শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান অধ্যায় প্রশ্ন

১. শিল্পনীতি কী?
উত্তর: শিল্পখাত ও শিল্পোন্নয়ন এর সাথে রাষ্ট্র ও ব্যক্তির সম্পর্ক কীরূপ , দেশের আর্থ - সামাজিক উন্নয়নের সাথে শিল্প কীভাবে সম্পর্কিত— এ সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালাকে শিল্পনীতি বলা হয়।

২. ফার্ম কাকে বলে?
উত্তর: যে কারখানায় অনুসরণ উৎপাদন পদ্ধতির মাধ্যমে সংগৃহীত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে একটি দ্রব্য উৎপাদিত হয় তাকে ফার্ম বলে।

৩. শিল্প কী?
উত্তর: শিল্প হলো কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রাথমিক দ্রব্যকে মাধ্যমিক দ্রব্যে এবং মাধ্যমিক দ্রব্যকে চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া।

৪. কুটিরশিল্প কাকে বলে?
উত্তর: নিজ গৃহে পারিবারিক ভিত্তিতে স্বল্প মূলধন ও সহজলভ্য কাঁচামাল এবং ছোটখাটো সাধারণ যন্ত্রপাতির দ্বারা যে শিল্প পরিচালিত হয় তাকে কুটিরশিল্প বলে।

৫. প্রাথমিক শিল্প বলতে কী বোঝ?
উত্তর: যে শিল্পে প্রাথমিক দ্রব্যকে কারখানাভিত্তিক উৎপাদন প্রণালির মাধ্যমে মাধ্যমিক বা চূড়ান্ত দ্রব্যে রূপান্তর করা হয় তাকে প্রাথমিক শিল্প বলে।

৬. শিল্পের শ্রেণিবিন্যাস কাকে বলে?
উত্তর: আকার, মালিকানা, উদ্দেশ্য , অবস্থান ইত্যাদির ভিত্তিতে শিল্পকে ভাগ করাকে শিল্পের শ্রেণিবিন্যাস বলে।

৭. মাঝারি শিল্প কাকে বলে?
উত্তর: যে শিল্পকারখানায় বিশ জনের অধিক কিন্তু দুইশত ত্রিশ জনের কম শ্রমিক নিয়োগ করা হয় তাকে মাঝারি শিল্প বলে।

৮. বৃহৎ শিল্প কী?
উত্তর: যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বিপুল মূলধন , বহু সংখ্যক দক্ষ ও অর্থদক্ষ শ্রমিক , উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করে বেশি পরিমাণে দ্রব্য উৎপাদন করে সেগুলোকে বৃহৎ শিল্প বলে।

৯. হাইটেক শিল্প কী?
উত্তর: হাইটেক শিল্প বলতে , জ্ঞান ও পুঁজিনির্ভর , উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব এবং আইটি বা গবেষণা ও উন্নয়ননির্ভর শিল্পকে বোঝায়।

১০. ক্ষুদ্র শিল্প কী?
উত্তর: যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা এবং উদ্ভ প্রতিষ্ঠানে ২৫-৯৯ জন শ্রমিক কাজ করে , সেসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।

১১. অতি ক্ষুদ্র শিল্প কাকে বলে?
উত্তর: জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ লক্ষ টাকা থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠানে ১৬-৩০ জন বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে , তাকে অতি ক্ষুদ্র শিল্প বলে।

১২. নিয়ন্ত্রিত শিল্প কাকে বলে?
উত্তর: যেসব শিল্প প্রাকৃতিক / খনিজ সম্পদ ব্যবহার করে ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট তাদেরকে নিয়ন্ত্রিত শিল্প বলে।

১৩. মাইক্রো শিল্পী কী?
উত্তর: জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে এবং ১০ থেকে ২৪ জন বা তার চেয়ে কম শ্রমিক কাজ করে এমন শিল্পকারখানাকে মাইক্রো শিল্প বলে।

১৪. ভোগ্য শিল্প কাকে বলে?
উত্তর: যে সকল শিল্প কারখানা সরাসরি মানুষের ভোগ উপযোগী দ্রব্য তৈরি করে তাকে ভোগ্য শিল্প বলে।

