উৎপাদন ক্ষমতার ধারণা | Concept of Production Capacity

কোনো বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের মাত্রায় হলো উক্ত বিভাগ বা মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতা। তাই বলা যায়, উৎপাদন ক্ষমতা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তি বা বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ। উৎপাদন ক্ষমতার সাথে তিনটি বিষয় অবশ্যই জড়িত থাকে, এগুলো হল- সর্বোচ্চ উৎপাদন সামর্থ্য, সংখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন এবং নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কিত।

উৎপাদন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম বিষয় হলো- প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা। কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা খুব বেশি হলে একদিকে যেমন স্থায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা খুব কম হলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। তাই উৎপাদন ক্ষমতা এমন হওয়া উচিত যাতে তা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন মাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো, বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের মাত্রায় হলো উক্ত বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা। অন্যভাবে বলা যায়, উৎপাদন ক্ষমতা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তি বা বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ।

ব্যাপকভাবে বলা যায়, কোনো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ উৎপাদনের সামর্থ্য বা ক্ষমতা যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদনের পরিমাণ দ্বারা প্রকাশ করা হয় তাকে উৎপাদন ক্ষমতা বলে। উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে Lee J. Krajewski and Larry P. Ritzman (লি জে. ক্রাজেসকি এবং লেরি পি. রিজম্যান) বলেছেন,
উৎপাদন ক্ষমতা হলো একটি প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ উৎপাদনের হার।

এ সম্পর্কে আবার William J. Stevenson (উইলিয়াম জে. স্টিভেনসন) এর মত হলো,
একটি উৎপাদন ইউনিট সর্বোচ্চ যে মাত্রায় উৎপাদন করতে পারে তাকে উৎপাদন ক্ষমতা বলে।

উৎপাদনের পরিমাণকে উৎপাদন একক অথবা শতকরা হার অথবা মিটার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। উৎপাদন ক্ষমতা শুধুমাত্র পণ্যের ক্ষেত্রে হবে তা নয়, এটি সেবার জন্যও হতে পারে।

যেমন: কোনো খাবারের দোকান এক সংঙ্গে ১০০ জন লোককে খাবার পরিবেশন করতে পারে, এরূপ অবস্থায় উক্ত হোটেলের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১০০ জন। উৎপাদন ক্ষমতার সাথে তিনটি বিষয় জড়িত, এগুলো হল- সর্বোচ্চ উৎপাদন সামর্থ্য, সংখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন এবং নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কিত।

পরিশেষে বলা যায়, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তির বা বিভাগের বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ, যা সংখ্যা বা এককে প্রকাশ করা হয় তাকে উৎপাদন ক্ষমতা বলে।

এরূপ ক্ষমতা- উৎপাদন একক, শতকরা হার বা মিটারের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। উৎপাদন ক্ষমতার সাথে যে বিষয়গুলো জড়িত থাকে তা হলো- সর্বোচ্চ উৎপাদন সামর্থ্য, সংখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন এবং নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কিত।

উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্তের গুরুত্ব | Importance of Production Capacity Decision


উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা বিষয়ক সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উৎপাদন ক্ষমতার পরিমাপ, কাম্য উৎপাদন মাত্রা নির্ধারণ এবং তার যথাযথ ব্যবহারের উপর প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। তাই উৎপাদন সংক্রান্ত বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অপরিহার্য। উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্তের গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. সম্ভাব্য সামর্থ্য পরিমাপ (To measure potential ability): উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য উৎপাদন সামর্থ্য পরিমাপ করা যায়। উৎপাদনের সম্ভাব্য সামর্থ্য পরিমাপ করা গেলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কাজের গতিশীলতা আনায়ন করা সম্ভব হয়। আর উৎপাদন কাজের গতিশীলতা প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. উৎপাদন ক্ষমতার কাম্য ব্যবহার (To use optimum production capacity): উৎপাদন ক্ষমতার কাম্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এরূপ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উৎপাদনের এমন একটি পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়, যার ফলে উৎপাদনের প্রতিটি উপাদানের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত হয়। উৎপাদন ক্ষমতার কাম্য ব্যবহার করা গেলে উৎপাদনের প্রতিটি উপাদানের দক্ষতা নিশ্চিত করা যায়।

