ব্যবসায় অবস্থানের সমস্যা | Problems of Business Location

সঠিক স্থানে ব্যবসায়ের অবস্থান নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ সঠিক স্থানে। ব্যবসায় স্থাপিত হলে সকল দিক বিবেচনায় ব্যবসায় পরিচালনা করা সহজ হয়, সেই সাথে সাথে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনও ত্বরান্বিত হয়।

তবে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করে ব্যবসায়ের উত্তম অবস্থান নির্বাচন করা হয় তা সকল সময় একত্রে একই স্থানে পাওয়া যায় না। আর এগুলোই ব্যবসায় অবস্থানের সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। ব্যবসায় অবস্থানের এ সকল সমস্যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. অনুন্নত পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা (Undeveloped transportation and communication system): ব্যবসায় অবস্থান নির্বাচনে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বিবেচনা করা হয়, তাহলো উন্নত পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা। একারণে ব্যবসায়ের সহায়ক নানান ধরনের উপাদান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র অনুন্নত পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে বিশেষ কোনো অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠে না। যেমন- পাহাড়ী অঞ্চল।

২. অপর্যাপ্ত কাঁচামাল (Insufficient raw materials): পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল না থাকলে সে অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে না। তাই অপর্যাপ্ত কাঁচামাল ব্যবসায় অবস্থানের একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। 

কাঁচামালের অভাবেই ঢাকা ও তার আশে-পাশে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা তেমন গড়ে উঠেনি। এমনটি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো- অপর্যাপ্ত কাঁচামাল, যা শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।

৩. শ্রমিক প্রাপ্তির সমস্যা (Problem of availability of labor): ব্যবসায় স্থাপনের ক্ষেত্রে শ্রমিকের পর্যাপ্ততাকেও বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। তাই যে স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক-কর্মী পাওয়া যায় না সে স্থানকে ব্যবসায়ের উত্তম অবস্থান বলে বিবেচনা করা হয় না।

শ্রম শক্তির অভাবেই উন্নত বিশ্বের উদ্যোক্তারা নিজ দেশে ব্যবসায় স্থাপনের পরিবর্তে শ্রমশক্তি বহুল জনসংখ্যা সমৃদ্ধ দেশগুলোতে ব্যবসায় স্থাপনে অধিক আগ্রহ দেখায়।

৪. বাজারের নৈকট্যহীনতা (Distance from market): রাজারের সান্নিধ্য ব্যবসায় অবস্থানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ব্যবসায়ের অবস্থান যদি বাজার হতে খুব দূরে হয়; তাহলে তা ব্যবসায় অবস্থানের সমস্যা বলে বিবেচিত হয়।

কারণ এক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্য বাজারে আনা-নেওয়া করার জন্য অধিক পরিমাণে অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। যা পণ্যের মোট ব্যয়কে বৃদ্ধি করে।

৫. সম্প্রসারণে বাধা (Restriction to expansion): প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়টির ভবিষ্যত সম্প্রসারণের সুযোগ থাকবে কিনা সে বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবসায়ের উত্তম অবস্থান নির্বাচন করা হয়।

যদি ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের সুযোগ না থাকে তাহলে সেটি অবস্থান নির্বাচনের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ সমস্যার কারণে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শহর থেকে একটু দূরে স্থাপন করা হয়।

৬. প্রতিকূল পরিবেশ (Negative environment): ব্যবসায় অবস্থানের উপর প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করে এমন পরিবেশ ব্যবসায় অবস্থানের সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। যেমন- উপকূলীয় অঞ্চলে ঘন ঘন ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বৈরি আবহাওয়া ইত্যাদি কারণে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। আবার একই কারণে মরু অঞ্চলেও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে না।

৭. অপর্যাপ্ত শক্তি সম্পদ (Insufficient power resources): যে কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হলো পর্যাপ্ত শক্তি সম্পদের উপস্থিতি। তাই যে স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি সম্পদ পাওয়া যায় না সে অঞ্চলে বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠে না।

মূলত এ কারণেই বাংলাদেশে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তুলনামূলকভাবে খুবই স্বল্প পরিমাণে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে।

৮. শ্রমিক অসন্তোষ (Labor unrest): দেশের কিছু কিছু অঞ্চল থাকে যেখানে সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সে সকল অঞ্চলে ব্যবসায় স্থাপন করা সুবিধাজনক নাও হতে পারে।

যেমন- বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাভার ও গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে প্রায়ই শ্রমিক অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায়।

৯. সরকারি বিধি-নিষেধ (Government restriction): ব্যবসায় স্থাপন বিশেষ করে শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু অঞ্চলের উপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকে। কোনো অঞ্চলের উপর সরকারের এরূপ নিষেধাজ্ঞা থাকলে সকল সুবিধা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও উক্ত অঞ্চলে ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্থাপন করা যায় না। যেমন- বড় বড় শহরের অভ্যন্তরে শিল্প প্রতিষ্ঠার উপর নিষেধাজ্ঞা।

১০. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা (Political instabililty): কোনো বিশেষ অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। তাই এটিও ব্যবসায় অবস্থানের একটি অন্যতম বাধা হিসেবে গণ্য হয়।

যেমন- বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলে এ সমস্যাটি বিদ্যমান। তবে বর্তমান সরকার এটি নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায় অবস্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়গুলো যদি ব্যবসায়ের অনুকূলে থাকে তাহলে তা ব্যবসায়িক সফলতা অর্জনে সুবিধা বয়ে আনে, অন্যদিকে এ বিষয়গুলো ব্যবসায়ের প্রতিকূলে থাকলে। ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এগুলোকে ব্যবসায় অবস্থানের সমস্যা বলে বিবেচনা করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url