১৫. রপ্তানিমুখী শিল্প কী?
উত্তর: যেসব শিল্পে উৎপাদিত পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা যায় সেগুলোকে রপ্তানিমুখী শিল্প বলে।

১৬. বাংলাদেশে প্রথম স্থাপিত পাটকল কোনটি?
উত্তর: বাংলাদেশে প্রথম স্থাপিত পাটকল হলো আদমজী জুট মিল'।

১৭. আমদানি বিকল্প শিল্প কী?
উত্তর: আমদানিযোগ্য দ্রব্য অন্য দেশ থেকে আমদানি না করে, দেশে উৎপাদনের জন্য যে শিল্প গড়ে তোলা হয়, তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে।

১৮. সংরক্ষণ শিল্প কী?
উত্তর: সরকারি নির্দেশের মাধ্যমে যে সক শিল্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষিত রাখা প্রয়োজন এবং যেসব শিল্প স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হিসেবে সরকারি বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষিত যেসব শিল্পকে সংরক্ষিত বা সংরক্ষণ শিল্প বলে।

১৯. সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক কোন ধরনের শিল্প?
উত্তর: সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হাইটেক শিল্পের অন্তর্গত।

২০. সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব কী?
উত্তর: কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সরকারি খাত ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণ করাতে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব ( Public Private Partnership PPP ) বলে।

শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান  অনুধাবনমূলক প্রশ্ন


১. শিল্প ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাংলাদেশের শিল্প সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে পরিচালিত হয়। সাধারণত মৌলিক ও ভারী শিল্পগুলো সরকারি খাতে পরিচালিত হয়। তাছাড়া সংরক্ষিত শিল্পগুলো জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তাই এগুলো সরকারি খাতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে পরিচালিত শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবামূলক শিল্প। তবে বাংলাদেশের কুটিরশিল্প সাধারণত স্বল্প মূলধন, সহজলভ্য কাঁচামাল ও সাধারণ যন্ত্রপাতির সাহায্যে পারিবারিক পরিবেশে পরিচালিত হয়। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের শিল্প ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।

২. শিল্পায়নের মাধ্যমে কীভাবে একটি দেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করে।
উত্তর: দেশে শিল্পায়ন ঘটলে দেশটি এমন কতগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, যা অতীতে আমদানি করতে হতো। দেশে বড় বড় কল-কারখানার প্রসার ঘটলে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে, যার ফলে সেক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমে। দেশে শিল্প বিকশিত হলে। প্রতিরক্ষার সাজ-সরঞ্জাম দেশেই উৎপাদন করা যায়, বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয় না। তাই বলা যায় , শিল্পায়নের মাধ্যমে একটি দেশ বিভিন্ন উপায়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করে।

৩. শিল্প উন্নয়ন কীভাবে কৃষির উন্নয়নে সহায়তা করে।
উত্তর: উন্নয়নশীল দেশে কৃষি ও শিল্প এক অপরের ওপর নির্ভরশীল। কৃষির আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার , ডীটনাশক প্রভৃতির উৎপাদন ও যোগান শিল্পোয়নের ওপর নির্ভরশীল। শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে শিল্পজাত দ্রব্যাদি রপ্তানি করলে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা যন্ত্রপাতি আমদানি করা যায়। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করলে ভূষিজাত পণ্যের অপচয় রোধ হবে। শিল্পোন্নয়নের ফলে কৃষিজাত কাঁচামালের চাহিদা বাড়লে কৃষকদের আয় বাড়বে; তখন তারা কৃষিতে অধিকতর পরিমাণে পুঁজি বিনিয়োগ।

৪ . ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দেশে সুষম উন্নয়ন ঘটায় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প গ্রামাঞ্চলে প্রসার লাভ করলে সুষম উন্নয়ন সম্ভব। কারণ বৃহৎ শিল্প শুধু শহরকেন্দ্রিক স্থাপনের ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের প্রধান বৃহৎ শিল্পগুলো হলো- পাট শিল্প, বস্ত্ৰ শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প প্রভৃতি। এসব শিল্প সাধারণত শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ফলে গ্রামের সাধারণ পরিবারের লোকজনের এসব শিল্পে কাজ করার সুযোগ খুবই কম থাকে। এ দিক থেকে চিন্তা করলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের কারখানাগুলো গ্রামাঞ্চলে ও শহরের উপকণ্ঠে স্থাপিত হয়ে থাকে। যা অধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে । তাই বলা হয়ে থাকে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সুষম উন্নয়ন ঘটায়।


