বিন্যাসের উদ্দেশ্য | Objective of Layout
যে কোনো বিন্যাসের মূল উদ্দেশ্য হলো সুন্দর ও সাবলীলভাবে যথাসময়ে কার্য সম্পাদন করা, যাতে পরিকল্পনা মোতাবেক স্বল্প সময়ে কাঙ্ক্ষিত কাজ বা সেবাটি সম্পাদন করা যায়। এ উদ্দেশ্য অর্জনের পাশাপাশি বিন্যাসের আরো অনেক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উদ্দেশ্য আছে। বিন্যাসের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. স্থানের যথাযথ ব্যবহার (Proper use of space): যে কোনো বিন্যাসের উদ্দেশ্য হলো প্রাপ্ত স্থানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে কারখানা অথবা অফিসের জন্য বরাদ্দ স্থানকে বিবেচনায় এনে বিন্যাস কার্যক্রম আরম্ভ করা উচিত।
কারণ বিন্যাসের দুর্বলতার কারণে যদি স্থানের অপব্যবহার হয় তাহলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। যা প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।
২. চলাচলের সুবিধা (Advantage of movement): কারখানায় উৎপাদনের জন্য কাঁচামালসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপায়-উপকরণের প্রয়োজন হয়। এ সকল উপায়-উপাদান যাতে অতিসহজেই উৎপাদনের স্থলে আনা- নেওয়া করা যায়, সে লক্ষ্যেই বিন্যাস করা হয়।
আবার কোনো অফিসে উৎপাদনের উপকরণ প্রয়োজন না হলেও নানান ধরনের লোক সেখানে আসা-যাওয়া করে, ফলে এসকল লোকজন যাতে সহজেই চলাচল করতে পারে, সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিন্যাস করা উচিত।
৩. উপযুক্ত কার্য পরিবেশ সৃষ্টি (To create proper working environment): উপযুক্ত কার্য পরিবেশ বলতে বুঝায়- পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত, কোলাহমুক্ত, সহজ চলাচলযোগ্য, দুর্গন্ধহীন কার্য পরিবেশ ইত্যাদি।
বিন্যাসের উদ্দেশ্য হচ্ছে এরূপ উপযুক্ত কার্য পরিবেশ সৃষ্টি করা। এতে কর্মীরা কার্যক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে, যা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৪. শ্রমিক নিরাপত্তা বিধান (To ensure labor security): বর্তমানে সারা বিশ্বে কারখানায় কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। তাই বিন্যাস পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বপ্রথম বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা বলতে কর্মক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রের বাইরে কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বুঝানো হয়। কর্মীদের এরূপ নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে সঠিক উপায়ে বিন্যাস করা প্রয়োজন।
৫. উপকরণের যথাযথ ব্যবহার (Proper use of elements): উৎপাদনে নিয়োজিত উপায়-উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের উপর প্রাতিষ্ঠানিক উদ্দেশ্যার্জন বহুলাংশে নির্ভর করে।
আবার উপকরণের উপযুক্ত ব্যবহারের বিষয়টি নির্ভর করে উত্তম বিন্যাস পরিকল্পনার উপর। তাই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত উপকরণগুলো যাতে যথাযথ ব্যবহার করা যায়; তার জন্যও বিন্যাস করা হয়।
৬. পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি (To increase mutual relationship): বিন্যাসের আরেকটি উদ্দেশ্য হল প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি বা বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য এমনভাবে বিন্যাস করা উচিত যাতে কর্মরত প্রতিটি ব্যক্তি বা বিভাগের মধ্যে একদিকে যেমন আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় থাকে অন্যদিকে তেমনি তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কেরও সৃষ্টি হয়। এ কারণেই দেখা যায়, প্রতিটি কর্মীর আলাদা-আলাদা ডেস্ক থাকলেও তাদের জন্য কমনরুমের ব্যবস্থা করা হয়।
৭. সহজ তত্ত্বাবধান (Easy co-ordination): প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল বিভাগ ও উক্ত বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিবর্গকে যাতে সহজেই তত্ত্বাবধান করা যায়, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই বিন্যাস করা হয়।
এ কারণে বর্তমানে আধুনিক অফিসগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রবণতা দেখা যায়। যদিও অনেকে এটাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন। বলে মনে করেন, তবুও এরূপ বিন্যাসের সাহায্যে কর্মীদের তত্ত্বাবধান করা হয়।
৮. গতিশীলতা আনায়ন (To bring dynamism): বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতিষ্ঠানের গতিশীলতা আনায়নের জন্যও বিন্যাস করা যেতে পারে।
এ কারণে এমনভাবে কারখানা বা অফিসকে বিন্যাস করা হয়, যাতে নিয়োজিত সকল উপায়-উপাদানের গতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়। প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরনের গতিশীলতা আনায়নে এর বিন্যাস ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
৯. ফলপ্রসূ কার্য প্রবাহ (Effective work flows): প্রতিষ্ঠানে ফলপ্রসূ কার্য প্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেও বিন্যাস কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। উপযুক্ত বিন্যাস ব্যবস্থা চালু করতে পারলে প্রতিষ্ঠানের সকল কাজ ধারাবাহিকভাবে বিনা বাধায় একের পর এক সম্পাদিত হয়, ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্ষেত্রে গতিশীলতা ফিরে আসে। এ কারণেই ফলপ্রসূ কার্য প্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সকল উপকরণের যথাপোযুক্ত বিন্যাস করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি উত্তম বিন্যাস ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকে তাহলে তার দ্বারা উপরোক্ত উদ্দেশ্যগুলো অর্জিত হয়। তবে বিন্যাসের উদ্দেশ্য অর্জনের পূর্ব শর্ত হলো বিন্যাসটি অবশ্যই আদর্শ হতে হবে।