কোন ব্যাংকগুলো প্রবাসী লোন দেয়
বাংলাদেশ একটি হতদরিদ্র এবং বেকারত্বের শিকার হওয়া একটি দেশ। কারণ এদেশের মানুষ শিক্ষিত হতে পারে কিন্তু কর্মসংস্থানের জায়গা খুঁজে পায় না। যার কারণে অসংখ্য তরুণ তরুণীরা শিক্ষিত হওয়ার পরেও বেকার ভাবে বাসায় বসে আছে। কিন্তু অনেক যুবক-যুবতীর ইচ্ছা যে তারা বিদেশে গিয়ে চাকরি করে নিজের বেকারত্বের অভিশাপ ঘছাবে।
কিন্তু বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনা। বাংলাদেশের এমন কিছু ব্যাংক আছে যারা প্রবাসীদের সহায়তা করে থাকে প্রবাসী লোন দেওয়ার মাধ্যমে। আর সেই লোনের মাধ্যমে যে কোন মানুষ বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রবাসী লোন নেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক রয়েছে যারা প্রবাসী লোন দিয়ে থাকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সরকারি ব্যাংক। এই ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী শ্রমিক মিলন প্রকল্প চালু করেছে অনেক আগেই। এই ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আছে এমন যেকোনো ব্যাক্তি বিদেশে যাওয়ার জন্য লোন নিতে পারে।
তবে সোনালী ব্যাংকের লোন এর পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫-৮ লাখ টাকা যার সময়সীমা ৫-৭ বছর এবং লোনের সুদের হার ১২-১৫ শতাংশ হয়ে থাকে।
সোনালী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নেয়ার জন্য আপনাকে পাসপোর্ট, ভিসা, মেডিকেল রিপোর্ট, এয়ার টিকিট এবং জামিনদারের কাগজপত্র জমা দিতে হবে তবে সোনালী ব্যাংক আপনাকে প্রবাসী লোন দেবে।
ইসলামী ব্যাংক
ইসলামী ব্যাংক মূলত ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক একটি ব্যাংক যা প্রবাসীদের জন্য শ্রমিক লোন প্রকল্প চালু রেখেছে অনেক আগে থেকেই। ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রবাসে যাওয়ার জন্য লোন পেতে হলে আপনাকে পাসপোর্ট, ভিসা, এয়ার টিকিট, মেডিকেল রিপোর্ট এবং জামিনদারের কাগজপত্র জমা দিতে হবে তবে আপনি প্রবাসী লোন পাবেন।
ইসলামী ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৩-৫ লক্ষ টাকা প্রবাসী লোন দিয়ে থাকে যার সুদের হার ১০-১২ শতাংশ এবং সময়সীমা ৩ বছর। তবে ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন পেতে হলে বয়স ২০-৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকা বাধ্যতামূলক।
ব্র্যাক ব্যাংক
ব্র্যাক ব্যাংক মূলত একটি বেসরকারি ব্যাংক যা বাংলাদেশের গরিব এবং অসহায় মানুষের জন্য সহায়তা প্রদান করে থাকে সবসময়। তবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকা যেকোনো ব্যক্তি ব্র্যাক ব্যাংক হতে দিতে পারবে।
ব্র্যাক ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন পাওয়ার জন্য আপনাকে পাসপোর্ট, ভিসা, এয়ার টিকিট, মেডিকেল রিপোর্ট এবং জামিনদারের কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
ব্র্যাক ব্যাংক মূলত প্রবাসী লোন দেয় সর্বোচ্চ ৫-৭ লক্ষ টাকা যার সময়সীমা ৩-৫ বছর এবং সুদের হার ১১-১৩ শতাংশ হয়ে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত এটি শুধুমাত্র প্রবাসীদের লোন দিয়ে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো সুদের হার সবচেয়ে কম যা প্রবাসীদের জন্য খুবই লাভজনক হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য লোন নিতে হলে আপনাকে পাসপোর্ট, ভিসা, মেডিকেল রিপোর্ট, এয়ার টিকিট, এবং জামিনদারের কাগজপত্র জমা দিতে হবে। তবেই আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩-৫ লাখ টাকা লোন দিয়ে থাকে যার সময়সীমা ৩-৫ বছর হয় এবং এ ব্যাংকের লোনের সুদের হার ৯-১২ শতাংশ হয়।
প্রবাসী লোন পাওয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগে
- ভিসার ফটোকপি।
- তিন কপি পাসপোর্টের সাইজের সত্যায়িত ছবি।
- পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী নাগরিক সনদ পত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি।
- পাসপোর্টের ফটোকপি।
স্থানীয় পরিচিত এক ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত জামিননামা।
এখানে এই পরিচিত এক ব্যাক্তির জামিননামা সম্পত্তি বন্ধকের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে। আবেদনকারীর মতো জামিনদারের ছবি, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ সনদ পত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি (যদি থাকে) জমা দিতে হবে।
প্রবাসী লোন কত টাকা পাবেন?
বিদেশ যাওয়ার জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা প্রবাসী লোন দেয়। সাধারণত এই লোনের মেয়াদ থাকে ২ বছর বা ২৪ মাস। এর সাথে গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে আরো ২ মাস। সব মিলিয়ে মোট ২৬ মাসের জন্য সরকারি ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদে প্রবাসী কল্যাণ লোন দেয়।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা লোন দেয়। লোন পরিশোধের মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর মেয়াদি। এই ব্যাংকগুলো সুদ নেয় ১২ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত। আপনি বিদেশ পৌঁছানোর ৩ মাস পর থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো কিস্তি নেওয়া শুরু করে। সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকগুলো লোনের শর্ত ও অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম।
সৌদি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরিশাস, কাতার, ওমান, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি ইত্যাদি দেশের ক্ষেত্রে লোন পরিশোধের মেয়াদ ২ বছর। শুধুমাত্র সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে লোন পরিশোধের মেয়াদ ১ বছর।
প্রবাসী লোন পরিশোধের নিয়ম এবং মেয়াদ
সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোন পরিশোধের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ বছর। বিদেশ যাওয়ার পরে ২ বছরে ২৪ কিস্তি এবং ৩ বছরে ৩৬ কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। প্রতি মাসে একটি করে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।
পূবালী ব্যাংক ২.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দিলেও পরিশোধের মেয়াদ ২ বছর। অন্যদিকে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলো ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দিলেও ১২, ২৪, ৩৬ মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের লোন পরিশোধের মেয়াদ মাত্র দেড় বছর। বিদেশ যাওয়ার ৩ মাস পর থেকে এই লোন পরিশোধের কিস্তিু শুরু হয়।