আইএসও কি?

প্রত্যেকে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে নিজ দেশের মানদণ্ড অনুযায়ী। কিন্তু বর্তমান সময়ে পণ্য বা সেবার বাজার একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যে নেই।

বিশেষ উ করে মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্য বা সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের হওয়া প্রয়োজন।

অন্যথায়, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের জন্য জটিল হয়ে পড়ে। এজন্য ১৯৪৭ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (International Organization for Standardization or ISO)
আইএসও কি

ISO কি?


ISO হচ্ছে একসেট মানদণ্ড, যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান পণ্য বা সেবার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে। এ মান কর্মসূচির আওতায় বিশেষজ্ঞগণ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ও অন্যান্য কার্যক্রম পরীক্ষার পর সনদ দেন।

ISO-এর পূর্ণাঙ্গ সার্টিফিকেট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ ১৮ মাস সময় লাগে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানকে কতগুলো প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে চলতে হয়।

এ সনদ ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে পরিদর্শকের মাধ্যমে নিরীক্ষা করাতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠান ISO-এর সনদভুক্ত হলে ক্রেতারা তার মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে।

অতএব, প্রতিষ্ঠান, পণ্য, সেবা, তথ্য, পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ে গুণগত মান নির্ধারণ করার আন্তর্জাতিক মান সনদ প্রদানকারী সংস্থা হলো ISO।

ISO-এর অফিসিয়াল ভাষা তিনটি- ইংরেজি, ফরাসি ও রুশ। বর্তমানে এর সদস্য ১৬৫টি রাষ্ট্র। ১৯৮৭ সালে 'ISO ৯০০০' নামে মান সনদ নির্দিষ্ট করে সর্বপ্রথম প্রকাশ করা হয়।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ISO মান সনদ দিয়ে থাকে। যেমন- খাদ্য, পানি, সেবা, জলবায়ু, জ্বালানি শক্তি প্রভৃতি। এসব ক্ষেত্রে যে ISO মান সনদ দেয় তন্মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো-

 
মান সনদের নাম বিষয়সমূহ
ISO 9000 গুণগত মান ব্যবস্থাপনা (TQM)
ISO 14000 পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা
ISO 1600 অভ্যন্তরীণ বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ
ISO 2300 তথ্যপ্রযুক্তি ও মাল্টিমিডিয়া মান নিয়ন্ত্রণ
ISO 26000 সামাজিক দায়বদ্ধতা
ISO 27001 তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা
ISO 31000 ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
ISO 50001 শক্তি ব্যবস্থাপনা

আইএসও-এর গুরুত্ব | Importance of ISO


বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আইএসও সনদ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। কারণ আইএসও সনদ পেলে প্রতিষ্ঠান নিম্নোক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে-

ক্রেতাদের আস্থা ও সুনাম অর্জন (Achieve customers' loyalty and goodwill): সচেতন ক্রেতারা আইএসও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করে ও এর পণ্যের ওপর আস্থা রাখে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়ে। ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য কিনে।

সময়মতো পণ্য সরবরাহ (On time delivery): 150 সার্টিফিকেট প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফরমায়েশ অনুযায়ী গুণগত মানের পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে। তাছাড়া, এরূপ প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ক্ষমতার অতিরিক্ত ফরমায়েশ নেওয়া হয় না। ফলে সময়মতো পণ্য উৎপাদন করে সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

মুনাফা বৃদ্ধি (Maximizing profit): সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার ওপর গ্রাহকের আস্থা সৃষ্টি হয়। এজন্য গ্রাহকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এতে বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বাড়ে।

পরিচালনা ব্যয় কম (Lower operation cost): এ ব্যবস্থায় সার্বিক মান ব্যবস্থাপনার আওতায় পণ্য ও সেবা উৎপাদন করা হয়। এতে অপ্রাসঙ্গিক কোনো খরচ হয় না। এতে কম পরিচালন ব্যয়ে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এভাবে ISO-এর সুবাদে পণ্য ও সেবার উৎপাদন ব্যয় কম হয়।

ব্যবসায় নির্বাচন (Business selection): আইএসও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূষ তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও উপকরণের জন্য সাধারণত আইএসও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকেই নির্বাচন করে থাকে। এভাবে তারা একে অপরের সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়।

নমনীয়তা (Flexibility): ISO সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে গুণগত মানের পণয় ও সেবা সরবরাহে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠান যেকোনো ধরনের পরিবর্তন মেনে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারে।

