উৎপাদন ব্যবস্থাপনা |Production Management
প্রকৃতি প্রদত্ত উপাদানকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য যে ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন পড়ে তাকে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বলে।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কাকে বলে? What is Production Management?
সাধারণ অর্থে, উৎপাদন সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা কার্যকেই উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বলে। ব্যাপক অর্থে, উৎপাদন কার্য দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে লক্ষ্যার্জনের জন্য উৎপাদন বিষয়ক পরিকল্পনা গ্রহণ, প্রয়োজনীয় উপকরণাদি; যেমন- কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, জনশক্তি ইত্যাদি সংগঠিতকরণ এবং তাদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর সামগ্রিক প্রচেষ্টাকেই উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, কাঁচামালকে পরিণত পণ্যে রূপান্তরকরণ কার্যাবলির পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহকরণ, তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াই হলো উৎপাদন ব্যবস্থাপনা।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে E. F. L. Breach (ই. এফ. এল. ব্রিচ) বলেছেন,
কোনো প্রতিষ্ঠানের যে অংশ কাঁচামালকে পরিপূর্ণ পণ্যে রূপান্তর করে, সে অংশের কার্যকর পরিকল্পনা এবং কার্যপরিচালনা করার প্রক্রিয়াই হলো উৎপাদন ব্যবস্থাপনা।
এ সম্পর্কে আবার Elwood S. Buffa (এলওড এস. বাফা) বলেছেন,
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা উৎপাদন প্রক্রিয়ার সেই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে জড়িত, যার সাহায্যে নির্ধারিত পরিমাণ ও চাহিদা মাফিক পণ্য ও সেবা ন্যূনতম ব্যয়ে উৎপাদন করা যায়।
উপরোক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞা হতে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে নিম্নোক্ত ধারণাগুলো পাওয়া যায়:
- উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার একটি অংশ;
- কোনো প্রতিষ্ঠানের যে অংশ কাঁচামালকে পরিপূর্ণ পণ্যে রূপান্তর করে, সে অংশের সাথে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা জড়িত;
- উৎপাদন ব্যবস্থাপনার মূল কাজ হলো- উৎপাদনের কার্যকর পরিকল্পনা এবং কার্যপরিচালনা করা;
- পণ্য নকশাকরণ, পণ্য উৎপাদন, মোড়ককরণ ও বণ্টনের জন্য প্রস্তুতকরণ পর্যন্ত উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কার্য বিস্তৃত
- উৎপাদন ব্যবস্থাপনার সাহায্যে নির্ধারিত পরিমাণ ও চাহিদা মাফিক পণ্য ও সেবা ন্যূনতম ব্যয়ে উৎপাদন করা যায়:
পরিশেষে বলা যায়, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা হলো সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সেই অংশ যার সাহায্যে চাহিদা মাফিক ও ন্যূনতম ব্যয়ে পণ্য নকশাকরণ, উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন, পূর্বানুমান, কার্য গবেষণা, কার্য পরিমাপ, উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ, মওজুদমাল নিয়ন্ত্রণ, মান নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি করা হয়।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি | Functions of Production Management
সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার বিশেষায়িত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হিসেবে বর্তমানে উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কার্য পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এ সকল কাজের মধ্যে একদিকে যেমন আছে উৎপাদন প্রস্তুতিপর্বের কাজ, অন্যদিকে আছে উৎপাদন চলাকালীন কাজ এবং এ ছাড়াও আছে কিছু অতিরিক্ত ও আনুষঙ্গিক কাজ। তবে বলা যায়, কাঁচামালকে পরিণত পণ্যে রূপান্তর করার যাবতীয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কাজই হলো উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কাজ। উৎপাদন কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য একজন উৎপাদন ব্যবস্থাপককে যে সকল কাজ সম্পাদন করতে হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. পণ্যের নকশাকরণ (Product designing): উৎপাদন ব্যবস্থাপনার সর্বপ্রথম কাজ হলো উৎপাদিতব্য পণ্যের নকশাকরণ। যদিও কখনও কখনও পণ্যের নকশা প্রণয়নের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়, তবুও চূড়ান্ত নকশার অনুমোদন উৎপাদন ব্যবস্থাপককেই দিতে হয়। কারণ নকশা সংক্রান্ত যাবতীয় দায়- দায়িত্ব তার উপরই বর্তায়।
২. উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন (Preparing production plan): সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূ উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বাস্তবসম্মত উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। পণ্যদ্রব্যের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুযায়ী উৎপাদন কর্মসূচি গ্রহণ করাই হলো উৎপাদন পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে কোন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হবে, কি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা হবে, কখন উৎপাদন করা হবে ইত্যাদি সম্পর্কে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৩. উৎপাদনের পরিমাণ পূর্বানুমান (Forecasting of production quantity): কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের পরিমাণ পূর্বানুমান করার জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনা মতামত জরিপ, বিক্রয় কর্মীদের মতামত গ্রহণ, বাজার গবেষণা এবং বিভিন্ন পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। এভাবে উৎপাদনের পরিমাণ পূর্বানুমান করা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৪. কার্য গবেষণা (Work study): উৎপাদনের সাথে, জড়িত বিভিন্ন উপায়-উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যূনতম ব্যয়ে মানসম্মত পণ্য কিভাবে উৎপাদন করা যায়, তার পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া অনুসন্ধানই হলো কার্য গবেষণা। একজন উত্তম উৎপাদন ব্যবস্থাপক সর্বদা এরূপ কার্য গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