৩. লাভজনক উৎপাদন (Profitable production): পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে কখনও সর্বোচ্চ উৎপাদন এবং কখনও সর্বনিম্ন উৎপাদন করার প্রয়োজন হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন কার্য চালনা করা হলে লাভজনক উৎপাদন করা সম্ভব। আর লাভজনক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উৎপাদন ক্ষমতার সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. উৎপাদন ব্যয় হ্রাস (To reduce production cost): উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব। এরূপ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উৎপাদনের এমন একটি মাত্রা নির্ধারণ করা হয়, য়ে মাত্রায় উৎপাদন কার্য সম্পাদন করলে প্রতিটি উপাদানের ব্যয় হ্রাস পায়। আর উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়।

৫. পণ্য ও সেবার মান রক্ষা (To maintain quality of product and service): স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা অধিক মাত্রায় পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা হলে পণ্য বা সেবার মান নিম্নমুখী হতে পারে। আবার স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা কম মাত্রায় পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা হলে একক প্রতি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে পণ্যের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই পণ্য ও সেবার মান সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

৬. প্রতিযোগিতা মোকাবেলা (To face competition): প্রতিযোগিতাকে মোকাবেলা করা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য হয়। প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করার জন্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন করা জরুরি। কারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন করা হলে একদিকে যেমন পণ্যের মান বজায় থাকে অন্যদিকে তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও হ্রাস করা সম্ভব হয়।

৭. মওজুদ পরিকল্পনা (Inventory planning): উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্তের আলোকেই মওজুদ পরিকল্পনা। প্রণয়ন করা হয়। প্রতিষ্ঠান যদি খুব দ্রুততার সাথে পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হয় তাহলে কম মওজুদ রাখলেও চলে। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় মুহূর্ত যদি উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা না যায় তবে পূর্ব থেকেই বেশি পরিমাণে পণ্য মওজুদ করে রাখা প্রয়োজন। তাই প্রতিষ্ঠানে মওজুদের পরিমাণ কিরূপ হবে তা নির্ধারণের জন্য পূর্ব থেকেই উৎপাদন ক্ষমতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আবশ্যক।

৮. প্রাথমিক বিনিয়োগ (Initial investment): উৎপাদন ক্ষমতা কেমন হবে তার উপর প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেকাংশে নির্ভর করে। কারণ অধিক মাত্রায় উৎপাদন করা হলে আধুনিক ও উচ্চ মাত্রার যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনশক্তি দরকার। আর এরূপ যন্ত্রপাতি ও জনশক্তি সংগ্রহ করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয়।

৯. দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত (Long-term decision): উৎপাদন ক্ষমতা বিষয়ক সিদ্ধান্তটি দীর্ঘমেয়াদি। এ বিষয়ে একবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে তা সহজেই পরিবর্তন করা যায় না। তাই উৎপাদন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়' বিভিন্ন বিষয়কে বিবেচনায় আনা উচিত। দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়ার কারণে উৎপাদন ক্ষমতা বিষয়ক সিদ্ধান্ত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায়, কাম্য মাত্রায় উৎপাদন কার্য সম্পাদন করা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে মোট উৎপাদন ক্ষমতার কি পরিমাণ ক্ষমতা ব্যবহার করা হবে, এ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে উৎপাদন সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণে বিবেচ্য বিষয় | Considerable Factor for Determining Production Capacity


পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সঠিক মাত্রায় উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের মাধ্যমে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত উপায়-উপকরণের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। তবে উৎপাদন ব্যবস্থাপনাকে উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের এ সকল বিবেচ্য বিষয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. কারিগরি উপাদান (Technical factor): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত যন্ত্রপাতি, উৎপাদন প্রক্রিয়া, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান, বিশেষজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কারিগরি উপাদান গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠানের এরূপ কারিগরি উপাদান উৎপাদন ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। তাই উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণে কারিগরি উপাদানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

২. আর্থিক উপাদান (Financial factor): পুঁজি বা মূলধন ব্যবসায়ের অন্যতম একটি উপাদান। বিনিয়োগকৃত মূলধন ও মূলধন সংগ্রহের ক্ষমতা এর আর্থিক শক্তিকে ইঙ্গিত দেয়। যে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে যত বেশি শক্তিশালী সেই প্রতিষ্ঠান তত বেশি পরিমাণে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ উৎপাদন ক্ষমতার সাথে মূলধনের একটি ধণাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান।

