বাংলাদেশের কৃষি সমস্যা ও সমাধান

কৃষি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০% কৃষির সাথে জড়িত। কৃষি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৩%।

বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা


বাংলাদেশের কৃষি খাতে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

১. জমির উর্বরতা হ্রাস: বাংলাদেশে জমির উর্বরতা হ্রাস একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে একই জমিতে একই ফসল চাষ, সার ও কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, এবং জমির অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।

২. জমির স্বল্পতা: বাংলাদেশের ভূমিভাগের প্রায় ৭০% জমি চাষাবাদের উপযোগী। তবে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জমির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে।

৩. পানির উৎস সংকট: বাংলাদেশের কৃষি জমিতে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদির জলধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তাছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে।

৪. কৃষি শ্রমিকের অভাব: বাংলাদেশের কৃষি খাতে শ্রমিকের অভাব একটি বড় সমস্যা। গ্রামের তরুণরা কৃষি পেশা ছেড়ে শহরে চলে যাচ্ছে। ফলে কৃষি জমিতে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

৫. কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ সমস্যা: বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ একটি বড় সমস্যা। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে তাদের আয় কমে যাচ্ছে।

৬. কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের অভাব: বাংলাদেশের কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহারের হার এখনও অনেক কম। কৃষকরা প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন নন। ফলে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে।

৭. কৃষকদের আর্থিক অবস্থার অবনতি: কৃষিখাতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটছে।

বাংলাদেশের কৃষির সমস্যার সমাধান


১. জমির স্বল্পতা মোকাবিলায়: জমির স্বল্পতা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, জমির অপচয় রোধ, জমির ব্যবহারের সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ, বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জলময় ভূমিকে চাষাবাদের উপযোগী করা, পতিত জমি পুনর্বাসন করা, উঁচু জমিতে সবজি চাষ করা ইত্যাদি।

২. জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য: জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, জমিতে জৈব সার প্রয়োগ, রাসায়নিক সার ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে আনা, ফসল পর্যায়ক্রমিক চাষ, আগাছা দমন, মাটির ক্ষয় রোধ ইত্যাদি।

৩. পানির সংকট মোকাবিলায়: পানির সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, পানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি, পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ ইত্যাদি।

৪. কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে: কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বৃদ্ধি, কৃষি গবেষণার উন্নতি ইত্যাদি।

৫. কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে: কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, কৃষকদের জন্য ঋণ সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষি বিমা ব্যবস্থার উন্নতি, কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে সরকারি সহায়তা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

৬. কৃষি পুঁজির সংস্থান বৃদ্ধি: কৃষি পুঁজির সংস্থান বৃদ্ধির জন্য কৃষি ব্যাংক ও কৃষি ঋণ স্কিমের আওতা বাড়ানো, কৃষি বীমা ব্যবস্থা চালু করা এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনা প্রদান করা।

৭. কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ: কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের জন্য কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং কৃষি পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি করা।

৮. শ্রমিকের অভাব: কৃষি মোকাবেলার জন্য কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করা, এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের কৃষি খাতের সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে। ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, কৃষকদের আয় বাড়বে, এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url