৫. উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ (Production control): উৎপাদন পরিকল্পনার ন্যায় উৎপাদন নিয়ন্ত্রণও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আরেকটি অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ লক্ষ্যে তিনি উৎপাদন পরিকল্পনার সাথে সম্পাদিত কার্যের তুলনা করে কোনো বিচ্যুতি হলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
৬. মওজুদ নিয়ন্ত্রণ (Inventory control): মওজুদমাল নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অধিক পণ্য মওজুদ থাকলে একদিকে যেমন অপচয় বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে তেমনি কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কম পণ্য মওজুদ থাকলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি পড়তে পারে। তাই মওজুদের পরিমাণ কাঙ্কিত পর্যায়ে রাখতে তা নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। আর মওজুদ পণ্য নিয়ন্ত্রণের কাজটি উৎপাদন ব্যবস্থাপকই করে থাকেন।
৭. মান নিয়ন্ত্রণ (Quality control): বর্তমানে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পণ্যের মান ঠিক রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য মানের অবনতি হয়, তাহলে ঐ পণ্য বা প্রতিষ্ঠান হতে ক্রেতারা অতি সহজেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। মান নিয়ন্ত্রণের এ কাজটি উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৮. যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance of machineries): কলকজা ও যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনাকেই করতে হয়। যন্ত্রপাতির সঠিক ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের দ্বারা এ সকল উপকরণাদির কার্যক্ষমতা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব। যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ারসমূহ উপযুক্ত' স্থানে সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও মেরামত সংক্রান্ত কাজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অন্তর্গত।
৯. উৎপাদন বাজেট প্রণয়নে সহায়তা (To help for preparing budget): ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হবে, এসকল পণ্য উৎপাদনে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে এবং এ বাবদ ব্যয়িত অর্থ কোথা হতে সংগৃহীত হবে ইত্যাদি বিষয়ের বাজেটই হলো উৎপাদন বাজেট। বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে বাজেট প্রণয়নে বাজেট কমিটি থাকে। তাই বাজেট প্রণয়নে বিশেষ করে উৎপাদন বাজেট প্রণয়নে উৎপাদন ব্যবস্থাপক বাজেট কমিটিকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।
১০. ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা (Assist to take purchase decision): পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করার প্রয়োজন পড়ে। ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য ক্রয় বিভাগের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে সকল তথ্য বা উপাত্তের প্রয়োজন, উৎপাদন ব্যবস্থাপক তা সরবরাহ করে ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সংগঠন, কর্মী নিয়োগ, নির্দেশনা, প্রেষণাদান, সমন্বয়সাধন এবং নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজগুলো উৎপাদন ব্যবস্থাপক করে থাকলেও উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে এ ব্যবস্থাপনার স্বতন্ত্র কাজ লক্ষ্য করা যায়।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব | Importance of Production Management
কোনো ব্যক্তি ক্ষুদ্র পরিসরে যদি বাঁশ বা বেত কিনে তা দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করে নিজেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন, তবে সে ক্ষেত্রে উৎপাদন কার্যক্রম চললেও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তেমন থাকে না। তবে তিনি যদি তার ব্যবসায়িক সফলতার ধারাবাহিকতায় কিছু সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেন, যাদের কাজ হলো বাঁশ বা বেতের আসবাবপত্র তৈরি করা, তবে সেখান হতেই উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব শুরু হবে। এর কারণ হলো, তাকে অবশ্যই কি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করতে হবে, কে কোন ধরনের পণ্য উৎপাদন করবে, কে তা বিক্রয় করবে, আসবাবপত্র তৈরির কাঁচামালই বা কে ক্রয় করবে ইত্যাদি বিষয়ে তাকে অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কার্য সম্পাদনও করতে হবে। আর এ সবই হলো উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কাজ। বর্তমান বৃহদায়তন উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হল:
