মানসম্পন্ন পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ| Importance of Production of Quality Product
বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার জন্য মানসম্পন্ন পণ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসম্পন্ন পণ্য একদিকে যেমন ভোক্তা সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে অন্যদিকে তেমনি উৎপাদকদেরও করে দুঃচিন্তা মুক্ত। মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন (Achieving customer satisfaction): মান সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বণ্টন করা হলে ক্রেতারা তাদের কাঙ্ক্ষিত মানের পণ্য ক্রয় করতে সক্ষম হয়। এক্ষেত্রে মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তারা অসন্তুষ্ট হয় না। পণ্যের গুণগত মান যদি তাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার সাথে এক হয়ে যায়, তাহলে তারা সন্তুষ্ট লাভ করে। আর ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জিত হলে তা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।
২. স্থায়ী ক্রেতা সৃষ্টি (Creation of permanent customer): স্থায়ী গ্রাহক বা স্থায়ী ক্রেতা ব্যবসায়ের সম্পদস্বরূপ। আর প্রাথমিক ক্রেতাদের স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসম্পন্ন পণ্য পেয়ে কোনো ক্রেতা যদি সন্তুষ্ট হয় তাহলে সে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্য বার বার ক্রয় করতে থাকে, এতে সে ঐ প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তরিত হয়।
৩. বিক্রয় বৃদ্ধি (To increase sale): মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা হলে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং প্রতিনিয়ত ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে থাকে, এতে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়। আর যে কোনো প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা। অতএব বলা যায়, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।
৪. প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা (Survival in competition): বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এরূপ প্রতিযোগিতা আরো বেশি। এমতাবস্থায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য একজন ব্যবসায়ীকে যে সকল কৌশল গ্রহণ করতে হয় তার মধ্যে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন একটি। কারণ এর মাধ্যমে ক্রেতার সংখ্যা একদিকে যেমন বাড়ানো যায়, অন্যদিকে তেমনি তাদেরকে স্থায়ী ক্রেতায়েও রূপান্তর করা যায়। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়।
৫. ব্যবসায়িক সুনাম অর্জন (To achieve business goodwill): মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করা হলে ব্যবসায়িক সুনাম অর্জিত হয়। মানসম্মত পণ্য ক্রয় করে একদিকে যেমন ক্রেতারা সন্তুষ্ট হয় অন্যদিকে তেমনি বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়ে লাভের পরিমাণও বাড়তে থাকে। ফলে উৎপাদনকারী নতুন নতুন ও আরো মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করতে পারে। এতে ব্যবসায়িক সুনাম বৃদ্ধি পায়।
৬. ব্যবসায় সম্প্রসারণ (Expansion of business): ব্যবসায় সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও মানসম্মত পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করা হলে ব্যবসায়ের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিক্রয় এক অঞ্চল হতে অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ছোট গণ্ডি হতে ব্যবসায়কে বড় পরিসরে সম্প্রসারণের প্রয়োজন পড়ে। আর এরূপ অবস্থা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলকর।
৭. অধিক মুনাফা অর্জন (Achieving high profit): মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করা হলে বাজারে প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের সুনাম বৃদ্ধি পায়। ফলে বিক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। অধিক বিক্রয়ের ফলে অধিক পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করার প্রয়োজন পড়ে। তাই দেখা যায়, বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে যেমন মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে তেমনি অধিক উৎপাদনের ফলে পণ্যের একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় যা মুনাফা বৃদ্ধির হারকে আরো ত্বরান্বিত করে।
৮. দক্ষ কর্মী বাহিনী গঠন (Formation of efficient work force): মানসম্পন্ন পণ্য দক্ষ কর্মী বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসম্মত পণ্য উৎপাদিত হলে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হয়, বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং মুনাফার পরিমাণও বাড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। এতে তারা প্রেষিত হয়ে স্ব স্ব কাজে আত্মনিয়োগ করে এবং দক্ষ হয়ে উঠে। আবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেও দক্ষ কর্মী বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
৯. ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা (Maintaining good relation with customer): মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও তা ক্রেতাদের মাঝে সরবরাহ করা হলে ক্রেতাদের সাথে সরবরাহকারী অর্থাৎ উৎপাদকের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। আর ক্রেতা ও বিক্রেতার সুসম্পর্ক বর্তমান ব্যবসায়ের একটি অন্যতম সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। ক্রেতা-বিক্রেতার এরূপ সুসম্পর্ক স্থায়ী ক্রেতা সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১০. সম্পদের সব্যবহার (Proper use of wealth): সম্পদের সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মান সম্মত পণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসম্মত পণ্য মানেই হলো অধিক বিক্রয় এবং অধিক উৎপাদন। অধিক উৎপাদন ও বিক্রয় করা হলে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল সম্পদের কার্যকর ও কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত হয়। আর সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়।
পরিশেষে বলা যায়, মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন দু'দিক থেকে গুরুত্ব বহন করে। প্রথমতঃ মানসম্পন্ন পণ্য ক্রয় করে ক্রেতারা সন্তুষ্টি লাভ করে, দ্বিতীয়তঃ বিক্রয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম-সুখ্যাতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।