উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় |How to Increase Production Capacity

নানা কারণে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে যে কারণেই উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হোক না কেন এটি বৃদ্ধির একক কোনো পদ্ধতি বা উপায় নেই। অনেকগুলো বিষয়ের উপর এটি নির্ভর করে। উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় বা পদ্ধতিগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
১. নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন (Installation of new machine): উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ হলো- যন্ত্রপাতির বয়স বৃদ্ধি। তাই পুরাতন যন্ত্রপাতির স্থলে নতুন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা যায়।

২. উন্নত কাঁচামাল ব্যবহার (Use of high quality raw materials): নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারের ফলে কাঁচামালের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই উন্নত ও মানসম্মত কাঁচামাল ব্যবহার করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

৩. দক্ষ শ্রম বাহিনী গঠন (Formation of efficient labor force): দক্ষ শ্রম বাহিনী উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পূর্বশর্ত। এ কারণে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষ কর্মী বাহিনী গঠন করা যেতে পারে। দু'ভাবে এরূপ বাহিনী গঠন করা যায়। প্রথমতঃ দক্ষ কর্মী নিয়োগ করে, দ্বিতীয়ত: অদক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে।

৪. প্রেষণা দান (To give motivation): প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান কর্মীদের প্রেষণা দানের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। প্রেষণার ফলে কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। আর উচ্চ মনোবলসম্পন্ন কর্মীরা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

৫. উৎপাদন পরিমাণের উপর গুরুত্বারোপ (Emphasis on the quantity of production): উৎপাদনের পরিমাণকে গুরুত্ব না দিয়ে মানের উপর অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলে উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই মানের পাশাপাশি উৎপাদনের সংখ্যাত্মক পরিমাণের উপর গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

৬. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার (Use of modern technology): পুরাতন প্রযুক্তি উৎপাদন ক্ষমতাকে হ্রাস করে। তাই পুরাতন প্রযুক্তির স্থলে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা যায়।

৭. ওভার টাইমের ব্যবস্থাকরণ (Facilitated of overtime): স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে ওভার টাইমের ব্যবস্থা করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। ওভার টাইম হলো- স্বাভাবিক শ্রম ঘণ্টার অতিরিক্ত কার্য সম্পাদন করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত নিয়ম অনুযায়ী কর্মীদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হয়।

৮. নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ (Undisrupted fuel supplies): অনিয়মিত জ্বালানী সরবরাহ হলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পায়। তাই উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে জ্বালানীর ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. উন্নত কার্য পরিবেশ সৃষ্টি (Creating developed work environment): উন্নত কার্য পরিবেশ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক। এ কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে সেখানে উন্নত কার্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

১০. বিপণন কার্যক্রমকে সম্প্রসারণ (Expansion of marketing programs): বিপণন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ -এবং পরোক্ষভাবে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক। বাজার গবেষণার মাধ্যমে একদিকে যেমন নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করা সম্ভব হয় অন্যদিকে তেমনি বিপণন সফলতার ফলে পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যা উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমকে গতিশীল করে তোলে।

পরিশেষে বলা যায়, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে সকল উপায় বা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে তা উপরে আলোচিত হয়েছে। উপরোক্ত উপায়গুলো হতে কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজন অনুসারে এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োগ করা সম্ভব এরূপ এক বা একাধিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url