১. উৎপাদন জটিলতা মোকাবেলা (To face the complexity of production): বর্তমান বৃহদায়তন উৎপাদনের এ যুগে উৎপাদন কার্যক্রম জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এরূপ জটিল পরিস্থিতিতে উৎপাদন কার্য সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্যই মূলত উৎপাদন ব্যবস্থাপনার উদ্ভব হয়েছে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এক্ষেত্রে নানান কৌশল ও নিয়ম-নীতি প্রয়োগ করে উৎপাদনের ক্ষেত্রে সৃষ্ট এরূপ জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
২. উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন (To prepare production planning): পণ্যের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুযায়ী উৎপাদন কার্যক্রম গ্রহণ করার পরিকল্পনাকে উৎপাদন পরিকল্পনা বলে। উৎপাদন ব্যবস্থাপক এক্ষেত্রে দ্রব্যের চাহিদা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরূপ পরিকল্পনা মোতাবেক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হলে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যার্জন ত্বরান্বিত হয়। তবে প্রণীত পরিকল্পনা যেন সঠিক ও সময়োপযোগী হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. পণ্য বা দ্রব্যের নকশাকরণ (Product or service designing): যে কোনো পণ্য উৎপাদনের পূর্বে তার নকশাকরণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ পরবর্তীতে এরূপ নকশার আলোকেই 'পণ্য তৈরি করা হয়। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে পণ্য বা সেবার নকশা প্রণয়ন করে থাকে। পণ্যের নকশা যদি আধুনিক হয় এবং তা ক্রেতাদের মন জয় করতে পারে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যার্জন সহজ হয়।
৪. উপযুক্ত উৎপাদন পদ্ধতি নির্বাচন (Selection of proper production method): উৎপাদন পদ্ধতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পদ্ধতিতে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক দিক বিচারে কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলকর হবে, সে সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। উৎপাদনের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এনে সঠিক উৎপাদন পদ্ধতি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে, উৎপাদন ব্যবস্থাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance of machineries): কলকব্জা ও যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনাকেই করতে হয়। যন্ত্রপাতির সঠিক ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের দ্বারা এ সকল উপকরণাদির কার্যক্ষমতা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব। যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ারসমূহ উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও মেরামত সংক্রান্ত কাজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অন্তর্গত।
৬. গুণগত মানের পণ্য উৎপাদন (Production of quality product): বর্তমানে প্রতিযোগীদের। মোকাবেলা করার জন্য উন্নত মানের পণ্য একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়। এরূপ উন্নত মানের পণ্য অর্থাৎ গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপক ব্যাপক ভূমিকা রাখে। উৎপাদন ব্যবস্থাপক প্রতিযোগিতামূলক পণ্য মান নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে, ফলে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
৭. অপচয় ও ব্যয় হ্রাস (To reduce wastage and cost): সঠিক ও উপযুক্ত উৎপাদন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন বিভাগের অপচয় ও ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপক উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করে; এতে শ্রম, সময় এবং অর্থের অপচয় হ্রাস পায়। আবার উৎপাদন ব্যবস্থাপকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস পায়।
৮. সমন্বয়সাধন (Coordination): উৎপাদন ব্যবস্থাপক, উৎপাদন বিভাগের প্রধান সমন্বায়কের ভূমিকা পালন করেন। তিনি উৎপাদন বিভাগের বিভিন্ন উপবিভাগ, নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মী এবং কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকেন। এরূপ সমন্বয়ের মাধ্যমে উৎপাদন কার্য সঠিক ও কাম্য পরিমাণে স্পোদন করা সম্ভব হয়। তাছাড়া উৎপাদন বিভাগের সাথে বিক্রয় বিভাগ, ক্রয় বিভাগ, মওজুদ বিভাগ ইত্যাদির মধ্যেও সমন্বয় সাধন করা অত্যন্ত জরুরি। এ কাজটিও একজন উৎপাদন ব্যবস্থাপকই করে থাকেন।
৯. মান নিয়ন্ত্রণ (Quality control): বর্তমান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পণ্যের মান ঠিক রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য মানের অবনতি হয়, তাহলে ঐ পণ্য বা প্রতিষ্ঠান হতে ক্রেতারা অতি সহজেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মান নিয়ন্ত্রণের এ কাজটি উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
১০. উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ (Production control): উৎপাদন পরিকল্পনার ন্যায় উৎপাদন নিয়ন্ত্রণও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ লক্ষ্যে তিনি উৎপাদন পরিকল্পনার সাথে সম্পাদিত কার্যের তুলনা করে কোনো বিচ্যুতি হলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