প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা (Competitive advantages): ISO সনদধারী প্রতিষ্ঠান অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে তুলনামূলক মানদন্ডে এগিয়ে থাকে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়।

প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা (Process management): এক্ষেত্রে পণ্য ও সেবার ডিজাইন, পরিচিতি, উৎপাদন ও সরবরাহসহ সব ধরনের কার্যকারিতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এতে পণ্যের মান ব্যবস্থাপনা থাকে।

গ্রাহক মনোযোগ ও সন্তুষ্টি (Customers focus and satisfaction): এক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় পণ্য উৎপাদন করা হয়। এতে গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা সহজ হয়। ফলে গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ে।

অহেতুক পরীক্ষা কমা (Reducing unnecessary test): ISO সনদ প্রাপ্তির ফলে প্রতিষ্ঠান অনেক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা বা টেস্ট থেকে পরিত্রাণ লাভ করে। এতে খরচ কমে। ফলে মুনাফার পরিমাণ বেড়ে যায়।

সময় নিয়ন্ত্রণ (Time control): এর সুবাদে প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি (Test Method) কমে। ফলে পণ্য চক্র সময় (Product Cycle Time) কমে যায়। অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন করা সহজ হয়। এর কারণে প্রতিষ্ঠানে ওভার টাইম প্রবণতা কমে যায়। সময়মতো পণ্য সরবরাহ সহজ হয়।

অতএব বলা যায়, আন্তর্জাতিক মানের সনদ হিসেবে আইএসও'র সুফল প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বাইরে, এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। তাই প্রতিষ্ঠানকে উত্ত সনদ প্রাপ্তি ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

মান নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা| Role of ISO Determine Quality


সাধারণত দেশের অভ্যন্তরে বিক্রয়ের জন্য স্বদেশীয় মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে পণ্য বা সেবার বাজার একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমার মধ্যে সীমাবন্ধ নয়। বিশেষ করে মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্য বা সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। পণ্য বা সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের না হলে আন্তর্জাতিক বাজারে তা বিক্রয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এক দেশের নির্ধারিত মান অন্য দেশের ক্রেতারা মেনে নিতে নাও পারে। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে ১৯৪৭ সালে International Organization for Standardisation বা ISO গঠিত হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ISO একসেট মানদণ্ড ISO উদ্ভাবন করেছে, যার নাম ISO 9000। এ মানদণ্ড আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাছাড়া পরিবেশ সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের জন্য উদ্ভাবিত হয় ISO 14000 নামের নতুন মান সনদ। মান নির্ধারণে এদু'টি সংস্থার ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. ISO 9000 মান সনদ: ISO 9000 হলো একসেট মানদণ্ড, যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান পণ্য বা সেবার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করে। এটি মান কর্মসূচির একটি সনদ, যা এর বিশেষজ্ঞরা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম পরীক্ষার পর প্রদান করেন। এ সনদের জন্য প্রতিষ্ঠানকে কতকগুলো প্রয়োজনীয় শর্ত মেনে চলতে হয়। সনদ প্রাপ্তির পর ISO 9000 হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নাম তালিকাভুক্ত হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান ISO 9000 হিসেবে তালিকভুক্ত হলে ক্রেতারা এর মান সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা অর্জন করে। ISO 9000 মানদ- অনুযায়ী কোনো পণ্যের মানই সুনির্দিষ্ট নয়। বরং ক্রেতা যা দাবী করে সেটিই পণ্যের মান। উৎপাদককে তাই সব সময় ক্রেতার আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করার জন্য কাজ করতে হয়। 150 9000 প্রকৃতপক্ষে ৫টি সনদ দ্বারা গঠিত। এগুলো হলো- ISO 9000, ISO 9001, ISO 9001, ISO 9003, এবং ISO 9004 1

  • ISO 9000 হচ্ছে একটি পরিপ্রেক্ষিত দলিল (Overview documents) যা অপরাপর মানদণ্ডকে নির্বাচনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।
  • ISO 9001 এমন একটি মানদণ্ড যা মান সংক্রান্ত ২০টি দিকের উপর দৃষ্টিপাত করে। এ দিকগুলো হলো- ডিজাইন, উৎপাদন, স্থাপন এবং সেবা পণ্য। এর সাথে যে বিষয়গুলো যুক্ত থাকে তা হলো- ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব, মান ব্যবস্থার দলিলপত্র, ক্রয়, পণ্য ডিজাইন, পরিদর্শন, প্রশিক্ষণ এবং সংশোধনমূলক কার্যক্রম।
  • ISO 9002 মানদণ্ড মূলত ISO 9001 এর মতই। যে সকল কোম্পানি ডিজাইন কাজের সাথে যুক্ত বা ক্রেতাদের ডিজাইন সংক্রান্ত সেবা প্রদান করে সে সকল কোম্পানির জন্য এই মানদণ্ড প্রযোজ্য।
  • ISO 9003 পরিধির দিক দিয়ে খুবই সীমিত এবং এটি শুধু উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর মনোযোগ দেয়।
  • ISO 9004 অন্যান্য মানদণ্ড ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে।


