধানের আওতায় সমন্বয় করা হয়। আবার উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল সংগ্রহ বিভাগ, উৎপাদন বিভাগ, উৎপাদিত পণ্যের গুদাম ঘর ইত্যাদি পাশাপাশি রাখা হয়।

৯. গুদামঘরের অবস্থান (Location of warehouse): গুদাম ঘরের সঠিক অবস্থান একটি উত্তম বিন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যদি যথাসময়ে পাওয়া না যায়, তাহলে উৎপাদন কার্য ব্যাহত হয়। আবার উৎপাদিত পণ্যও যদি যথাসময়ে সংরক্ষণ করা না যায়; তাহলেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই উত্তম বিন্যাস পরিকল্পনায় সঠিক স্থানে গুদামের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

১০. আনন্দদায়ক পরিবেশ (Pleasant atmosphere): বর্তমানে কর্মীদের উৎপাদনের সাধারণ উপাদান হিসেবে না দেখে তাদেরকে উৎপাদনের মানবিক উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই তাদের কার্য পরিবেশ এমন হওয়া উচিত যাতে তারা কাজ করার সময় একঘেয়েমি অনুভব না করে আনন্দ অনুভব করে। এ বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দিয়েই বিন্যাস পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। তাই বলা যায়, আনন্দদায়ক পরিবেশের ব্যবস্থা করা একটি উত্তম বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য।

পরিশেষে বলা যায়, একটি বিন্যাসে কোন কোন বিষয় জড়িত থাকলে তাকে উত্তম বিন্যাস বলা যাবে তা বলা মুশকিল। তবে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো যদি কোনো বিন্যাসে বিদ্যমান থাকে তাহলে তাকে উত্তম বা আদর্শ বিন্যাস বলা যেতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url