৩. মানবীয় উপাদান (Human factor): যে কোনো উৎপাদনের ক্ষেত্রে মানবীয় উপাদানের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কারণ যত উন্নতমানের যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি ও কাঁচামাল থাকুক না কেন মানবীয় উপাদান অর্থাৎ জনশক্তির অনুপস্থিতিতে উৎপাদন কার্য চালানো আদৌ সম্ভব নয়। তাই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত জনশক্তির পরিমাণ কেমন আছে তার উপর ভিত্তি করে উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়।

৪. পণ্য বা সেবার প্রকৃতি (Nature of product or service): পণ্য ও সেবার প্রকৃতি, উৎপাদন ক্ষমতার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। প্রকৃতিগত কারণেই পণ্যটি যদি জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ ও সংরক্ষণযোগ্য না হয় তাহলে তা সতর্কতার সাথে কম পরিমাণে উৎপাদন করা উচিত। অন্যদিকে পণ্যটি যদি সাধারণ, ঝুঁকিহীন ও সংরক্ষণযোগ্য হয় তাহলে তা অধিক পরিমাণে উৎপাদন করা যেতে পারে।

৫. উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রকৃতি (Nature of production process): পণ্যের প্রকৃতির ন্যায় উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রকৃতিও উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হলে সেক্ষেত্রে কম সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করে অধিক পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব, অন্যদিকে উৎপাদন প্রক্রিয়া জটিল ও কঠিন হলে উৎপাদন কার্যক্রমে অধিক পরিমাণে জনবলের প্রয়োজন পড়ে। তাই উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বিবেচনা করা হয়।

৬. ব্যবস্থাপকীয় দক্ষতা (Managerial skills): প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা যদি দক্ষ হয় তাহলে তারা বৃহদায়তন কার্য প্রক্রিয়াকে অতি সহজেই পরিচালনা করতে পারে। এরূপ অবস্থায় উৎপাদন ক্ষমতা অধিক মাত্রায় নির্ধারণ করলেও তেমন সমস্যা হয় না। অন্যদিকে অদক্ষ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উৎপাদনের মাত্রা কম নির্ধারণ করা উচিত।

৭. অভ্যন্তরীণ উপাদান (Internal factor): একটি প্রতিষ্ঠানে অনেক অভ্যন্তরীণ উপাদান থাকে যেগুলোকে উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত। এ বিষয়গুলো হলো- সময়সূচি বা সিডিউলিং, উপকরণ ব্যবস্থাপনা, মানের নিশ্চয়তা, রক্ষণাবেক্ষণ নীতি, যন্ত্রপাতির ব্রেকডাউন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সময়সূচি ও উপকরণ ব্যবস্থাপনা উন্নত মানের হলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়লে অধিক হারে পণ্য বা সেবা উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

৮. বাহ্যিক উপাদান (External factor): প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের পাশাপাশি বাহ্যিক উপাদানগুলোও উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। বাহ্যিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে পণ্যের মান, উৎপাদনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধি, ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাব, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি। এ বিষয়গুলোকে বিবেচনায় এনে উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করা উচিত। পণ্য বা সেবার মানোন্নয়ন কিংবা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে উৎপাদন ক্ষমতা সীমিত রাখা উত্তম। আবার শ্রমিক সংঘের ভূমিকা ইতিবাচক হলে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

৯. বিপণন সামর্থ্য (Marketing ability): পণ্যসামগ্রী শুধুমাত্র উৎপাদন করলেই হবে না তা যথাসময়ে ক্রেতাদের নিকট বিক্রয়ও করতে হবে। তা না হলে মওজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তাই উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণের সময় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য বিপণন সামর্থ্য কিরূপ আছে, তাও বিবেচনা করতে হবে। বিপণন সামর্থ্যের যথাযথ ব্যবহার একক প্রতি বিক্রয় ব্যয়কে সর্বনিম্ন করে।

১০. ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা (Risk taking ability): ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নানান কারণেই ব্যবসায়ে এরূপ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করে। এরূপ ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা সকল প্রতিষ্ঠানের সমানভাবে থাকে না। তাই যে সকল প্রতিষ্ঠান অধিক পরিমাণে ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা রাখে সে সকল প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাত্রায় উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণ করতে পারে। অন্যথায় উৎপাদন ক্ষমতার মাত্রা কম নির্ধারণ করা উচিত।

পরিশেষে বলা যায়, উৎপাদন ক্ষমতা নির্ধারণে উপরোক্ত বিষয়গুলোকে বিবেচনায় এনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় এ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই একজন উৎপাদন ব্যবস্থাপককে এ বিষয়গুলো চিন্তা-ভাবনা করেই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url