উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের ধারণা | Concept of Usage of Production Capacity
উৎপাদন ক্ষমতা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তি বা বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ। তবে সকল সময় উৎপাদনের সর্বোচ্চ সীমায় উৎপাদনকার্য পরিচালিত হবে তা নয়। বিভিন্ন কারণে এ সীমায় উৎপাদনকার্য চালানো যায় না।
মনে করুন আপনার মোবাইল ফোন সেটের মেমোরি কার্ডের সংরক্ষণ ক্ষমতা ১৬ জিবি। তাই বলে আপনি কি সকল সময় ১৬ জিবি ডাটাই সেখানে সংরক্ষণ করেন? নিশ্চিয়ই নয়। কারণ আপনি জানেন, মেমোরি কার্ডের সংরক্ষণ ক্ষমতার পূরোটা ডাটা দিয়ে ভরাট করলে মোবাইল সেট স্লো হয়ে যায়।
আবার ধরেন, আপনার প্রাইভেট কার আছে। কারটির মাইল মিটারে লেখা আছে সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ২০০ কি. মি.। তাই বলে কি, গাড়িটি ২০০ কি. মি. বেগে চালাতে হবে? নিশ্চয়ই নয়। এরূপ নানান কারণে উৎপাদনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করা হয় না। এক্ষেত্রে সকল অবস্থায় উৎপাদনের কাম্য স্তরে উৎপাদন কার্য পরিচালনা করা উচিত।
অন্যদিকে কাম্য উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করলে একক প্রতি স্থায়ী ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানান জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ কারণে কোনো কারণে যদি এ সীমার চেয়ে কম উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা হয়, তাহলে উক্ত অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। আর উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার বলতে বুঝায়, মোট উৎপাদন ক্ষমতার ঐ অংশ যা প্রকৃতপক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, সকল দিক বিবেচনা করে মোট উৎপাদন ক্ষমতার যে অংশ প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার করা যায় তাই হলো উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার।
উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কে Jim Riley (জিম রিলে) বলেছেন,
একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রকৃতপক্ষে মোট উৎপাদন ক্ষমতার শতকরা যে পরিমাণ অর্জন করা যায় তাই হলো উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার।
এ সম্পর্কে আবার Wikipedia (উইকিপিডিয়া) এর বর্ণনা হয়েছে,
কোনো প্রতিষ্ঠান বা জাতী প্রকৃতপক্ষে তার মোট উৎপাদন ক্ষমতার যে পরিমাণ ব্যবহার করে তাকে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার বলে।
উপরোক্ত আলোচনা হতে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার সম্পর্কে যে বিষয়গুলো পাওয়া যায়, তাহলো-
1. উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার হলো মোট উৎপাদন ক্ষমতার একটি অংশ;
ii. এটি প্রকৃত উৎপাদনের মাত্রাকে নির্দেশ করে;
iii. নির্দিষ্ট সময়ের সাথে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহারের বিষয়টি জড়িত;
iv. প্রয়োজনে এ ক্ষমতার হার বৃদ্ধি করা যায়;
পরিশেষে বলা যায়, মোট উৎপাদন ক্ষমতার যে অংশ প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার করা হয়, তাই হলো উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার।
উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের উপায় | Way of Useing Production Capacity
উৎপাদন ক্ষমতা হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তি বা বিভাগ বা মেশিনের সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ। কোনো প্রতিষ্ঠান উন্নত মানের যন্ত্রপাতি ক্রয় করে, দক্ষ কর্মী নিয়োগ করে, কর্মীদের প্রেষিত করে এবং উপযুক্ত কারখানা বিন্যাস করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে উৎপাদন ক্ষমতা শুধু বৃদ্ধি করলেই চলবে না, উক্ত ক্ষমতার ব্যবহারও করতে হবে। উৎপাদন ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করা না গেলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়ে মুনাফার পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে পারে। উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার হলো মোট উৎপাদন ক্ষমতার সেই অংশ, যা প্রকৃত পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান তার মোট উৎপাদন ক্ষমতার যে অংশ প্রকৃত পক্ষে ব্যবহারে সক্ষম, সেই অংশকে উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার বলে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহারের বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। যে সকল উপায়ে কোনো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার করতে পারে, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. বিক্রয় বৃদ্ধি (Enhancing sales): উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের মূল লক্ষ্য হলো- বাজার চাহিদা মোতাবেক পণ্য উৎপাদন করা এবং যথাসময়ে তা বাজারে সরবরাহ দেওয়া। তাই বাজারে যদি পণ্যের চাহিদা না থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বিক্রয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়, এরূপ অবস্থায় উৎপাদনও হ্রাস করতে হয়।
