ব্যবসায় অবস্থানের প্রকারভেদ | Types of Business Location
ব্যবসায়ের অবস্থান মূলত ব্যবসায়ের প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কোনো বিশেষ ধরনের ব্যবসায় তথা শিল্প ও বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ফলে ঐ অঞ্চল বা এলাকা নির্দিষ্ট স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। এরূপ বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি বিবেচনা করে ব্যবসায়ের অবস্থানকে যে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
শহুরে অবস্থান | Urban location
শহরকে কেন্দ্র করে কোনো শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনকে ব্যবসায়ের শহুরে অবস্থান বলে। অধিক জনসমাগম, সহজ যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিভিন্ন অফিস- আদালত ও প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি, শক্তি সম্পদ ও উপকরণাদির সহজ প্রাপ্যতা, সহায়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- ব্যাংক, বিমা, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির উপস্থিতিসহ নানা কারণে শহুরে অবস্থান ব্যবসায়ের জন্য প্রাচীনকাল হতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এ ছাড়াও এমন কিছু ব্যবসায় রয়েছে যা শুধুমাত্র শহর এলাকাতেই প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা হয়; যেমন- ছাপাখানা, বিভাগীয় বিপণি, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়, পাইকারি ব্যবসায়, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, বড় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্ন্যাক্স শপ ইত্যাদি।
গ্রাম্য অবস্থান | Rural location
শহরকে ভিত্তি না ধরে শহর থেকে একটু দূরে সুবিধাজনক স্থানে শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনকে ব্যবসায়ের গ্রাম্য অবস্থান বলে। প্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন হস্তজাত ও কুটির শিল্পের জন্য গ্রাম্য অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে।
বর্তমানকালে গ্রামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে অনেক শিল্প-কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গ্রাম্য অবস্থানে গড়ে উঠতে দেখা যায়।
কম মূল্যে জমি সংগ্রহের সুযোগ, স্থানীয় কাঁচামাল সংগ্রহের সুবিধা, সহজ মূল্যে শ্রমিক প্রাপ্তি, প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে গ্রামীণ অবস্থান ব্যবসায় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরূপ গ্রাম্য অবস্থান শহরকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠে।
শিল্প এলাকায় অবস্থান | Location in industrial estate
নির্দিষ্ট পরিকল্পনাধীনে বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান একত্রে এক স্থানে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে যে এলাকা প্রস্তুত করে তোলা হয় তাকে শিল্প এলাকা বলে। শিল্প এলাকা স্থাপনের এরূপ পরিকল্পনা মূলত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুবিধাদির ব্যবস্থাও সরকার করে থাকে।
আমাদের দেশে বিসিক শিল্প এলাকা, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রভৃতি এরূপ এলাকার উদাহরণ। সাধারণত শহরের সন্নিকটে, সহজ যোগাযোগ স্কুলে এরূপ শিল্প এলাকা গড়ে তোলা হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায়ের প্রয়োজনে উদ্যোক্তা যে কোনো স্থানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারে। তবে যে স্থানেই ব্যবসায়টি স্থাপন করা হোক না কেন, ব্যবসায় অবস্থানকে উপরোক্ত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।