৫. ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য লেখা।
উত্তর: কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো পরিচালনা পদ্ধতি ও মূলধন সংগ্রহ। কুটিরশিল্প পারিবারিক মালিকানায় পরিচালিত হয়। যেখানে ক্ষুদ্রশিল্প পারিবারিক মালিকানা ছাড়াও অংশীদারি অথবা সমবায়ভিত্তিক মালিকানায় পরিচালিত হয়। এছাড়া, কুটিরশিল্পের প্রয়োজনীয় পুঁজি পারিবারিক উৎস থেকে আসলেও ক্ষুদ্রশিল্পে তা মালিক ছাড়াও বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থা থেকে সংগৃহীত হতে পারে। তাছাড়া, কুটিরশিল্পে হালকা যন্ত্রপাতি ও দেশজ কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্ষুদ্রশিল্পে আধুনিক ও ভারী যন্ত্রপাতি ও দেশি-বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়।

৬ . ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দেশে সুষম উন্নয়ন ঘটায়— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প গ্রামাঞ্চলে প্রসার লাভ করলে সুষম উন্নয়ন সম্ভব । কারণ বৃহৎ শিল্প শুধু শহরকেন্দ্রিক স্থাপনের ফলে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের প্রধান বৃহৎ শিল্পগুলো হলো-পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, কাগজ শিল্প প্রভৃতি। এসব শিল্প সাধারণত শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে হলে গ্রামের সাধারণ পরিবারের লোকজনের এসব শিল্পে কাজ করার সুযোগ খুবই কম থাকে। এ দিক থেকে চিন্তা করলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের কারখানাগুলো গ্রামাঞ্চলে ও শহরের উপকণ্ঠে স্থাপিত হয়ে থাকে । যা অধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই বলা হয়ে থাকে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সুষম উন্নয়ন ঘটায়।

৭. কীভাবে কুটিরশিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প হতে পৃথক করা যায়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো পরিচালনা পদ্ধতি ও মূলধন সংগ্রহ। কুটিরশিল্প পারিবারিক মালিকানায় পরিচালিত হয়। যেখানে ক্ষুদ্রশিল্প পারিবারিক মালিকানা ছাড়াও অংশীদারি অথবা সমবায়ভিত্তিক মালিকানায় পরিচালিত হয় । কুটিরশিল্পে পুঁজি পারিবারিক উৎস থেকে আসলেও ক্ষুদ্রশিল্পে তা মালিক ছাড়াও বিভিন্ন ঋণদানকারী সংস্থা থেকে সংগৃহীত হতে পারে। কুটিরশিল্পে হালকা যন্ত্রপাতি ও দেশজ কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্ষুদ্রশিতে আধুনিক ও ভারী যন্ত্রপাতি ও দেশি - বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। কাজেই বলা যায়, উপরে উল্লিখিত পার্থক্যগত বৈশিষ্ট্যের কারণে কুটিরশিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প হতে পৃথক করা যায়।

৮. নন - ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের শিল্প কী কী?
উত্তর: নন - ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের প্রধান প্রধান শিল্পগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং খাত কৃষিভিত্তিক কর্মকাণ্ড যেমন: এগ্রো বেইজড ও এগ্রো-প্রসেসিং শিল্প, হটিকালচার , ফুলচাষ ও ফুল বাজারজাতকরণ, পর্যটন শিল্প, হোটেল ব্যবস্থাপনা, টেলিকমিউনিকেশন, কম্পিউটার সফটওয়্যার হাউজিং, ফানিচার, বন শিল্প , ফটোগ্রাফি, প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং, কোল্ড স্টোরেজ, কন্টেইনার সার্ভিস প্রভৃতি।

