মজুরি ও আয় | Wage and Income

মজুরি: শ্রমিক তার শারীরিক ও মানসিক প্রচেষ্টার বিনিময়ে যা পায় তাকে মজুরি বলে। মজুরি শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন ফরাসি শব্দ Wagies or gagier থেকে।

যার আভিধানিক অর্থ প্রতিজ্ঞা বা বন্ধক। ধারণাটি শুধু শ্রম আয়ের সাথে সম্পর্কিত। মজুরি দুই প্রকার। যথা-

১. আর্থিক মজুরি ও

২. প্রকৃত মজুরি।

আয়: আয় হচ্ছে তৃপ্তির প্রবাহ। অর্থনৈতিক দ্রব্য বা সেবামূলক কাজ হতে যে তৃপ্তির প্রবাহ সৃষ্টি হয় তার আর্থিক মূল্যকে আয় বলে। অন্যভাবে বলা যায়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিনিময়ে সামগ্রিকভাবে যে অর্থ পাওয়া যায় তাকে আয় বলে।

আয় শব্দটির ইংরেজি শব্দ ‘Income’। যার উৎপত্তি প্রাচীন ইংরেজি শব্দ ‘Incuam’ থেকে ‘Income’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ব্যবসায় বা শ্রম থেকে প্রাপ্ত উপার্জন। আয় দুই প্রকার। যথা-

১. ব্যক্তিগত আয় ও

২. ব্যয়যোগ্য আয়।

আবার সাধারণত আয়কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়; যথা-

১. আর্থিক আয় ও

২. প্রকৃত আয়।

১. আর্থিক আয়: নগদ অর্থ হিসেবে উপার্জিত আয়কে আর্থিক আয় বলা হয়। আর্থিক আয় ছারা ব্যক্তির বা এখা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে প্রকৃত আয় আবশ্যক হয়।

২. প্রকৃত আয়: আর্থিক আয়ের সাথে ব্যক্তি অন্যান্য যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হয়, তার সমষ্টিকে প্রকৃত আয় বদে। প্রকৃত আয় ব্যক্তির বাস্তব অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে পারে।

মজুরির সাথে আয়ের তুলনা | Comparison between Wage and Income


মজুরি এবং আয় পরস্পর সম্পর্কিত ধারণা। মজুরি এবং আয় ধারণা দুটির মধ্যে নিম্নোক্তভাবে তুলনা করা যায়-

১. শ্রমের আর্থিক আয়কে মজুরি বলে। উৎপাদন বা ব্যবসায় পণ্য বা সেবা বিক্রয় থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তাকে আয় বা রাজস্ব বলে।

২. মজুরি হলো চুক্তিভিত্তিক প্রাপ্তি; কিন্তু আয়ের ক্ষেত্রে এরকম চুক্তির কোনো অস্তিত্ব থাকে না।

৩. মজুরির পরিমাণ নির্দিষ্ট; একটি নির্দিষ্ট সময়কালে তা একই থাকে। কিন্তু আয়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়; একটি নির্দিষ্ট সময়কালে তা কম-বেশি হতে পারে।

৪. মজুরি প্রকাশিত থাকে; কিন্তু আয় অপ্রকাশিত থাকে।

৫. অধিক কায়িক বা মানসিক শ্রম দিলেও মজুরির তারতম্য ঘটে না; কিন্তু অধিক কায়িক বা মানসিক শ্রম দিয়ে আয় অনেক বাড়ানো যায়।

৬. মজুরি একটি ক্ষুদ্র ধারণা, কিন্তু আয় একটি বৃহত্তর ধারণা। কারণ আয় মজুরিকে ধারণ করে।

৭. মজুরি একটি বন্ধ (Stock) ধারণা। কিন্তু আয় একটি প্রবাহ (Flow) ও বিস্তৃত ধারণা।

৮. মজুরির সংকেত W (Wage) এবং আয়ের সংকেত বা TR বা R- (Revenue)।

৯. একজন শ্রমিক তার কায়িক ও মানসিক শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জন করে তাকে মজুরি বলে। অন্যদিকে, ব্যবসায় ও বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত আর্থিক সুবিধাই হলো আয়।

১০. মজুরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু আয় প্রাপ্তির পিছনে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি থাকে।

১১. মজুরির উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক অন্যদিকে, আয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াও মানবিক উদ্দেশ্য, সামাজিক উদ্দেশ্য, জাতীয় উদ্দেশ্য ও সাংগঠনিক উদ্দেশ্য জড়িত থাকে।

১২. শ্রম দিতে না পারলে মজুরি পাওয়া যায় না। যেমন- বৃদ্ধ বয়সে মজুরি পাওয়া যায় না। কিন্তু শ্রম না দিতে পারলেও আয় হতে পারে। যেমন- বৃদ্ধ বয়সে অবসর ভাতা বা অতীতে বিনিয়োগ হতে বর্তমানে বৃদ্ধ বয়সে আয় পেতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url