ফলে উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত থাকে। এই অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করার জন্য তাই বিক্রয় বৃদ্ধি করা অপরিহার্য হয়ে উঠে। আর এটিই উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের কাঙ্ক্ষিত ও স্বাভাবিক উপায়।
২. উপ-ঠিকাদারি (Sub-contracting): অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে কোনো কার্য সম্পাদন করা হলে তাকে উপ-ঠিকাদারি বলে। অর্থাৎ উপ-ঠিকাদারি হলো অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে একই কাজ সম্পাদন করা।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ছাপাখানা তাদের ছাপার অর্ডার এত বেশি পেয়েছে যে, তাদের। উৎপাদন ক্ষমতা পূর্ণ ব্যবহার করলেও সময়মত তা অর্ডারদাতাদের সরবরাহ করতে পারবে না।
এরূপ অবস্থায় উক্ত ছাপাখানা কর্তৃক প্রাপ্ত অর্ডারের কিছু অংশ অন্য কোনো ছাপাখানায় পুনঃঅর্ডার দিলে দ্বিতীয় ছাপাখানার ক্ষেত্রে ঐ কাজটি হবে উপ-ঠিকাদারি কাজ। এরূপ উপ-ঠিকাদারি কাজের ফলে দ্বিতীয় ছাপাখানার উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার হবে। তাই যে সকল প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত থাকে, তারা উপ-ঠিকাদারি কাজ গ্রহণের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে।
৩. পণ্য বৈচিত্রকরণ (Diversification of product): পণ্য উৎপাদন সারিতে যখন একাধিক পণ্যের সমাবেশ ঘটানো হয় অথবা সেবাদানের ক্ষেত্রে একাধিক সেবার সমাবেশ ঘটানো হয় তখন তাকে পণ্য বৈচিত্রকরণ বলে। এরূপ পণ্য বৈচিত্রকরণের মাধ্যমেও উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা যেতে পারে।
বৈচিত্রকরণ হলো বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা বা বিভিন্ন ধরনের সেবা দান করা। যেমন: কোনো উৎপাদক তার কারখানায় শুধুমাত্র কলম তৈরি করতো। এতে কারখানার উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার হতো না। এরূপ অবস্থায় সে তার কারখানায় কলমের পাশাপাশি পেন্সিল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎপাদন ক্ষমতার কাম্য ব্যবহার করতে পারে।
৪. অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা ইজারা প্রদান (To give lease of unused production capacity): ইজারা হলো একটি চুক্তি ভিত্তিক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সম্পত্তির মালিক নির্দিষ্ট সময় পর পর অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য অন্য পক্ষকে তার সম্পত্তি ব্যবহার করা অধিকার প্রদান করে।
কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে বা কারখানায় যদি উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার না হয়; তবে অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতা অন্যের নিকট ইজারা দিয়েও উক্ত অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমন: কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০টি কক্ষ রয়েছে, কিন্তু তাদের প্রয়োজন হয় মাত্র ১৫টি কক্ষের। এরূপ অবস্থায় অব্যবহৃত ৫টি কক্ষ অন্যকোনো প্রতিষ্ঠানের নিকট ইজারা দিয়ে উৎপাদন ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে।
৫. উৎপাদন ক্ষমতা সংকোচন (Reduction of production capacity): বর্তমানে বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে হ্রাস করা হলে তাকে উৎপাদন ক্ষমতা সংকোচন বলে। অনেক সময় উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করা না গেলে উক্ত অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতাবিশিষ্ট মেশিন বা যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়ে বা অতিরিক্ত কর্মী আইনানুযায়ী ছাঁটাই করে উৎপাদন ক্ষমতা সংকোচন করা যেতে পারে। এতে অবশিষ্ট উৎপাদন ক্ষমতার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।