পণ্য ও সেবা ডিজাইনের প্রবণতা |Trends of Product Design

পণ্য ও সেবা ডিজাইন করা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল কাজ। তাই এ কাজটি করার ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপককে বেশ কিছু ঝোঁক বা প্রবণতাকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হয়। পণ্য ও সেবা ডিজাইনের সাথে জড়িত এ সকল ঝোঁক বা প্রবণতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. ক্রেতা সন্তুষ্টি (Customers' satisfaction): পণ্য বা সেবা ডিজাইনের মূল প্রবণতা হলো ক্রেতা সন্তুষ্টি। অর্থাৎ ক্রেতাদের সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করেই পণ্য বা সেবার ডিজাইন করা হয়। ক্রেতারা কোন ধরনের পণ্য চায়, তা জানতে না পারলে সঠিকভাবে পণ্য ডিজাইন করা যায় না। তাই ক্রেতাদের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা যাতে পূরণ হয় সে বিষয়টি বিবেচনা করে পণ্যের ডিজাইন করা উচিত।

২. কার্যকারিতা (Effectiveness): পণ্য ডিজাইনের সাথে দু'টি বিষয় জড়িত। যার একটি হলো পণ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং অন্যটি হলো এর বহিরাবরণ। অভ্যন্তরীণ বিষয় বলতে এর গুণাগুণ বা কার্যকারিতাকে বুঝানো হয়। পণ্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে এর উপযোগিতা ও অভাব পূরণের ক্ষমতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করা উচিত। কারণ পণ্য শুধুমাত্র উন্নতভাবে উপস্থাপন করলেই হবে না, তা অভাব পূরণের উপযুক্তও হতে হবে।

৩. উৎপাদন সময় হ্রাসকরণ (Reducing production time): বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার অন্যতম শর্ত হলো- যথা সময়ে পণ্য উৎপাদন করে ভোক্তাদের মাঝে সরবরাহ করা। কারণ যথা সময়ে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করা না গেলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। তাই পণ্য উৎপাদনে যাতে কম সময় লাগে সে দিকে খেয়াল রেখে পণ্যের ডিজাইন করা উচিত।
পণ্য ও সেবা ডিজাইনের প্রবণতা
৪. স্টাইল পরিবর্তনের প্রবণতা (Trends of style change): আধুনিক যুগে ক্রেতাদের রুচি, আচার-আচরণ, ফ্যাশন ইত্যাদি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা আরো বেশি। তাই যে সকল পণ্যের স্টাইল দ্রুত পরিবর্তন হয় যেগুলোর ক্ষেত্রে বেশ চিন্তা-ভাবনা করেই ডিজাইন প্রণয়ন করা উচিত। কারণ পণ্যের ডিজাইন বার বার পরিবর্তন করলে সাধারণ ক্রেতাদের উপর তার ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে।

৫. ক্রয় ক্ষমতা (Purchasing power): পণ্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। পণ্য উৎপাদন করা হয় ক্রেতাদের জন্যই। কিন্তু ডিজাইন করতে গিয়ে পণ্যের মূল্য যদি এতো বৃদ্ধি পায় যে, পণ্যটি তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তবে তারা ঐ পণ্য আর ক্রয় করবে না। এতে পণ্য ডিজাইনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।

৬. প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য (Abililty of the firm): পণ্য ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য বলতে আর্থিক সামর্থ্য, জনবল, সংগঠনিক সামর্থ্য, প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য, ক্রেতা সন্তুষ্টি করার ক্ষমতা ইত্যাদিতে বুঝানো হয়। প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যের বিষয়টিকে বিবেচনা করেই পণ্য বা সেবার ডিজাইন ঠিক করা উচিত। তা না হলে তা আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।

৭. পরিবেশ (Environment): পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো ভাবে পণ্যের ডিজাইন করা উচিত নয়। পণ্যের ডিজাইন এমন ভাবে করা উচিত যাতে তা পরিবেশ বান্ধব হয়। মনে রাখা প্রয়োজন, পরিবেশকে ঠিক রেখেই আমাদের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।

পরিশেষে বলা যায়, পণ্য ডিজাইনের ঝোঁক বা প্রবণতাগুলোকে সামনে রেখে যদি পণ্যের ডিজাইন করা হয় তাহলে উৎপাদক, ক্রেতা এবং পরিবেশ সকলেই উপকৃত হয়। এ কারণে ডিজাইনকারীকে উপরে আলোচিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করেই পণ্য বা সেবার ডিজাইন করা উচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url