আর্থিক জাতীয় আয় ও প্রকৃত জাতীয় আয়ের মধ্যে পার্থক্য
জাতীয় আয় পরিমাপের ক্ষেত্রে কোনো দেশের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী ও সেবার মূল্য নির্ধারণের দুইটি পদ্ধতি বিদ্যমান। এ দু'টি পদ্ধতির সাহায্যে জাতীয় আয় নির্ণয় করা হয়। পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে নির্ণেয় জাতীয় আয়ের একটিকে আর্থিক জাতীয় আয় এবং অন্যটিকে প্রকৃত জাতীয় আয় বলা হয়। আর্থিক জাতীয় আয় এবং প্রকৃত জাতীয় আয় জাতীয় আয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
আর্থিক জাতীয় আয়| Money national income
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে কোনো দেশের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী ও সেবার মূল্য যদি চলতি বাজার মূল্যে হিসাব করা হয় তখন তাকে আর্থিক জাতীয় আয় বলে। আর্থিক জাতীয় আয়কে নামিক জাতীয় আয়ও (Nominal national income) বলা হয়।
ধরা যাক: বাংলাদেশে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে যে পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী ও সেবা উৎপন্ন হয়েছে তার প্রতিটিকে যদি উক্ত অর্থ বছরের দাম দিয়ে গুণ করে তার সমষ্টি নেওয়া হয় তবে বাংলাদেশের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের আর্থিক বা নামিক জাতীয় পাওয়া যাবে।
আরো ধরা যাক, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশে শুধুমাত্র ৫০০ টন পাট উৎপন্ন হয়েছে এবং প্রতি টন পাটের মূল্য ৪০,০০০ টাকা। পাট ছাড়া আর কোনো পণ্য বা সেবা উৎপন্ন হয়নি। তাহলে উক্ত অর্থ বছরে বাংলাদেশের জাতীয় আয় হবে (৫০০ x ৪০,০০০) = ২,০০,০০,০০০ টাকা।
প্রকৃত জাতীয় আয় | Real national income
একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে এক বছরে কোনো দেশে উৎপাদিত দ্রব্য ও সেবার মূল্য যদি চলতি বাজার মূল্যের পরিবর্তে ভিত্তি বছরের বাজার মূল্যে হিসাব করা হয় তবে তাকে প্রকৃত জাতীয় আয় বলে।
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, স্বাভাবিক কোনো বছরকে ভিত্তি বছর হিসাবে গ্রহণ করা হয়। মনে করি ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশে শুধুমাত্র ৫০০ টন পাট উৎপন্ন হয়েছিল যার মূল্য ছিল প্রতি টন ৮,০০০ টাকা। উক্ত অর্থ বছরে পাট ছাড়া অন্য কোনো দ্রব্য কিংবা সেবা উৎপন্ন হয়নি।
আবার মনে করি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশে পাটের মোট উৎপাদন ছিল ৪০০ টন এবং প্রতি টনের দাম ছিল ১২,০০০ টাকা। উপরের সরল উদাহরণে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে চলতি মূল্যে আর্থিক জাতীয় আয় হবে ৪০০ × ১২,০০০ = ৪৮,০০,০০০ টাকা। কিন্তু ভিত্তি বছরের মূল্যস্তরে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে প্রকৃত জাতীয় আন হবে ৪০০ × ৮,০০০ = ৩২,০০,০০০ টাকা।