ISO 9000 সনদ কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য যে সকল গুরুত্ব বহন করে তা নিম্নরূপ-

পরীক্ষা পদ্ধতির সংখ্যা হ্রাস (Reduction in the number of test methods): ISO সনদ প্রাপ্ত হলে একটি প্রতিষ্ঠানে পণ্য বা সেবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতির সংখ্যা হ্রাস পায়।

পণ্য চক্র সময় হ্রাস (Drop in the product cycle time): ISO সনদ অর্জন এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সব শর্ত মেনে চলতে হয় তাতে পণ্য চক্র সময় অনেক কমে যায়।

অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন (Elimination of unnecessary tasks): ISO সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজেই অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন করতে পারে। এই সনদ পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত পন্থায় কাজ করতে হয়, ফলে অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন করা সম্ভব, যা প্রতিষ্ঠানের কার্যিক ব্যয় হ্রাস করে। এতে অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জনের ফলে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যয়ও হ্রাস পায়।

ওভার টাইম হ্রাস (Reduction of overtime): ISO সনদ পেলে একটি প্রতিষ্ঠান তার পণ্য উৎপাদন বা সেবা কাজে কর্মীদের পূরোপুরিভাবে সম্পৃক্ত করে। তাছাড়া ধারাবাহিক মান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের শ্রমঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার করা হয়। ফলে কর্মীদের ওভার টাইম করার প্রয়োজন হয় না। এতে ওভার টাইম সংক্রান্ত ব্যয় হ্রাস পায়।

সময়মত পণ্য সরবরাহ (On time delivery): ISO সনদ, প্রতিষ্ঠানের সময়মত পণ্য সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরে।

২. ISO 14000: ISO 14000 একটি পরিবেশ বিষয়ক ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। ১৯৯৬ সালে International organization for standardization একসেট নতুন মানদণ্ড প্রবর্তন করে, যার নাম ISO 14000 ISO 14000 পরিবেশ সম্পর্কিত দায়িত্বের শর্তাবলির উপর ভিত্তি করে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদন (Performance) নির্ধারণ করে। প্রাথমিকভাবে, ISO 14000 একটি স্বেচ্ছামূলক দিকনির্দেশনা এবং সনদপত্র কর্মসূচি হিসেবে শুরু করা হয়। এ সনদপত্রের মানদণ্ড ৪টি প্রধান দিক চিহ্নিত করে। এগুলো হলো-

পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (Environmental management system): উৎপাদনের ক্ষেত্রে আউটপুটের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা থাকে। প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

পরিবেশগত কার্যসম্পাদন মূল্যায়ন (Environment performance evaluation): প্রতিষ্ঠানের কাজের ফলে পরিবেশের উপর কিরূপ প্রভাব পড়ছে তা মূল্যায়নের সঠিক ও সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা থাকতে হবে।

পরিবেশগত মোড়ক (Environmental labeling): প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যটি প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে না এরকম একটি মোড়ক ব্যবহার করা হয়।

জীবন চক্র নির্ধারণ (Life cycle assessment): এক্ষেত্রে পণ্যটি পরিবেশের উপর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে কি প্রভাব ফেলছে তা মূল্যায়ন করা হয়। পণ্যটি উৎপাদনকালে, ব্যবহারকালে বা ব্যবহার শেষ হওয়ার পর পরিবেশকে ক্ষতি করছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।

আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (আইএসও) বা সুবিধা| Advantage of ISO


বর্তমানে মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্য বা সেবার মান আন্তর্জাতিক মানের হওয়া উচিত। কারণ এক দেশের নির্ধারিত মান অন্য দেশের ক্রেতারা মেনে নিতে নাও পারে। এ সমস্যা সমাধানে International organization for standardisation একসেট মানদণ্ড উদ্ভাবন করেছে, যার নাম ISO। নিম্নে ISO এর গুরুত্ব বা ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ গুরুত্ব | Internal benefits