৯. 'শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান পরিপুরক' - ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান উভয়ই একে অপরের পরিপূরক । বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। এরূপ অতিরিক্ত বেকারত্বের মোকাবিলায় অধিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র শিল্পকারখানা। কেননা শিল্পে যে পরিমাণ কমসংস্থান হয় কৃষি বা সেবাখাতে ততটা হয় না। তাই বলা যায় , শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান পরিপূরক।

১০. চামড়া শিল্প অনুন্নতির কারণ কী?
উত্তর: বাংলাদেশে চামড়া শিল্পে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কিছু সমস্যা থাকার কারণে এদেশে এ শিল্পটির বিকাশ আশানুরূপ নয়। বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের অধিকাংশই আমদানি করতে হয়। এতে এ শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। আবার কাঁচা চামড়া গুদামজাতকরণের জন্য প্রচুর চামড়ায় আড়ত থাকা দরকার , যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অন্যদিকে, কোরবানির সময় চামড়া ব্রুয় ও গুদামজাত করার জন্য চামড়া ক্রয়কারী সংস্থাগুলোর প্রচুর ঋণের প্রয়োজন হয় । কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয় । আর এসবই চামড়া শিল্পের অনুন্নতির কারণ।

১১. রপ্তানিমুখী শিল্পের উল্লেখযোগ্য দুটি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রপ্তানিমুখী শিল্পের উল্লেখযোগ্য দুটি বৈশিষ্ট্য হলো— রপ্তানিমুখী শিল্পে উৎপাদিত পণ্য কেবল বিদেশে রপ্তানি করা হয় । এ শিল্পে উৎপাদন করা হয় বিদেশের বাজারে বিক্রির জন্য এজন্য এ শিল্পে উৎপন্ন দ্রব্যের বাজার অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত হয়। তাছাড়া , রপ্তানিমুখী শিল্প দেশি-বিদেশি কাঁচামাল , যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে । কেবল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য এ শিল্প স্থাপিত হয়।

১২. পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সম্প্রতি উন্নত জাতের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের উদ্ভাবন, পাটের বিকল্প পণ্য ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে নতুন করে পাট শিল্পের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে । পাটের বিকল্প ব্যবহার আবিষ্কৃত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা কমে গিয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে আবার নতুন করে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে । কারণ সাম্প্রতিক সময়ে পাট দ্বারা বিভিন্ন উন্নত ও রুচিশীল পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- পাটের তৈরি ব্যাগ, জুতা, মাদুর ইত্যাদি। তাছাড়া, এ সকল পণ্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। তাই বলা যায়, পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

১৩. আমদানি বিকল্প শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে।-ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আমদানি বিকল্প শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভোগ্যদ্রব্য ও মূলধনী দ্রব্য আমদানি করে। এসব বিদেশি দ্রব্যের দাম অধিক বলে তা আমদানি করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু যদি এসব দেশ নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে ঐসব দ্রব্য নিজেরাই উৎপাদন করে , তবে সেক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার অনেক সাশ্রয় হবে।

১৪. আমদানি বিকল্প শিল্পের ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কোনো দেশ বিদেশ থেকে যে সমস্ত দ্রব্য আমদানি করে, সে সমস্ত দ্রব্য নতুন করে আমদানি না করে নিজস্ব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনায় দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনের লক্ষ্যে শিল্প স্থাপন করলে ঐ সমস্ত শিল্পকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে। বিশ শতকের পঞ্চাশ - এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার কতিপয় দেশ সর্বপ্রথম আমদানি বিকল্প শিল্পনীতি গ্রহণ করে। মূলত লেনদেন ভারসাম্যে প্রতিকূলতা , বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের জন্যই আমদানি বিল্প শিল্পনীতি গ্রহণ করা হয়।

১৫. সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত শিল্প কি একই ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত শিল্প এক নয়। সরকারি নির্দেশের মাধ্যমে যেসব শিল্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষিত রাখা প্রয়োজন এবং যেসব শিল্প স্পর্শকাতর হিসেবে সাধারণত শধু সরকারি বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষিত সেগুলোকে সংরক্ষিত শিল্প বলে সংরক্ষিত শিল্পসমূহ হলো অস্ত্রশস্ত্র সামরিক সরঞ্জাম পারমাণবিক শক্তি, টাকশাল ইত্যাদি । অন্যদিকে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি হুমকি হতে পারে এমন শিল্পকে নিয়ন্ত্রিত শিল্প বলে । আন্ডারগ্রাউন্ড রেল , বিশেষ | অর্থনৈতিক অঞ্চল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত শিল্পের উদাহরণ।

