খারাপ বিন্যাসের লক্ষণসমূহ | Symptoms of a Bad Layout
খারাপ বিন্যাস বলতে বিন্যাসের এমন একটি অবস্থাকে বুঝায়, যেখানে বিন্যাসের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান হোক অথবা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হোক, প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিন্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম।
তবে প্রতিটি বিন্যাস যে উত্তম বলে বিবেচিত হবে- তা নয়। কার্যক্ষেত্রে কোনো কোনো বিন্যাস খারাপ বলে বিবেচিত হতে পারে।
খারাপ বিন্যাসের মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যার সাহায্যে বিন্যাসটি সম্পর্কে একটি ঋণাত্মক ধারণা আসে। এ সকল বৈশিষ্ট্যকেই খারাপ বিন্যাসের লক্ষণ বলা হয়। খারাপ বিন্যাসের লক্ষণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. স্থানের অপব্যবহার (Misuse of space): বিন্যাসটি যদি প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দকৃত স্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে না পারে তবে সেই বিন্যাস খারাপ বিন্যাস হিসেবে গণ্য হবে। তাই বিন্যাসের ক্ষেত্রে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে স্থানের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
২. চলাচলে অসুবিধা (Problem of movement): অবাধ চলাচলের সুবিধা যেমন উত্তম বিন্যাসের পরিচায়ক, তেমনি যে বিন্যাস ব্যবস্থায় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণসহ কর্মীদের চলাচলে বাঁধার সৃষ্টি করে সেই বিন্যাস খারাপ বলে বিবেচিত হয়। তাই বলা যায়, চলাচলের অসুবিধা খারাপ বিন্যাসের লক্ষণ বলে বিবেচিত হয়।
৩. দ্রব্য বা কাঁচামালের অতিরিক্ত চাপ (Excess presure of raw materials): উত্তম বিন্যাস ব্যবস্থা দ্রব্য বা কাঁচামালের ধারাবাহিক আগমন ও প্রস্থান নিশ্চিত করে। তাই বিন্যাসের কারণে যদি উৎপাদিত দ্রব্য বা ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রবাহ বন্ধ হয়ে স্তুপিকৃত হয়, তাহলে বুঝতে হবে বিন্যাস ব্যবস্থাটি কোনো অবস্থাতেই ভাল। না।
৪. দীর্ঘ পরিবহন রেখা (Long transport line): উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিন্যাস যদি কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি করে, তবে সেই বিন্যাস কখনই ভাল বিন্যাস হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ কাঁচামালকে দীর্ঘ পরিবহনের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির কাছে নিয়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
৫. প্রতিকূল কার্য পরিবেশ (Disfavorable working environment): উত্তম বিন্যাসের ফলে কার্যক্ষেত্রে অনুকূল কার্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আর অনুকূল কার্য পরিবেশ কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের বিন্যাস ব্যবস্থা যদি ভাল না হয়, তাহলে সামগ্রিক কার্য পরিবেশ প্রতিকূলে যায়। তাই বলা যায়, প্রতিকূল কার্য পরিবেশ সৃষ্টিকারী বিন্যাস, খারাপ বিন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়।
৬. নিরাপত্তাহীনতা (Hamparing safety): উত্তম বিন্যাস একদিকে যেমন কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান করে, অন্যদিকে তেমনি খারাপ বিন্যাস ব্যবস্থা কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। অতএব বলা যায়, যে বিন্যাস ব্যবস্থায় কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেই বিন্যাসকে খারাপ বিন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়।
৭. দীর্ঘ উৎপাদন চক্র (Long production cycle): উত্তম বিন্যাস উৎপাদন চক্রকে হ্রাস করে। অন্যদিকে খারাপ বা দুর্বল বিন্যাস ব্যবস্থা উৎপাদন চক্রকে দীর্ঘায়িত করে। তাই দেখা যায়, বিন্যাসের কারণে যদি দীর্ঘ উৎপাদন চক্রের সৃষ্টি হয়, তাহলে সেই বিন্যাসটি দুর্বল হিসেবে পরিগণিত হবে।
৮. অপচয় বৃদ্ধি (Increasing wastage): কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনে যদি অপচয় বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে ঐ প্রতিষ্ঠানের কারখানা বিন্যাসটি হয়ত দুর্বল। কারণ যথাযথ কারখানা বিন্যাস প্রতিষ্ঠানের অপচয় হ্রাস করে। আবার কারখানা বিন্যাসটি যদি যথাযথ না হয় তবে অপচয় হ্রাসের পরিবর্তে তা আরো বৃদ্ধি পাবে।
৯. যোগাযোগে সমস্যা (Problem in communication): খারাপ বিন্যাস কর্মীদের যোগাযোগে সমস্যার সৃষ্টি করে। দুর্বল বিন্যাসের কারণে কর্মীদের অবস্থান যথাযথ স্থানে হয় না। ফলে কর্মক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যোগাযোগ করার প্রয়োজন পড়লে তা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়
১০. অপ্রয়োজনীয় চলাচল (Unnecessary movement): উত্তম বিন্যাস কর্মীদের চলাচলকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে। অপর দিকে বিন্যাস পরিকল্পনা যদি খারাপ হয় তাহলে কর্মীদের চলাচলের উপর তা ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যদি অযথা চলাচল করে তাহলে বুঝতে হবে বিন্যাসটি সঠিক হয়নি।
অতএব বলা যায়, কোনো বিন্যাসের ক্ষেত্রে যদি উপরোক্ত সমস্যা বা বাধাসমূহ লক্ষ্য করা যায় তাহলে সেই বিন্যাসকে খারাপ বিন্যাস বলা হবে এবং সেই বিন্যাস হতে ভাল কিছু পাওয়ার আশা করা ঠিক হবে না। তাই এরূপ অবস্থায় এ বিন্যাসকে পরিবর্তন করে উত্তম বিন্যাসের ব্যবস্থা করা উচিত।