মোটরগাড়ি বিমা | Automobile or Motor Insurance

বর্তমান শতকে মোটরগাড়ির প্রবর্তন মানুষের জন্য অনেক সুখ সংবাদ বয়ে আনলেও এটা কেবল অবিমিশ্র আনন্দের উৎস নয়। কারণ এ যন্ত্রদানবের তলায় পিষ্ট হয়ে অনেক মূল্যবান জীবন ও সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। মোটরগাড়ির দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যাপক ব্যবহার নিত্যনতুন মোটর ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। তাই মোটরগাড়ি থেকে সৃষ্ট এ সমস্ত ঝুঁকি প্রতিবিধান করার জন্য মোটরগাড়ি বিমার প্রবর্তন ঘটেছে।

একজন মোটরগাড়ির মালিক তার গাড়ি সংশ্লিষ্ট নানান ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়ে থাকে। এরূপ ঝুঁকিকে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা যায়; যেমন।

(১) জনদায়িত্ব ঝুঁকি:

(২) সম্পত্তি বিনষ্ট ঝুঁকি;

(৩) সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা ঝুঁকি;

(৪) অগ্নি ঝুঁকি ও

(৫) চৌর্য ঝুঁকি।

প্রথমোক্ত ঝুঁকিটি বিমাগ্রহীতার মোটরগাড়ির দ্বারা জনসাধারণ বা তৃতীয় পক্ষের জীবন ও সম্পত্তিহানি বা জখমজনিত দায়ের ঝুঁকিকে বুঝায়। প্রথমোক্ত ব্যতীত অন্যান্য ঝুঁকিগুলো মোটরগাড়ির নিজস্ব ঝুঁকি।

মোটরগাড়ি বিমা কি?


সুতরাং মোটরগাড়ি ব্যবহার করতে গিয়ে জীবন ও সম্পত্তির হানি হওয়ার যে আশংকা থাকে তা থেকে রক্ষার জন্য মোটরগাড়ির মালিক যে বিমা করে তাকে মোটরগাড়ি বিমা বলে।

এ ধরনের বিমার উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে মোটরগাড়ি খোয়ানোর বা কোনো দুর্ঘটনার কারণে এর সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতির ঝুঁকি বা এর দ্বারা সৃষ্ট সমস্ত দায়ের ঝুঁকি বিমা কোম্পানির ওপর অর্পণ করা।

মোটরগাড়ি বিমার শ্রেণিবিভাগ | Classification of Motor Insurance


মোটরগাড়ির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এ সংক্রান্ত ঝুঁকির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ঝুঁকি নিরসনের জন্য বিভিন্ন ধরনের মোটরগাড়ি বিমা বা বিমাপত্রের প্রচলন ঘটেছে। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের মোটরগাড়ি বিমা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. জনদায়িত্ব বিমা: যদি কোনো মোটরগাড়ি চালকের দোষে অন্যায়ভাবে কোনো মানুষকে শারীরিকভাবে আঘাত করে বা আহত করে সেক্ষেত্রে মোটরগাড়ির মালিক এরূপ ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে। এরূপ ক্ষতিপূরণের দায় বিমা কোম্পানির ওপর চাপানোর উদ্দেশ্যে মোটরগাড়ির মালিক জনদায়িত্ব বিমা গ্রহণ করে থাকে। ফলে এরূপ বিপদের ঝুঁকি নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বিমা কোম্পানির ওপর অর্পিত হয়।

২. সম্পত্তি বিনষ্ট বিমা: কখনো কখনো চালকের দোষে মোটরগাড়ি অন্য কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে এবং সেজন্য মোটরগাড়ির মালিক বা চালক দায়ী হয়। সম্পত্তি বিনষ্ট বিমাপত্রের মাধ্যমে এরূপ ক্ষতির ভার বিমা কোম্পানির ওপর অর্পণ করা যায়।

৩. অগ্নি বিমাপত্র: মোটরগাড়িতে অগ্নিকাণ্ডজনিত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে আগাম অগ্নিবিমাপত্র গ্রহণ করে এর ক্ষতির দায়ভার বিমা কোম্পানির ওপর অর্পণ করা যায়। এ ধরনের বিমাপত্র মূল্যায়িত ও অমূল্যায়িত দু'রকমের হতে পারে।

৪. চৌর্য বিমাপত্র: এ ধরনের বিমাপত্র মালিককে গাড়ি চুরি হলে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে। এজন্য পৃথক বিমাপত্র না নিয়ে এতদসংশ্লিষ্ট অন্য বিমাপত্রের মধ্যেও এটাকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বিভিন্ন অঞ্চল ও গাড়ির মূল্য অনুসারে এক্ষেত্রে প্রিমিয়ামের তারতম্য হয়ে থাকে।

৫. সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনা বিমাপত্র: এ ধরনের বিমাপত্রের উদ্দেশ্য হলো বিমাগ্রহীতাকে মোটরগাড়ির সংঘর্ষজনিত কোনো ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। স্থির বা চলন্ত কোনো বস্তুর সাথে ধাক্কা বা সংঘর্ষ হওয়ার ফলে যে ক্ষতির সম্মুখীন হন তার সমস্যা সমাধানের জন্য এ বিমার উদ্ভাবন হয়েছে।
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url