১১. মওজুদ নিয়ন্ত্রণ (Inventory control): মওজুদমাল নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অধিক পণ্য মওজুদ থাকলে একদিকে যেমন অপচয় বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কম পণ্য মওজুদ থাকলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি পড়তে পারে। তাই মওজুদের পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রাখতে তা নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। আর মওজুদ পণ্য নিয়ন্ত্রণের কাজটি উৎপাদন ব্যবস্থাপকই করে থাকেন।
১২. উৎপাদন বাজেট প্রণয়নে সহায়তা (To help for preparing production budget): ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হবে, এসকল পণ্য উৎপাদনে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে এবং এ বাবদ ব্যয়িত অর্থ কোথা হতে সংগৃহীত হবে ইত্যাদি বিষয়ের বাজেটই হলো উৎপাদন বাজেট। বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে বাজেট প্রণয়নে বাজেট কমিটি থাকে। তাই বাজেট প্রণয়নে বিশেষ করে উৎপাদন বাজেট প্রণয়নে উৎপাদন ব্যবস্থাপক বাজেট কমিটিকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বাজেট প্রণয়নে সহায়তা করেন।
১৩. ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা (To help for taking purchase decision): পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করার প্রয়োজন পড়ে। ক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য ক্রয় বিভাগের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে সকল তথ্য বা উপাত্তের প্রয়োজন, উৎপাদন ব্যবস্থাপক তা সরবরাহ করে ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
১৪. পণ্য গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and development of product): বর্তমানে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে উৎপাদন ব্যবস্থাপক উৎপাদন কার্যক্রমের গবেষণা ও তার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। এরূপ গবেষণার ফলে প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন ও আধুনিক পণ্য বাজারে আনতে সক্ষম হয়, ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও সুখ্যাতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।
১৫. প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা (Servival in competition): বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদকগণ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য একদিকে যেমন প্রচার ও বিজ্ঞাপনের দিকে নজর দিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি পণ্যের ডিজাইন, পণ্যের মান ও পণ্য উন্নয়নের দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। আর এ সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরিশেষে বলা যায়, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম শাখা হিসেবে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা উপরে আলোচিত বিষয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আওতা | Scope of Production Management
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা হলো সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সেই অংশ যা পণ্য উৎপাদন, উৎপাদন তদারকি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করে। এদের অন্যতম হলো- উৎপাদন পরিকল্পনা, যন্ত্রপাতি বিন্যাস, উৎপাদন ইঞ্জিনিয়ারিং ও পণ্যের ডিজাইন, উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার এসকল কাজের মধ্যেই এর আওতা বিদ্যমান। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আওতা বা পরিধি নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. পণ্য নকশাকরণ (Product designing): উৎপাদন ব্যবস্থাপনার সর্বপ্রথম কাজ হলো উৎপাদিতব্য পণ্যের নকশাকরণ। যদিও কখনও কখনও পণ্যের নকশা প্রণয়নের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়, তবুও চূড়ান্ত নকশার অনুমোদন তাকেই দিতে হয়। কারণ নকশা সংক্রান্ত যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তার উপরই বর্তায়। তাই বলা যায়, পণ্যের নকশাকরণ উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কার্য আওতাভুক্ত।
২. উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন (Preparing production plan): সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূ উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনা বাস্তবসম্মত উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। পণ্যদ্রব্যের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ করে সে অনুযায়ী উৎপাদন কর্মসূচি গ্রহণ করাই হলো উৎপাদন পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে কোন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হবে, কি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা হবে, কখন উৎপাদন করা হবে ইত্যাদি সম্পর্কে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যবস্থাপকীয় এ কাজটিও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কার্য আওতাভুক্ত।
৩. উৎপাদন লজিস্টিকস (Production logistics): উৎপাদন কার্য আপনাআপনি সম্পাদিত হয় না। পরিকল্পনা মাফিক উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন হয়, যাদেরকে উৎপাদন লজিস্টিকস বলে। উৎপাদন লজিস্টিকস হলো- কাঁচামাল, কর্মী, যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য উপাদান যা উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজন। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা উৎপাদন লজিস্টিংস সংক্রান্ত কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।