১৬. আমদানি নির্ভর শিল্প কেন উন্নতা?
উত্তর: বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন পরিচালিত হয় বলে আমদানি নির্ভর শিল্পসমূহ উন্নত হয়ে থাকে। আমদানি নির্ভর শিল্পসমূহের ক্ষেত্রে সাধারণত বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে উৎপাদন পরিচালনা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে এসকল শিল্প স্থাপনে অন্যান্য শিল্প অপেক্ষা বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয়। আবার, আমদানি নির্ভর শিল্প আধুনিক ও উন্নত অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির সাহায্যে বিশাল আকারে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করে। এসব শিল্পের পণ্য দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়। এ কারণে এসব শিল্পে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নত হয়ে থাকে।

১৭. দেশের উন্নয়নে আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন করা প্রয়োজন কেন?
উত্তর: দেশের উন্নয়নের জন্য আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন করা হলে লেনদেন ভারসাম্যে প্রতিকূলতা ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়। কোনো দেশ যেসব দ্রব্য বিদেশ হতে আমদানি করে সেসব দ্রব্য আমদানি না করে নিজস্ব প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনায় নিজ দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যে শিল্প করে তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে। এ ধরনের শিল্প শিল্প বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা পায়। ফলে বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পায়। তাই, দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন প্রয়োজন।


১৮. বাংলাদেশের সংরক্ষিত শিল্পসমূহ উল্লেখ করো।
উত্তর: দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত শিল্প সংরক্ষিত শিল্প হিসেবে বিবেচিত সরকারি নির্দেশের মাধ্যমে যেসব শিল্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষিত রাখা প্রয়োজন এবং যেসব শিল্প স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হিসেবে সরকারি বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষিত , সেসব শিল্পকে সংরক্ষিত শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সংরক্ষিত শিল্পসমূহ হলো:
১. অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি,
২. পারমাণবিক শক্তি
৩. সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও টাকশাল
৪. বনায়ন ও সংরক্ষিত বনভূমির সীমানায় যান্ত্রিক আহরণ ইত্যাদি।

১৯. কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে PPP- এর ভূমিকা কী?
উত্তর: পিপিপির আওতায় প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগ কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পিপিপির মাধ্যমে বিপুল পুঁজির সমাবেশ ঘটে এবং সৃষ্টি হয় বহুমুখী ও সম্প্রসারিত প্রতিষ্ঠান। এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগ কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে একটি দেশে সংগত কারণেই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় এবং বেকারত্বের হার হ্রাস পায়।

২০. সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব শিল্পায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) শিল্পায়নের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় মূলধন সংকট থাকায় বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে PPP- এর আওতায় বৃহদায়তন শিল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন খুবই সহজ হয় । কারণ উভয়ের অংশীদারিত্বে সহজেই পর্যাপ্ত পরিমাণ মূলধন সরবরাহ করা যায়। তাছাড়া ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা কাটিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গতিশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় । এতে দেশে শিল্পায়নের গত দ্রুততর হয়।

২১. স্বনির্ভরতা অর্জনে শিল্পায়ন জরুরি কেন?
উত্তর: উপযুক্ত শিল্পায়নের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে থেকে মুক্ত হয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ শিল্পজাতদ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এজন্য আমাদের বিপুল অঙ্কের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়ে থাকে। দেশকে শিল্পায়িত করা গেলে প্রয়োজনীয় শিল্পজাত প্রব্যাদি স্থানীয়ভাবেই উৎপাদন করা সম্ভব হবে। তাই শিল্পায়নের মাধ্যমে নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে শিল্পদ্রব্য উৎপাদন করলে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। এতে পর্যায়ক্রমে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে । এ কারণেই দেশের স্বনির্ভরতা অর্জনে শিল্পায়ন জরুরি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url