সনদ লাভকারী প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম সম্পাদনে নানান সুযোগ-সুবিধা পায়, যা অভ্যন্তরীণ গুরুত্ব নামে পরিচিত। নিম্নে এ সকল গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১. পরীক্ষা পদ্ধতির সংখ্যা হ্রাস (Reduction in the number of test methods): ISO সনদ প্রাপ্ত হলে একটি প্রতিষ্ঠানে পণ্য বা সেবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতির সংখ্যা হ্রাস পায়। কারণ ISO সনদ প্রদানের শর্তানুযায়ী পণ্যের মান বলে দেওয়া হয়, তাই আলাদাভাবে পণ্য নিয়ে গবেষণা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার। প্রয়োজন হয় না।

২. পণ্য চক্র সময় হ্রাস (Reducing product cycle time): ISO সনদ অর্জন এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সকল শর্ত মেনে চলতে হয় তাতে পণ্য চক্র সময় অনেক কমে যায়। পণ্য চক্র সময় কমে যাওয়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় এবং ঝামেলা অনেক কম হয়।

৩. অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন (Elimination unnecessary tasks): ISO সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সহজেই অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন করতে পারে। এই সনদ পাওয়ার জন্য পরিকল্পিত পন্থায় কাজ করতে হয়, ফলে অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জন করা সম্ভব, যা প্রতিষ্ঠানের কার্ষিক ব্যয় হ্রাস করে। এতে অপ্রয়োজনীয় কাজ বর্জনের ফলে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যয়ও হ্রাস পায়।

৪. ওভার টাইম হ্রাস (Reduction of overtime): ISO সনদ পেলে একটি প্রতিষ্ঠান তার পণ্য উৎপাদন বা সেবা কাজে কর্মীদের পুরোপুরিভাবে সম্পৃক্ত করে। তাছাড়া ধারাবাহিক মান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের শ্রমঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহার করা হয়। ফলে কর্মীদের ওভার টাইম করার প্রয়োজন হয় না। এতে ওভার টাইম সংক্রান্ত ব্যয় হ্রাস পায়।

৫. উৎপাদন ব্যয় হ্রাস (To reduce production cost): ISO সনদপ্রাপ্ত কোম্পানির একদিকে যেমন গবেষণা ব্যয় হ্রাস পায় অন্যদিকে তেমনি অধিক বিক্রয়ের ফলে একক প্রতি উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস পায়। ফলে পণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয়ও কম হয়।

৬. পরিবর্তন মেনে নেওয়া (Acceptence to change): ISO সনদ প্রাপ্ত কোম্পানি পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেদের পরিবর্তন আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই কোনোরূপ দ্বিধাহীনভাবে তারা যেকোনো পরিবর্তনকে মেনে নেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানে নমনীয়তার গুণটি বিদ্যমান থাকে।

৭. স্বল্প পরিচালন ব্যয় (Low operating cost): ISO সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কাঠামো ও আইন-কানুনের আওয়ায় থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে কর্মীরা দক্ষ হয়ে উঠে এবং সকলেই যার যার কাজে আত্ম নিয়োগ করে। ফলে পরিচালন ব্যয় হ্রাস পায়।

বাহ্যিক সুবিধা বা গুরুত্ব | External benefits


অভ্যন্তরীণ সুবিধার পাশাপাশি ISO সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বাহ্যিক সুবিধা বিদ্যমান যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. সময়মত পণ্য সরবরাহ (On time delivery): ISO সনদ, প্রতিষ্ঠানের সময়মত পণ্য সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ ISO সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে যথাসময়ে পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

২. বিক্রয় বৃদ্ধি (Increse of sales): ISO সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্য মান নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে তেমন সন্দেহ থাকে না, তাই তারা নির্দ্বিধায় এরূপ প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করে। এতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বৃদ্ধি পায়।

৩. মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি (Profit increase): মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধিতেও ISO সনদ ব্যাপক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠানের একদিকে যেমন বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে তেমনি একক রাখে। এরূপ সনদের ফলে প্রতিষ্ঠানে প্রতি ব্যয় হ্রাস পায় ফলে মুনাফার পরিমাণ বাড়ে।

৪. প্রতিযোগিতায় সুবিধা অর্জন (Achieving advantage of competition): অন্যান্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ISO সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। কারণ এক্ষেত্রে ক্রেতা সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হয়।

পরিশেষে বলা যায়, ISO সনদ শুধুমাত্র পণ্য মানেরই দিক নির্দেশনা দেয় না, এর ফলে প্রতিষ্ঠানের অভ্যান্তরীণ ও বাহ্যিক বেশ কিছু সুবিধা অর্জন করা সম্ভব হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url