৪. উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণ (To determine production method): বিভিন্ন পদ্ধতিতে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করা যায়। তবে সকল দিক বিবেচনায় কোন পদ্ধতিতে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল হবে তা উৎপাদন ব্যবস্থাপককেই নির্ধারণ করতে হয়। উৎপাদন পদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পণ্যের মান, শ্রম দক্ষতা, যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তির ব্যবহার, মূলধনের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
৫. মওজুদ নিয়ন্ত্রণ (Inventory control): মওজুদমাল নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অধিক পণ্য মওজুদ থাকলে একদিকে যেমন অপচয় বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে তেমনি কাক্ষিত মাত্রার চেয়ে কম পণ্য মওজুদ থাকলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি পড়তে পারে। তাই মওজুদের পরিমাণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে রাখতে তা নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। আর মওজুদ নিয়ন্ত্রণের কাজটি উৎপাদন ব্যবস্থাপকই করে থাকেন।
৬. মান নিয়ন্ত্রণ (Quality control): বর্তমান উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পণ্যের মান ঠিক রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কারণে যদি পণ্য মানের অবনতি হয়, তাহলে ঐ পণ্য বা প্রতিষ্ঠান হতে ক্রেতারা অতি সহজেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। মান নিয়ন্ত্রণের এ কাজটি উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৭. কর্মী নির্দেশনা (Direction to the worker): উৎপাদন বিভাগে কর্মরত শ্রমিক-কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করাও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আরেকটি কার্য আওতাভুক্ত বিষয়। এক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থাপক শুধুমাত্র নির্দেশ দিয়েই ক্ষ্যান্ত থাকেন না, কিভাবে কাজটি সম্পাদন করতে হবে তাও হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তিনি প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
৮. উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ (Production control): উৎপাদন পরিকল্পনার ন্যায় উৎপাদন নিয়ন্ত্রণও উৎপাদন ব্যবস্থাপনার কার্য আওতাভুক্ত বিষয়। এ লক্ষ্যে তিনি উৎপাদন পরিকল্পনার সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা করে কোনো বিচ্যুতি হলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উৎপাদন ব্যবস্থাপক এ কাজটি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের অন্যতম পদ্ধতিগুলো হলো- রুটিং, সিডিউলিং, ডিসপ্যাচিং, ফলোআপ ইত্যাদি।
৯. অনুকূল শিল্প সম্পর্ক রক্ষা (Maintaining positive industrial relations): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মী ও মালিক পক্ষের সম্পর্ককে শিল্প সম্পর্ক বলা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনুকূল শিল্প সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক শিল্প সম্পর্ক বিশেষ করে উৎপাদন বিভাগের শিল্প সম্পর্ক অনুকূল রাখতে উৎপাদন ব্যবস্থাপক বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই বলা যায়, অনুকূল শিল্প সম্পর্ক রক্ষা করা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আরেকটি অন্যতম কার্য আওতাভুক্ত বিষয়।
১০. কার্য গবেষণা (Work study): উৎপাদনের সাথে জড়িত বিভিন্ন উপায়-উপাদানগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে ন্যূনতম ব্যয়ে মানসম্মত পণ্য কিভাবে উৎপাদন করা যায়, তার পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া অনুসন্ধানই হলো কার্য গবেষণা। একজন উত্তম উৎপাদন ব্যবস্থাপক সর্বদা এরূপ কার্য গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
১১. যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance of machineries): কলকজা ও যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনাকেই করতে হয়। যন্ত্রপাতির সঠিক ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের দ্বারা এ সকল উপকরণাদির কার্যক্ষমতা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব। যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ারসমূহ উপযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ, স্থানান্তর ও মেরামত সংক্রান্ত কাজ উৎপাদন ব্যবস্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অন্তর্গত।
১২. উৎপাদন বাজেট প্রণয়নে সহায়তা (To help for preparing production budget): ভবিষ্যতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কী পরিমাণ পণ্য উৎপাদিত হবে, এসকল পণ্য উৎপাদনে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে এবং এ বাবদ ব্যয়িত অর্থ কোথা হতে সংগৃহীত হবে ইত্যাদি বিষয়ের বাজেটই হলো উৎপাদন বাজেট। বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে বাজেট প্রণয়নে বাজেট কমিটি থাকে। তাই বাজেট প্রণয়নে বিশেষ করে উৎপাদন বাজেট প্রণয়নে উৎপাদন ব্যবস্থাপক বাজেট কমিটিকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায়, উৎপাদন ব্যবস্থাপনার আওতা বা পরিধি বলতে মূলত তার কার্য আওতাকেই বুঝায়। একজন উৎপাদন ব্যবস্থাপক স্বীয় কাজের মাধ্যমে তার কার্য আওতাকে যে পর্যন্ত বর্ধিত করেন তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।